— প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।
সুপার কাপের কলকাতা ডার্বি হয়ে গিয়েছে ১৯ জানুয়ারি। তার ঠিক ১৫ দিন পর, শনিবার আবার বড় ম্যাচে মুখোমুখি হচ্ছে ইস্টবেঙ্গল এবং মোহনবাগান। আইএসএলের প্রথম পর্বে বাতিল হয়ে যাওয়া ডার্বি দিয়েই শুরু হচ্ছে দুই প্রধানের দ্বিতীয় পর্বের খেলা। সুপার কাপে ইস্টবেঙ্গলের কাছে হারা মোহনবাগান প্রতিশোধ নিতে মরিয়া। নতুন কোচ আন্তোনিয়ো লোপেস হাবাসকে নিয়ে স্বপ্ন দেখছে ‘নতুন’ মোহনবাগান। অন্য দিকে, ১২ বছর পর ট্রফি জেতা ইস্টবেঙ্গল চাইছে কলকাতা ডার্বিতে হেরে আনন্দ এখনই মাটি না হোক। ফলে শনিবার উত্তেজক লড়াইয়ের অপেক্ষায় সমর্থকেরা।
আইএসএলের ইতিহাসে আজ পর্যন্ত মোহনবাগানকে হারাতে পারেনি ইস্টবেঙ্গল। ছ’বারই হারতে হয়েছে। প্রথম চার বার গোয়ায়। শেষ দু’বার কলকাতায়। কোচ কার্লেস কুয়াদ্রাতের অধীনে সেই ইতিহাস এ বার পাল্টাতে চাইছে লাল-হলুদ। অন্য দিকে, জয়ের ধারা বজায় রাখতে চায় মোহনবাগানও। শনিবার তাদের কাছে প্রমাণ করার ম্যাচ যে, সুপার কাপের হার নেহাতই একটা ‘অঘটন’ ছিল। শনিবার জিতলে ইস্টবেঙ্গলের থেকে ১১ পয়েন্টে এগিয়ে যাবে মোহনবাগান। আইএসএলের প্রথম তিনে ওঠার লড়াইয়ে চলে আসবে। ইস্টবেঙ্গল হারলে প্লে-অফে খেলা আরও কঠিন হবে।
মোহনবাগানের শক্তি
১) জাতীয় দলের সাত ফুটবলার ফিরে এসেছেন। ফলে দলে বিকল্প বেড়েছে। প্রত্যেকেই প্রথম একাদশে থাকার মতো। ইস্টবেঙ্গলকে হারানোর মতো বিকল্প পাওয়া গিয়েছে।
২) কোচ আন্তোনিয়ো লোপেস হাবাসের মস্তিষ্ক। কখনও ইস্টবেঙ্গলের কাছে হারেননি। আইএসএলে অভিজ্ঞ। কী ভাবে দলকে ট্রফি জেতাতে হয় জানেন।
মোহনবাগানের দুর্বলতা
১) জেসন কামিংস, আর্মান্দো সাদিকুদের অফ ফর্ম। গোলের খরা চলছে দু’জনেরই। সুযোগ নষ্টও হচ্ছে প্রচুর। মাঝমাঠে হুগো বুমোসও চিন্তায় রেখেছেন। ছাঁটাই হওয়ার মুখে রয়েছেন তিন জনের একজন।
২) রক্ষণ ভাগ ভরসা দিতে পারছে না। গোল খেতে হচ্ছে বোঝাপড়ার অভাবে। আনোয়ার আলি না ফিরলে সেই ছন্দ ফেরা মুশকিল বাগানে। ব্রেন্ডন হ্যামিল কবে ভাল খেলবেন সেই ভরসা কেউ দিতে পারছেন না।
ইস্টবেঙ্গলের শক্তি
১) গোটা দলই আত্মবিশ্বাসে ভরপুর। সুপার কাপ জিতে দীর্ঘ দিন পর ট্রফি খরা কাটানোয় ফুটছেন তাঁরা। এই আত্মবিশ্বাসের ঝলক দেখা যেতে পারে ডার্বিতে। নতুন উদ্যমে খেলতে পারে তারা।
২) কুয়াদ্রাতের আমলে দলের মানসিকতা বদলে গিয়েছে। এখন আর ইস্টবেঙ্গল হারার কথা নয়, জেতার কথা ভাবে। পিছিয়ে পড়েও ফিরে আসতে জানে। এই মানসিকতা প্রভাব ফেলছে বিভিন্ন ম্যাচে।
ইস্টবেঙ্গলের দুর্বলতা
