কার্লেস কুয়াদ্রাত। —ফাইল চিত্র।
ইন্ডিয়ান সুপার লিগে (আইএসএল) এখনও পর্যন্ত সুনাম অনুযায়ী পারফর্ম করতে পারেনি ইস্টবেঙ্গল। বার বার আশাহত হয়েছেন সদস্য, সমর্থকেরা। এ বার তাঁদের মুখে হাসি ফোটাতে শক্তিশালী দল তৈরি করেছেন ইমামি ইস্টবেঙ্গল কর্তৃপক্ষ। পরীক্ষিত বিদেশি ফুটবলার নেওয়ার পাশাপাশি কয়েক জন সম্ভাবনাময় ভারতীয় ফুটবলারকেও দলে নেওয়া হয়েছে। দল নিয়ে আশাবাদী কোচ কার্লেস কুয়াদ্রাতও।
বুধবার শহরের এক বিলাসবহুল হোটেলে আসন্ন আইএসএলের ঢাকে কাঠি পড়েছে। উপস্থিত ছিলেন অংশগ্রহণকারী দলগুলির কোচ এবং ফুটবলারেরা। সেই অনুষ্ঠানে দলের সম্ভাবনা নিয়ে কুয়াদ্রাত বলেছেন, ‘‘আমাদের ফুটবলারেরা মাঠে নামার জন্য তৈরি। লড়াই করার মতো দল হয়েছে। এ বারের দল বেশ ভাল। আইএসএলের সূচি একটু কঠিন হয়। আমাদের মানিয়ে নিতে হবে।’’ আইএসএল শুরুর আগে কুয়াদ্রাতকে স্বস্তি দিচ্ছে চোট-আঘাতের সমস্যা না থাকা। ইস্টবেঙ্গল কোচ বলেছেন, ‘‘দলে বড় চোট সমস্যা নেই। দু’জনের একটু সমস্যা রয়েছে। তা ছাড়া আমরা প্রথম ম্যাচের জন্য তৈরি। দলের প্রস্তুতিতে আমি খুশি। নতুন একটা মরসুম শুরু করতে চলেছি আমরা। যতটা সম্ভব ভাল করে শুরু করতে চাই। আমাদের প্রথম দু’টো ম্যাচই বাইরে গিয়ে খেলতে হবে। ফলে প্রতিযোগিতার শুরু থেকেই লড়াই করতে হবে।’’
আগের বার প্রথম ছয় দলের মধ্যে শেষ করার প্রাথমিক লক্ষ্য সফল হয়নি। এ বারের প্রথম লক্ষ্য কী? কুয়াদ্রত বলেছেন, ‘‘ক্লাবের পরিবেশ বেশ ভাল। এই প্রথম একই কোচ পর পর দুটো মরসুমে দায়িত্বে রয়েছে। বেশ কিছু ফুটবলারকেও ধরে রাখা গিয়েছে। যেমন ক্লেটন সিলভা, মহেশ সিংহ, হিজাজি মাহের, সৌভিক চক্রবর্তীরা। এ বার পরিস্থিতি অন্য রকম। কঠিন লড়াইয়ের জন্য আমরা তৈরি। অনেক বছর পর আমাদের প্রায় একই দল এক সঙ্গে ৩৫টা ম্যাচ খেলেছে। ট্রেভর মরগ্যানের সময়ের পর এ রকম আর হয়নি। শুধু বলব, আমাদের সামনে এখন নতুন চ্যালেঞ্জ।’’ তিনি আরও বলেছেন, ‘‘আমাদের বাস্তবের মাটিতে পা রেখে চলতে হবে। প্রতি মরসুমে অন্তত একটা ট্রফি আমরা জিততে চাই। সুপার সিক্সে উঠতে পারলে অনেক কিছুই সম্ভব।’’ কলকাতা লিগে খেলা দলের ফুটলারদের উপরেও নজর রয়েছে লাল-হলুদ কোচের। অনেকের খেলা ভাল লেগেছে তাঁর। প্রয়োজন মতো সেই দলের ফুটবলারদেরও আইএসএলে ব্যবহার করার কথা জানিয়েছেন।
