অনুশীলনে আনোয়ার আলি। ছবি: সমাজমাধ্যম।
অতীতে অনেক ফুটবলারই ইস্টবেঙ্গল থেকে মোহনবাগানে অথবা মোহনবাগান থেকে ইস্টবেঙ্গলে গিয়ে ডার্বি খেলেছেন। এক প্রধান থেকে আর এক প্রধানে গিয়ে কেউ সমর্থকদের নয়নের মণি হয়েছেন। কেউ বা রোষের কবলে পড়েছেন। তবে অতীতে কি কোনও ফুটবলার নিয়ে আদালতে দুই প্রধানের আইনি যুদ্ধের আবহে কলকাতা ডার্বিতে খেলতে নেমেছেন? অনেকেই মনে করতে পারছেন না।
আনোয়ার আলি ঠিক কোন মানসিকতা নিয়ে শনিবার কলকাতা ডার্বি খেলতে নামবেন তা কেউই জানেন না। তবে এটা ঠিক, তাঁর উপরে চাপ থাকবে। গত মরসুমে সবুজ-মেরুন জার্সি গায়ে মাতিয়ে দিয়েছিলেন আনোয়ার। ইস্টবেঙ্গলের জালে বলও জড়িয়েছেন। সেই আনোয়ারই দল বদলে এ বার লাল-হলুদে। শনিবার তাঁর সামনে পুরনো দল। আনোয়ার জানেন, এই একটা ম্যাচ ভারতের যে কোনও ফুটবলারের কেরিয়ার বদলে দিতে পারে। গোল করলে নায়ক হয়ে যাবেন লাল-হলুদ সমর্থকদের কাছে। খারাপ খেললে তিনিই হয়ে যাবেন আক্রমণের অভিমুখ।
আনোয়ারকে নিয়ে দড়ি টানাটানি নিঃসন্দেহে কলকাতা ময়দানের অতীত-যুগ ফিরিয়ে এনেছে। আগে যে ভাবে তিন প্রধানের মধ্যে ফুটবলার সই করানো গিয়ে নাটকের পর নাটক দেখা যেত, আনোয়ারের ক্ষেত্রেও একই জিনিস। তবে এ বার বিষয়টা গড়িয়েছে আদালতে। গত ১৪ অক্টোবর প্লেয়ার্স স্ট্যাটাস কমিটিতে (পিএসসি) শুনানি হলে আনোয়ারের ডার্বি খেলাই হত না হয়তো। তাঁর আইনজীবী ‘বুদ্ধি’ কাজে লাগিয়ে যে ডার্বি খেলার সুযোগ করে দিয়েছেন, এ কথা ময়দানে কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে।
ফুটবলারেরা যতই পেশাদার হোন, মাঠের বাইরে কী হচ্ছে সেটা পুরোপুরি কানে না এলেও কিছুটা আসে। আনোয়ারও তাই টের পাচ্ছেন। অনুশীলনে সমর্থকদের জেতানোর আকুতি নজর এড়াচ্ছে না। তিনি নিজেও চাইছেন যতটা সম্ভব স্বাভাবিক থাকতে। শুক্রবার অনুশীলনেও হাসিখুশি থাকার চেষ্টা করলেন।
আইনি যুদ্ধ, টানাপড়েন, মাঠের বাইরের চাপ— কলকাতা ডার্বির আগে এ রকম পরিস্থিতি সামলে নিজের সেরাটা দেওয়া যায় কি? কিছু দিন আগে ভিয়েতনামে জাতীয় দলের হয়ে আনোয়ারের পাশেই খেলেছিলেন শুভাশিস বসু। মোহনবাগানের অধিনায়ক এ দিন আনোয়ারকে নিয়ে বললেন, “সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল, মাঠের বাইরে যে আওয়াজটা হচ্ছে সেটার থেকে নিজের দূরে রাখতে হবে। মাঠের বাইরের আওয়াজ না শুনলে আমার মনে হয় মাঠে নিজের সেরাটা দেওয়া সম্ভব।”
চিরশত্রু দল থেকে এলেও আনোয়ারকে ইস্টবেঙ্গলের ফুটবলারেরা স্বাগত জানিয়েছেন মন থেকেই। খুব দ্রুতই দলের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পেরেছেন তিনি। প্রথম ম্যাচে পায়ের ফাঁক দিয়ে গোল খেয়েছেন বটে। বাকি ম্যাচগুলিতে চেষ্টা করেছেন আস্থার দাম রাখার। ইস্টবেঙ্গল আনোয়ারকে নিয়ে কী ভাবছে? মিডফিল্ডার সাউল ক্রেসপো এ দিন বললেন, “ওকে নিয়ে যা চলছে সেটা নিয়ে সাজঘরে আমরা কোনও কথা বলি না। সব সময় ম্যাচের কৌশল, পরিকল্পনা নিয়েই কথা হয়। আনোয়ার ভাল ছেলে। আইনি লড়াই ক্লাব ভাবুক। ও মাঠের নিজের সেরাটা দিক।”
বৃহস্পতিবার ইস্টবেঙ্গল তাঁবুতে ক্লাবকর্তারা বৈঠক করেছিলেন ফুটবলারদের সঙ্গে। ডার্বির আগে সবাইকেই চাঙ্গা করার চেষ্টা করা হয়। সেখানে ছিলেন আনোয়ারও। তবে তিনি যে চাপে রয়েছেন এটা মানতে চাইলেন না কর্তা দেবব্রত সরকার। তাঁর সাফ কথা, “আনোয়ার এক বারও বলেনি ও চাপে রয়েছে। তা হলে পরামর্শ দেওয়া যেত। ও বেশ খোলা মনেই কথাবার্তা বলেছে।” মোহনবাগানের সচিব দেবাশিস দত্ত বলেছেন, “আনোয়ার বড় ফুটবলার। ও যদি এই চাপ কাটিয়ে বেরোতে পারে তা হলেই তো বড় ফুটবলার হবে। আমার বিশ্বাস আনোয়ার সেটা পারবে।”
ফুটবল ম্যাচে নায়ক বা খলনায়ক হতে কয়েক মুহূর্ত লাগে। শনিবার ৯০ মিনিটের শেষে আনোয়ার কোনটা হবেন সেটাই এখন দেখার।