‘মোহনবাগান দিবসে’ সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। ছবি: পিটিআই।
শনিবার পালিত হল ‘মোহনবাগান দিবস’। সকালে সিনিয়র দলের অনুশীলনে নামা থেকে শুরু করে বিকেলে ক্লাব তাঁবুতে অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পালিত হল এই দিন। সেখানে ‘মোহনবাগান রত্ন’ পেয়ে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় জানালেন, শুধু অর্থ দিয়ে খেলাধুলোর উন্নতি হবে না। প্রতিভাও চাই। রাজ্যের ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস দাবি তুললেন, বাংলায় আরও বেশি করে ভূমিপুত্রদের খেলানোর।
সোমবার সকালে অনুশীলন ছিল মোহনবাগানের। সিনিয়র দলের প্রথম অনুশীলন দেখতে ভরে উঠেছিল মোহনবাগানের গ্যালারি। ‘মোহনবাগান দিবস’ উপলক্ষে এমনিতেই ক্লাব সাজানো হয়েছিল। ফুটবলারেরা অনুশীলনে নামার আগে থেকেই সমর্থকদের চিৎকার এবং স্লোগান শোনা যেতে থাকে। প্রচুর সমর্থকদের হাততালি এবং চিৎকারের মাধ্যমে অনুশীলনে নামেন জেমি ম্যাকলারেন, জেসন কামিংস, মনবীর সিংহেরা। সাজঘর থেকে ফুটবলারেরা বেরিয়ে আসার সময় পুষ্পবৃষ্টি হল।
সব দেখেশুনে মজে গেলেন ম্যাকলারেন। এ দিনই আবার ম্যাকলারেনের জন্মদিন ছিল। অনুশীলন শেষে সতীর্থদের সঙ্গে নিয়ে কেক কাটলেন তিনি। বেশ চনমনে মেজাজেই অনুশীলনে দেখা গেল তাঁকে। সমর্থকদের উচ্ছ্বাসও বেশি ছিল তাঁকে নিয়েই। সঙ্গে ছবি তোলার আব্দারও। ফেরার সময় গাড়ি ঘিরে ফেলল সবুজ-মেরুন জনতা। প্রথম দিনেই বাগান-জনতার মন জয় করে নিলেন তিনি।
বিকেলের অনুষ্ঠানও ছিল চিত্তাকর্ষক। সুন্দর করে সাজানো হয়েছিল মোহনবাগান তাঁবু। সেখানে একে একে বিভিন্ন ব্যক্তিকে পুরস্কার দেওয়া হয়। শেষের দিকে ওঠেন সৌরভ। তাঁকে উত্তরীয় এবং একটি পদক দেওয়া হয়। তার পরে সৌরভ পুরনো দিনে ফিরে গিয়ে বলেন, “তখন আমি সেন্ট জেভিয়ার্স স্কুলে পড়তাম। একটু-আধটু ক্রিকেট খেলি। তবু ফুটবলের মাঝে বড় হয়েছি। তখন বাবার সদস্য কার্ড নিয়ে প্রতিটা ম্যাচে র্যাম্পার্টে খেলা দেখতে আসতাম। এক-একজনের নাম বলতে পারি যারা মোহনবাগানকে আজ এই জায়গায় পৌঁছে দিয়েছে। বিদেশ, মানস, সত্যজিৎদা, নইমদা, অমলরাজ রয়েছে। প্রসূন, প্রশান্ত, অলোক মুখোপাধ্যায়, কম্পটন দত্ত, এমনকী মজিদ বাসকারেরও খেলা দেখেছি।”
ময়দানের তিন বড় ক্লাবকেই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলার বার্তা দেন সৌরভ। বলেন, “আমাদের কাছে নব্বই মিনিটটাই যুদ্ধ। তা ছাড়া ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান, মহমেডান সবাই এক। অরূপদা বলছিলেন, বাংলার ফুটবলকে এগোতে হবে। আমি একমত। আমাদের কাছে খেলার মান জরুরি। তবেই খেলাধুলো বছরের পর বছর বেঁচে থাকবে। সে ক্রিকেট, ফুটবল বা অন্য যে কোনও খেলা হোক। ময়দানের সবাইকে খেলার উন্নতিতে কাজে লাগতে হবে।”
এর পরেই তাঁর সেই বার্তা। খেলাধুলোর অর্থের প্রসঙ্গে ভারতের প্রাক্তন অধিনায়ক বলেন, “অর্থ দিয়ে কখনও খেলার উন্নতি হয় না। তা হলে সুনীল গাওস্কর, কপিল দেব, শচীন তেন্ডুলকর তৈরি হত না। বিদেশ, প্রসূন, মজিদ, উলানাথন কেউ তৈরি হত না। খেলতে গেলে সাহস দরকার হয়। আশা করব আজ যাঁরা পুরস্কার পেয়েছেন, তাঁরা মাথায় রাখবেন উন্নতি হওয়া তাঁদেরই হাতে। সব অর্থ দিয়ে হয় না।”
ক্লাবকর্তা এবং সদস্য-সমর্থকদের উদ্দেশে সৌরভ বলেন, “অল্পেতে সন্তুষ্ট হবেন না, যে মোহনবাগান জিতল মানে সব ভাল। স্ট্যান্ডার্ড বা মানে সন্তুষ্ট হবেন। কেমন খেলা দেখলেন, কী করলে ভাল হত সে সব নিয়েও ভাববেন।”
বাংলার খেলাধুলোয় ভূমিপুত্রদের অভাব নিয়ে আক্ষেপ করে যান অরূপ। তিনি বলেন, “৩২ বছর ধরে মোহনবাগানের সদস্য কার্ড রয়েছে আমার। আজ আমি বাংলার প্রতিনিধি হিসাবে এখানে এসেছি। গত ১২ বছরে সন্তোষ ট্রফি জিতিনি আমরা। স্নেহাশিসবাবু (গঙ্গোপাধ্যায়, সিএবি সভাপতি) এখানে বসে আছেন। আমার মনে আছে সম্বরণরা কবে রঞ্জি জিতেছিল। আমরা উন্নতি করতে পারছি না, কারণ আমরা বাংলার খেলোয়াড় খেলাতে পারছি না। আইএফএ-র কলকাতা ফুটবল লিগ শুধু নামেই। সেখানে সাত জন বাইরের ফুটবলার খেলতে পারবে। তা হলে বাংলার ছেলেরা কবে খেলবে, কবে একটা শিবদাস ভাদুড়ি উঠে আসবে জানি না। দেবাশিস দত্ত, টুটু বসুর কাছে অনুরোধ করব, বাংলার ফুটবলের স্বমহিমা ফিরিয়ে আনুন।”