কোচের মতোই আশাবাদী দলের ফুটবলারেরাও। গত বছর মোহনবাগানে খেলা স্পেনের ডিফেন্ডার হেক্টর ইয়ুস্তে এ বার লাল-হলুদ জার্সি পরে খেলছেন। তিনি বলেছেন, ‘‘আমি পেশাদার ফুটবলার। আগের চুক্তি শেষ হয়ে গিয়েছিল। ইস্টবেঙ্গল আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল। ওদের পরিকল্পনা আমার পছন্দ হয়েছিল। ইস্টবেঙ্গলেরও প্রচুর সমর্থক। কলকাতা আমার অন্যতম প্রিয় শহর। তাই আবার ফিরে এসেছি। স্ত্রী এবং আমার গত বছর এই শহরে ভাল অভিজ্ঞতা হয়েছিল।’’ বড় দলের হয়ে খেলার চাপ সম্পর্কে তিনি ওয়াকিবহাল। তা নিয়ে ভাবছেন না। তাঁর বক্তব্য, ‘‘বড় দলের হয়ে খেলতে হলে চাপ নিয়েই খেলতে হয়।’’ এ বারও পাশে পাবেন আনোয়ার আলিকে। তাই অনেকটা নিশ্চিত তিনি। ভারতীয় ডিফেন্ডারের প্রশংসাও করেছেন। এ বারও ইস্টবেঙ্গলের আক্রমণের অন্যতম ভরসা ব্রাজিলীয় স্ট্রাইকার ক্লেটন। তিনিই দলের অধিনায়কও। ক্লেটন বলেছেন, ‘‘প্রথম বার আমরা আইএসএল শুরুর আগে সাহসী। অবশ্যই সুপার সিক্সের লড়াইয়ে থাকব আমরা।’’
আনোয়ারকে পেয়ে খুশি কোচ কুয়াদ্রাতও। তিনি বলেছেন, ‘‘আনোয়ারকে পেয়ে আমাদের লাভ হয়েছে। যে ভাবে ব্যবহার করলে আমরা সবচেয়ে বেশি লাভবান হব, ওকে সে ভাবেই ব্যবহার করব।’’
আইএসএলের পাশাপাশি ভাবনায় রয়েছে ডার্বিও। এ বার মোহনবাগানের সঙ্গে রয়েছে মহমেডানও। লাল-হলুদ কোচ বলেছেন, ‘‘ডার্বি কখনও সহজ ম্যাচ নয়। এই ম্যাচটাই সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ। আবেগ এবং আরও অনেক কিছু জড়িয়ে থাকে এই ম্যাচে। আমরা এ বার তৈরি।’’ সৌভিক বলেছেন, ‘‘আমার মতো বাংলার ছেলেদের কাছে ডার্বির গুরুত্ব আলাদা। ডার্বি খেলা গর্বের ব্যাপার। আশা করব, সবাই গুরুত্ব দিয়ে খেলবে।’’
মহমেডান আইএসএলের যোগ্যতা অর্জন করায় খুশি কুয়াদ্রাত। তিনি বলেছেন, ‘‘এটা কলকাতা এবং ভারতের ফুটবলের জন্য ইতিবাচক। যথেষ্ট ভাল দল। গত বছর ওদের সঙ্গে একটা প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেছিলাম আমরা। বেশ লড়াই করতে হয়েছিল। যোগ্য হিসাবেই ওরা উঠে এসেছে। মহমেডানেরও প্রচুর সমর্থক রয়েছে। আইএসএলে এখন আরও বেশি দল। এটা ভারতীয় ফুটবলের উন্নতির জন্যও ভাল।’’
টানা তিন বছর লাল-হলুদ জার্সি পরে আইএসএল খেলবেন ক্লেটন। নিজের লক্ষ্য নিয়ে বলেছেন, ‘‘ইস্টবেঙ্গলের মতো ক্লাবে কিংবদন্তি হওয়া সহজ নয়। আমার এটা তৃতীয় মরসুম। আগে বহু ভাল ভাল ফুটবলার ইস্টবেঙ্গলের হয়ে খেলেছেন। আমাদের দলটা ভাল। আমাদের মধ্যে বোঝাপড়াও ভাল। চাইব মানুষ আমাকে মনে রাখুন। ক্লাবকে অন্য উচ্চতায় তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করব। ক্লাবের ইতিহাস জানি। তার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ফল আমাদের করতেই হবে। প্রথম ছয় দলের মধ্যে থাকতে হবে।’’
ইস্টবেঙ্গল কোচ, ফুটবলারেরা আত্মবিশ্বাসী এবং আশাবাদী। এ বার সম্মানজনক ফল করতে মরিয়া সকলেই। সমর্থকেরাও রয়েছেন ভাল কিছুর আশায়।