১) ম্যাচে ছন্দে থাকতে থাকতে আচমকা মুহূর্তের ভুলে গোল খেয়ে যাওয়া। সুপার কাপ ফাইনালেও তা দেখা গিয়েছে। অনেক সময়ই রক্ষণের ফুটবলারদের মধ্যে বোঝাপড়া থাকছে না।
২) আক্রমণ ভাগে বিকল্প নেই। ক্লেটন সিলভা, না হলে নন্দকুমার বা মহেশকেই গোল করতে হচ্ছে। ভাল স্বদেশি স্ট্রাইকার নেই দলে। ক্লেটন আটকে গেলে কে গোল করবেন সেটাই বড় ভাবনা।
মোহনবাগানের কোচ কী বললেন
১) আমি কখনও কোনও ম্যাচে হারার কথা ভেবে খেলতে নামি না। মনে রাখবেন, আমি এখনও ইস্টবেঙ্গলের কাছে হারিনি। ট্রফির জন্য লড়াই করতে নামলে সব ম্যাচে জয়ের কথা ভেবেই নামতে হয়।
২) গত বারের থেকে এ বার ভারতীয় ফুটবলারের মান ভাল হয়েছে। বিশেষত মোহনবাগানের কথা বলব। অনেকেই জাতীয় দলের হয়ে ভাল খেলেছে। আমাদের দলটা খুবই ভাল। অনেক প্রতিভাবান ফুটবলার রয়েছে।
৩) নতুন দায়িত্ব পেয়েছি। কাল আমাদের সামনে নতুন চ্যালেঞ্জ। আমাদের ফোকাসে শুধু কালকের ম্যাচে। ডার্বির আগে নিজের উপরে চাপ কমানোর চেষ্টা করছি। সব সময়েই আমার লক্ষ্য থাকে দলকে সেরা ফর্মে রাখা। এত বড় ম্যাচে আমরা নিজেদের সব রকম ভাবে তৈরি রাখছি। জানি যে আমরা বিপক্ষের থেকে পয়েন্ট তালিকায় এগিয়ে। কিন্তু অন্য দল নিয়ে নয়, আমি ভালবাসি নিজের দলকে নিয়ে ভাবতে।
ইস্টবেঙ্গলের কোচ কী বললেন
১) ইস্টবেঙ্গল একটা বড় ক্লাব। এত সমর্থক তাদের। অনেক দিন পরে ক্লাব একটা ট্রফি জিতেছে। সমর্থকেরা আনন্দ করার একটা সুযোগ পেয়েছেন। শনিবার জিততে পারলে ওঁরা আবার আনন্দ করতে পারবেন। এখন ওঁরা গর্বিত। এখন ওঁরা অন্য ক্লাবের সমর্থকদের সামনে গিয়ে গর্ব করে বলতে পারবেন, আমরাও চ্যাম্পিয়ন।
২) বড় ম্যাচের পর ঠোক্কর খাওয়ার কথা জানি। এমনিতে কোনও একটা ট্রফি জিতে পরের ম্যাচেও ঠোক্কর খাওয়ার কথাও জানি। ২০১৯ সালে বেঙ্গালুরুর হয়ে আইএসএল জেতার পর সুপার কাপে আই লিগের একটা দলের কাছে হেরে গিয়েছিলাম। কিন্তু ফুটবলারদের মনঃসংযোগ ঠিক রাখাই আমার কাজ। ওরা আইএসএলের জন্য তৈরি। আরও একটা কঠিন ম্যাচ খেলতে নামবে। আমাদের কাছে তিন পয়েন্ট খুব গুরুত্বপূর্ণ।
৩) এখনই ট্রফির কথা ভাবতে চাই না। আমরা লিগ তালিকায় অষ্টম স্থানে রয়েছি। শনিবার জিততে পারলে মোহনবাগানের সঙ্গে পাঁচ পয়েন্টের পার্থক্য হবে। তা-ও পিছিয়ে থাকব আমরা। মোহনবাগানের বিরুদ্ধে জিততে পারলে আমরা ছয় নম্বরে উঠব। কিন্তু তখনও অনেক কাজ বাকি থাকবে। তবে প্লে-অফের লড়াইতে চলে আসব। ট্রফির কথা এখন থেকেই ভাবতে চাই না।
খেলা ক’টা থেকে?
সন্ধে ৭.৩০ থেকে।
কোথায় দেখা যাবে?
স্পোর্টস ১৮, ডিডি বাংলা চ্যানেলে এবং জিয়ো সিনেমা অ্যাপে।