আলিঙ্গন: ভক্তকে বুকে টেনে নিলেন বিরাট। শনিবার ইনদওরে। পিটিআই
বিরাট কোহালির জনপ্রিয়তা যে ভারতের যে কোনও প্রান্তেই কম নয়, তার প্রমাণ পাওয়া গেল ইনদওরের হোলকার স্টেডিয়ামে।
ম্যাচের ৬৭তম ওভারে মহম্মদ শামির বাউন্সারে তাইজুল ইসলাম প্যাভিলয়নে ফেরার সময় এইচ ব্লক প্রান্ত থেকে দৌড়ে মাঠে ঢুকে পড়লেন এক সমর্থক। উত্তরাখণ্ড থেকে আসা সুরজ বিস্ত নামে সেই ভক্ত প্রিয় তারকার পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করতে মাঠের মধ্যে চলে আসেন। পিছনে ছুটছিল একদল নিরাপত্তারক্ষী। কিন্তু ভারত অধিনায়ক ভক্তকে নিরাশ করেননি। নিরাপত্তারক্ষীদের দাঁড়াতে বলে তরুণের পিঠ চাপড়ে দিলেন। খুশি হয়ে নিরাপত্তারক্ষীর দলের সঙ্গে মাঠ ছাড়লেন সেই তরুণ।
কোহালির অপেক্ষায় বসেছিলেন আরও এক সমর্থক। দৌড়নো তো দূরের কথা, হাঁটারও ক্ষমতা নেই তাঁর। ক্যালসিয়ামের অভাব এতটাই প্রকট যে, একটি চকের মতো নরম তাঁর হাড়। ছোটবেলায় স্কুলশিক্ষক বুঝতে না পেরে তাঁর বাঁ-হাত চেপে ধরেছিলেন। মুহূর্তের মধ্যে হাড় দু’টুকরো হয়ে ভেঙে হাত বেঁকে গিয়েছিল। ২৪ বছরের পূজা শর্মার হাতের হাড় এখনও জোড়া লাগেনি। প্রাপ্তবয়স্ক হলেও বাবার কোলই সম্বল পূজার। কোহালিকে দেখার ইচ্ছে থেকে তাঁকে বঞ্চিত হতে দেননি বাবা। তিন দিনই তাঁকে মাঠে নিয়ে এসেছেন প্রিয় তারকাকে দেখানোর উদ্দেশে।
পূজার মতো আরও ১৩ হাজার ক্রিকেট সমর্থককে হতাশ করেনি ভারতীয় দল। বাংলাদেশকে চূর্ণ করে সিরিজ শুরু করেছে তারা। সিরিজের প্রথম ম্যাচে মায়াঙ্ক আগরওয়ালের অবদান অনস্বীকার্য। ডাবল সেঞ্চুরি করে দলকে ইনিংসে জেতার সুযোগ তৈরি করে দিয়েছেন। কিন্তু সব চেয়ে বড় কৃতিত্ব কিন্তু ভারতীয় পেসারদের। যাঁদের নিয়ে কোহালিও গর্বিত।
শনিবার ম্যাচ শেষে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে ভারতীয় অধিনায়ক বলছিলেন, ‘‘একজন অধিনায়কের কাছে এটা স্বপ্নের পেস আক্রমণ। ওরা জীবনের সেরা ছন্দে রয়েছে। ওরা বল করার সময় যে কোনও পিচ দেখলেই মনে হয় পেস সহায়ক। একটি দলের কাছে শক্তিশালী বোলিং আক্রমণ থাকাই সেরা অস্ত্র।’’ যোগ করলেন, ‘‘বুমরা এখন মাঠের বাইরে রয়েছে। ও আসার পরে বিশ্বের যে কোনও দলের পক্ষে এই বোলিং আক্রমণকে সামলানো দুষ্কর হবে।’’
বিরাটের উদ্দেশ্য, আগামী প্রজন্মকেও শক্তাশালী করে তোলার। সেই কাজটি করে তুলতে চান উন্নত পারফরম্যান্স দিয়েই। অধিনায়কের কথায়, ‘‘দল হিসেবে ক্রিকেটের মান উন্নত করতে পারলে, আগামী প্রজন্মও অনুপ্রাণিত হবে। সেই সঙ্গে বাড়বে ভারতীয় ক্রিকেটের মান। রেকর্ড অথবা জয়ের সংখ্যা নিয়ে কখনও ভাবি না।’’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘‘টেস্ট ক্রিকেটে নিজের জায়গা স্থায়ী করার জন্য কতটা কসরত করতে হয় তা আমি জানি। শুরুতে নিজেও বহু ভুল করেছি। তরুণ ক্রিকেটারেরাও আমার মতো একই ভুল করুক, সেটা চাই না। দলও এই লক্ষ্য নিয়েই এগোচ্ছে।’’
শামিদের নিয়ে তিনি যে গর্বিত, তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন ভারত অধিনায়ক। কোহালি বলেছেন, ‘‘এরা যে কোনও স্পেলে উইকেট তুলে নিতে পারে। স্লিপে যারা ফিল্ডিং করে, তারাও জানে, যে কোনও ওভারের যে কোনও বলে চলে আসতে পারে কাঙ্ক্ষিত উইকেট। যে কোনও অধিনায়কের কাছে এটা হল স্বপ্নের বোলিং ব্রিগেড। এমন শক্তিশালী বোলিংই দরকার টেস্ট ম্যাচে।’’ তারই সঙ্গে কোহালি জানিয়ে দেন, কোনও রেকর্ডের দিকে তাঁর দল খেলতে পছন্দ করে না। তিনি বলেছেন, ‘‘সংখ্যা হোক বা নজির, এই ব্যাপারগুলো কিন্তু সীমাবদ্ধ থাকে বইয়ের পাতাতেই। আমরা সেটা নিয়ে মাথা ঘামাই না।’’ আরও যোগ করেন, ‘‘আমাদের লক্ষ্য থাকে খেলার মানকে আরও কতটা উন্নত করা সম্ভব। এটা একটা ধারাবাহিক প্রক্রিয়া।’’
সামনেই নিউজ়িল্যান্ড সফর। তার আগে এই পারফরম্যান্স কতটা বাড়াবে দলের আত্মবিশ্বাস? বিরাটের উত্তর, ‘‘পাঁচজন ব্যাটসম্যান খেলার সময় প্রত্যেক দলই চায় একজন ক্রিজে থিতু হয়ে ইনিংস গড়ে তুলুক। এই দলে সেই কাজ কেউ না কেউ করছে। বিদেশে যা গুরুত্বপূর্ণ হবে।’’ ম্যাচের সেরা মায়াঙ্ক আগরওয়াল বলেছেন, ‘‘ভারতের হয়ে খেলা আমার কাছে স্বপ্ন ছিল। এই ফর্মকে ধরে রাখাই আমার লক্ষ্য। গোলাপি বলের টেস্টকেও স্মরণীয় করে রাখাই আমার এখন প্রধান লক্ষ্য।’’