UEFA Euro 2024

রোজ দিতেন জরিমানা, সেই টাকায় সতীর্থদের বিদেশ ভ্রমণ! মাত্র চার বার বল পেয়ে ইংল্যান্ডের নায়ক ওয়াটকিন্স

বুধবারের ম্যাচের আগে ইউরো কাপে মাত্র ২২ মিনিট খেলা ফুটবলারের উপর ভরসা রেখেছিলেন কোচ। মাঠে নামার ন’মিনিটের মধ্যে গোল করে দাম দিলেন ওয়াটকিন্স।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ জুলাই ২০২৪ ১১:৫৩
Share:

অলি ওয়াটকিন্স। ছবি: রয়টার্স।

বুধবারের আগে পর্যন্ত গোটা ইউরোয় খেলেছিলেন মাত্র ২২ মিনিট। সেই অলি ওয়াটকিন্সকে নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে সেমিফাইনালে ৮১ মিনিটে মাঠে নামিয়েছিলেন ইংল্যান্ডের কোচ গ্যারেথ সাউথগেট। মাত্র চার বার বল পায়ে লাগিয়েছিলেন ওয়াটকিন্স। অ্যাস্টন ভিলার স্ট্রাইকারের জন্য সেটাই যথেষ্ট ছিল। ৯০ মিনিটের মাথায় তাঁর করা গোলেই জিতেছে ইংল্যান্ড। পৌঁছে গিয়েছে ইউরো কাপের ফাইনালে।

Advertisement

১৯৬৬ সালের বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর আরও এক বার বড় ট্রফি পাওয়ার সুযোগ রয়েছে ইংল্যান্ডের। গত ইউরো কাপের ফাইনালে উঠেছিল তারা। সে বার হারতে হয়েছিল ইটালির কাছে। এ বার সামনে স্পেন।

নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে গোল করে রাতারাতি নায়ক হয়ে যাওয়া ওয়াটকিন্স দেরি করে অনুশীলনে আসার জন্য পরিচিত। বুধবার রাতে তাঁর গোলটিও এল দেরিতে, নির্ধারিত সময়ের একেবারে শেষ মিনিটে।

Advertisement

২৮ বছরের ওয়াটকিন্সের সিনিয়র ফুটবল কেরিয়ার শুরু ২০১৪ সালে। সেই সময় তিনি ছিলেন এক্সেটার সিটিতে। তবে সেই ক্লাব লোনে তাঁকে ছেড়ে দিয়েছিল ওয়েস্টন সুপার মেয়রের হয়ে খেলতে। ইংল্যান্ডের সেই ক্লাবেই ওয়াটকিন্সের ফুটবল জীবন শুরু। ওয়াটকিন্সের দোষ ছিল একটাই। তিনি ঠিক সময়ে অনুশীলনে পৌঁছতে পারতেন না। সময় মেনে কাজ করা ওয়াটকিন্সের ধাতে নেই। তাঁর পুরনো কোচ রায়ান নর্থমোর বলেন, “ও এক্সটার থেকে আসত। অনেকটা দূর। তাই রোজ দেরি হত। কিন্তু দলের বাকিরা ওকে কোনও ছাড় দিত না। ওয়াটকিন্স অনেক ধরনের অজুহাত দিত। কিন্তু দেরি করার জন্য ৫ ইউরো (৪৫২ টাকা) করে দিতেই হত।”

শুধু দেরি করে আসাই নয়, প্রায় রোজই কিছু না কিছু আনতেও ভুলে যেতেন ওয়াটকিন্স। নর্থমোর বলেন, “খেলার সরঞ্জাম আনতে ভুল যেত। বাকিরা তখন আরও বেশি করে ওর ঘাড়ে চেপে বসত। দ্বিগুণ জরিমানা নিত। মরসুমের শেষে সেই জরিমানার পরিমাণ এতটাই হয়ে গিয়েছিল যে সেই টাকায় স্পেন ঘুরে এসেছিল ওরা। ওয়াটকিন্সকেও নিয়ে গিয়েছিল। চার জনের ঘোরার টাকা ওই জরিমানা থেকেই উঠে এসেছিল।’’ সময়ে অনুশীলনে পৌঁছতে না পারা ওয়াটকিন্সকে তবু কেন দলে রাখা হয়েছিল, তা নিয়ে নর্থমোর বলেন, ‘‘এক জন ১৮ বছরের ছেলের পক্ষে দলের নম্বর নাইন পজিশনে খেলা সহজ ছিল না। বড় দায়িত্ব। ও সেই দায়িত্ব নেওয়ার জন্য তৈরি ছিল।”

ওয়াটকিন্সের সাফল্য স্বস্তি দিয়েছে ইংল্যান্ডের অধিনায়ক হ্যারি কেনকেও। তিনি ম্যাচ শেষে বলেন, “আমরা বড় দল। এই রকম দলে খেলতে হলে সব সময় তৈরি থাকতে হয়। পাঁচ মিনিট হোক বা এক মিনিট, যত ক্ষণই খেলার সুযোগ পাক, তার মধ্যেই বাকিদের থেকে নিজেকে আলাদা করে চেনাতে হয়। ওয়াটকিন্স এই সুযোগের অপেক্ষাতেই ছিল। ধৈর্য ধরে বসেছিল। মাঠে নামার সুযোগ আসতেই ও রকম গোল করে দিল! দুর্দান্ত।”

১৯৬৬ সালে ফুটবল বিশ্বকাপ জিতেছিল ইংল্যান্ড। তা ছাড়া বলার মতো কোনও সাফল্য নেই সেই দেশের ফুটবলে। কিন্তু যে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগকে ইউরোপের সেরা মনে করা হয়, বড় প্রতিযোগিতায় সেই দেশের সাফল্যের হার বেশ খারাপ। ২০১৬ সালে দায়িত্ব দেওয়া হয় সাউথগেটকে। আইসল্যান্ডের কাছে হেরে ইউরো থেকে বিদায় নেওয়ার পর পরই কোচ করা হয়েছিল তাঁকে। সাউথগেটের প্রশিক্ষণে বদলাতে থাকে ইংল্যান্ড। ২০১৮ সালে বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল খেলে। ২০২১ সালে ইউরো কাপের ফাইনালে ওঠে। শেষ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল খেলেছিল ইংল্যান্ড। এ বারের ইউরো কাপে আবার ফাইনালে কেনেরা।

আর দলকে ফাইনালে তোলার নেপথ্যে ওয়াটকিন্স। খেলা শেষ হওয়ার কয়েক মিনিট আগে তাঁকে নামানোর সিদ্ধান্ত সাউথগেটের। তিনি ফিল ফোডেনকে তুলে নামান কোল পামারকে। প্রায় একই সঙ্গে কেনকে তুলে নামান ওয়াটকিন্সকে। ওই জোড়া বদলই কাজে লাগে। ওয়াটকিন্স বলেন, “গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই অপেক্ষা করছিলাম এই মুহূর্তটার জন্য। সন্তানদের নামে দিব্যি খেয়ে বলছি, আমি পামারকে বলেছিলাম, আমরা একসঙ্গে নামছি, তুমি আমায় গোলের পাস বাড়াবে।” ৯০ মিনিটের মাথায় পামারের বাড়িয়ে দেওয়া পাস থেকেই গোল করেন ওয়াটকিন্স।

রবিবার রাতে স্পেনের বিরুদ্ধে ওয়াটকিন্স শুরু থেকে খেলবেন কি না জানাননি কোচ। কিন্তু ওয়াটকিন্স যখনই খেলতে নামুন, দলকে জেতানোর জন্য তৈরি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement