ইস্টবেঙ্গলের ভারপ্রাপ্ত কোচ বিনো জর্জ। ছবি: সমাজমাধ্যম।
শুক্রবার বিকেলে ইস্টবেঙ্গল তাঁবুতে মিডিয়া সেন্টার তখন কথা বলছেন ভারপ্রাপ্ত কোচ বিনো জর্জ। সাংবাদিক বৈঠক তিন মিনিটও গড়ায়নি। হঠাৎই চারদিকে আলো নিভে গেল। বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া মিডিয়া সেন্টারে চুপ করে প্রায় পাঁচ মিনিট বসে থাকলেন কোচ এবং খেলোয়াড় সাউল ক্রেসপো। আইএসএলে টানা চার ম্যাচ হারার পর ইস্টবেঙ্গলেরও এখন আঁধারই রয়েছে। সেই আঁধার কেটে শনিবার মোহনবাগানের বিরুদ্ধে কি তারা আলো জ্বালাতে পারবে?
আইএসএলে এখনও পর্যন্ত যতগুলি ডার্বি হয়েছে প্রায় প্রতিটিতেই ম্যাচের আগে খাতায়-কলমে এগিয়ে থাকে মোহনবাগান। শনিবার যেন আরও বেশি এগিয়ে তারা। আগের ম্যাচে মিনি ডার্বিতে মহমেডানকে হারিয়ে ফর্মে ফিরেছে। পয়েন্ট তালিকায় সবার নীচে থাকা ইস্টবেঙ্গলের পক্ষে কি সম্ভব হবে তাদের আটকানোর?
প্রশ্ন আসতেই বিনো মৃদু হাসলেন। যথা সম্ভব আত্মবিশ্বাস এনে বললেন, “প্রতিটা ম্যাচেই আমরা নিজেদের সেরাটা দিয়েছি। কখনও সাফল্য পেয়েছি। কখনও পাইনি। আসলে জেতা-হারা খেলারই অঙ্গ। ডার্বি মানে শুধু সমর্থক নয়, দুই দলের কাছেও বাড়তি অনুপ্রেরণা। আমরা সামনে তাকাচ্ছি। ভাল ফলাফল করতে মরিয়া।”
একই কথা শোনা গেল ক্রেসপোর মুখেও। তিনি বললেন, “আগের ম্যাচগুলোয় কী হয়েছে সত্যি মাথায় রাখতে চাই না। ডার্বির জন্য পুরোপুরি ফোকাস রয়েছে আমাদের। তিন পয়েন্টই পেতে হবে। আমরা জানি এই ম্যাচের গুরুত্ব কতটা।”
এই প্রথম আইএসএলে একটা ডার্বি খেলতে নামবে ইস্টবেঙ্গল যেখানে ডাগআউটে পুরোদস্তুর কোচকে পাবে না তাঁরা। দায়িত্বে থাকবেন বিনোই। তবে অস্কার ব্রুজ়ো শুক্রবার মধ্যরাতে শহরে পৌঁছবেন। তাঁকে ডাগআউটে রাখা হবে। তবে বিনোকে টপকে তিনি কোনও নির্দেশ দেবেন কি না সেটাই দেখার। যদিও ইতিমধ্যেই ভিডিয়ো কলে খেলোয়াড়দের বিভিন্ন নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
বিনো আত্মবিশ্বাস খুঁজছেন আগের জামশেদপুর ম্যাচ থেকে। ইস্টবেঙ্গল হারলেও তারা খারাপ খেলেনি। সেটা মনে করিয়ে বিনো বললেন, “সব দলের বিরুদ্ধেই আমাদের পরিকল্পনা থাকে। আগের ম্যাচে ঠিক পেনাল্টি দেওয়া হয়নি। অনুশীলনে ছেলেদের দেখে বলতে পারি, ওরা ম্যাচ জয়ের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী। মোহনবাগানকে কী ভাবে হারানো যায় সে ব্যাপারে প্রতিনিয়ত আলোচনা হচ্ছে।”
ক্রেসপো বলেছেন, “আমরা নিজেদের কৌশল মতো খেলতে চাই। যা ভাবছি সেটা মাঠে বাস্তবায়ন করা গেলে না জেতার কোনও কারণ দেখছি না।”
একটা ব্যাপার বিনোর পক্ষে রয়েছে। লাল-হলুদের জুনিয়র দলের কোচ হিসাবে একাধিক বার মোহনবাগানকে হারিয়েছেন। অতীতে আই লিগে থাকাকালীন গোকুলমের কোচ হিসাবেও মোহনবাগানকে হারিয়েছেন। তবে অতীতে ভরসা রাখতে চান না কেরলের কোচ। তিনি পাল্টা বলে রাখলেন, “চারটে ম্যাচে হেরেছি। কাল আমাদের কোনও চাপ নেই। বরং মোহনবাগান চাপে থেকে নামবে। ওদের তো পয়েন্ট তালিকায় উপরে উঠতে হবে। আমরা খোলা মনে খেলব।”
বিনো মেনে নিয়েছেন, ইস্টবেঙ্গলের সাম্প্রতিক ফর্ম মোটেই ভাল নয়। তবে এটাও বলে রাখলেন, অনেক কিছুই অনেক সময় হাতে থাকে না। বিনোর কথায়, “ফুটবলটা তো এ রকমই। কৌশল বানালেও তা কাজে লাগে না। আবার অনেক সময় ভাগ্যও খারাপ থাকে। আশা করি মোহনবাগানের বিরুদ্ধে ভাল খেলব। দলকে অনুপ্রাণিত করার আপ্রাণ চেষ্টা করছি। ফুটবলে উত্থান-পতন থাকেই। সেটা মেনে নিয়েই এগিয়ে যেতে হয়।”
বিনো যতই বলুন, অনুশীলনে ফুটবলারদের মধ্যে স্বতঃস্ফূর্ততা দেখা যায়নি। বরং গোটা দলের মধ্যেই একটা ঝিমিয়ে থাকা মানসিকতা ছিল। এক ধারে গোলকিপারেরা অনুশীলন করছিলেন। ইস্টবেঙ্গলের বাকি ফুটবলারেরা মাঝমাঠে ছিলেন। অনুশীলনে এ দিনও দেখা গেল না নাওরেম মহেশকে। তাঁর শনিবার খেলার সম্ভাবনা নেই। শুরু থেকে হয়তো ক্লেটন সিলভাই খেলবেন।
ময়দানের পুরনো প্রবাদ হল, ‘পিছিয়ে থাকা ইস্টবেঙ্গল সব সময়ে ভয়ঙ্কর’। সত্যিই আবার এই প্রবাদ ফলে কি না, তা জানতে অপেক্ষা শনিবার রাতের।