অভিনব: বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে কাতারের বিরুদ্ধে ইকুয়েডরের প্রথম গোলের পরে উৎসব। ছবি পিটিআই
সে ভাবে দেখতে গেলে বিশ্বকাপের মঞ্চ কোনও সময়েই বিতর্কমুক্ত থাকতে পারেনি। কখনও জড়িয়েছে দল অথবা ফুটবলারের নাম, আবার কোনও সময় আয়োজক কমিটির সিদ্ধান্ত নিয়ে তৈরি হয়েছেউষ্মা, ক্ষোভ।
কিন্তু গত কয়েক মাস ধরে মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে যে ভাবে কাতারকে কোণঠাসা করে ফেলেছিল পশ্চিমী সংবাদমাধ্যম, তা ছিল বেশ চমকে দেওয়ার মতোই। তার উপরে বিশ্বকাপ শুরুর ৪৮ ঘণ্টা আগে সরকারের নির্দেশে প্রকাশ্যে মদ্যপান এবং তা বিক্রির উপরে নিষেধাজ্ঞা জারির সিদ্ধান্ত যেন বিতর্কের আগুনে ঘি ঢালার কাজ করে দিয়েছিল। তাই খুব আগ্রহ নিয়ে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান দেখতে বসেছিলাম।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের জাঁকজমক দেখে মুগ্ধ। ফুটবলই পারে সমস্ত বিতর্ক থামিয়ে দিতে। ঐতিহ্য এবং প্রযুক্তির চোখধাঁধানো মেলবন্ধন। একই সঙ্গে মন ভারীও হয়ে গেল। এশীয় ফুটবল মানচিত্রে কাতার যে ভাবে নিজেদের উন্নত করে বিশ্বকাপে খেলছে, আমাদের দেশ সেই স্বপ্ন এখনও দেখতে পারল না। দু’বছর আগে ওরা এএফসি এশিয়ান কাপ জিতেছে। ভারত এখনও সেই চৌকাঠ পেরোতেই পারল না!
কিন্তু বাতানুকূল আল বায়েত স্টেডিয়ামে কাতারের যে ফুটবল দেখলাম, সেটা ততোধিক বিস্ময়কর। নিজেদের চেনা মাঠ, গ্যালারিতে দর্শকদের ঢেউ। কিন্তু ৯০ মিনিটে আয়োজক দেশের ফুটবলে এমন কোনও ঝলক দেখলাম না, যা দেখে আশ্বস্ত হওয়া যায়। এতটা সময় হাতে পেয়ে কী করল কোচ ফেলিক্স স্যাঞ্চেজ়? খেলায় পরিকল্পনার ছাপ নেই। মাঝমাঠ বলে কিছু নেই। হতে পারে ঘরের মাঠে খেলার চাপ নিতে পারেনি কাতার। সেই সুযোগটা পুরোদস্তুর কাজে লাগাল ইকুয়েডর।
দুটো গোল করে গেল এনের ভ্যালেন্সিয়া। ৩৩ বছরের ফেনারবাখের এই ফরোয়ার্ড আবার ইকুয়েডরের অধিনায়ক। প্রথম ম্যাচে হ্যাটট্রিকই তো করে ফেলেছিল। রেফারি কেন যে ওর প্রথম গোলটা গোলপ্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে অফসাইড বলে বাতিল করে দিলেন, সেটা বুঝলাম না। তবে তাতেও ইকুয়েডরের জয় থমকে যায়নি। বিশেষ করে, হেডে ভ্যালেন্সিয়ার দ্বিতীয় গোলটা তো দারুণ লাগল। কাতার ডিফেন্ডাররা ওকে নজরেই রাখেনি। ভ্যালেন্সিয়া কিন্তু ডান দিক থেকে তোলা প্রেসিয়াদোর সেন্টার শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত নজরে রেখে গোল করে যায়। মনে রাখতে হবে, লাতিন আমেরিকা গ্রুপ থেকে চার নম্বর দল হিসেবে কিন্তু ইকুয়েডরমূল পর্বে উঠেছে।
নতুন যে আল রিহলা বলে এ বার খেলা হচ্ছে, সেটা কিন্তু এই ধরনের মাঠের জন্য আদর্শ। বলে মাটিতে পড়ে বেশি লাফাচ্ছে না। তার সঙ্গে বাঁক খাচ্ছে বেশি। ইকুয়েডর তিন বার ফ্রি কিক পেয়েছিল। তখন বোঝা গেল বলের স্পিনটা বেশি। লিয়ো মেসি, ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো বা নেমারের মতো যারা ফ্রি-কিকে সিদ্ধহস্ত, তাদের পক্ষে এই বলটা বাড়তি কিছু সুবিধা এনে দিতেই পারে।