গোলের পর নেদারল্যান্ডসের খেলোয়াড়দের উচ্ছ্বাস। ছবি: রয়টার্স।
নেদারল্যান্ডস ২
তুরস্ক ১
দ্বিতীয়ার্ধে ছ’মিনিটের ঝড়। তুরস্কের বিরুদ্ধে সেটাই জিতিয়ে দিল নেদারল্যান্ডসকে। কমলা জার্সিধারীরা গোটা ম্যাচে নজরকাড়া ফুটবল না খেললেও আসল কাজটা করে দিলেন। শনিবার বার্লিনে কোয়ার্টার ফাইনালে তুরস্ককে ২-১ হারিয়ে সেমিফাইনালে উঠে গেল নেদারল্যান্ডস। শেষ চারে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে খেলবে তারা।
গোটা প্রতিযোগিতায় আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলে নজর কেড়েছিল তুরস্ক। শনিবার হারলেও সেই মনোভাব থেকে সরে আসেনি তারা। কিন্তু নেদারল্যান্ডসের অভিজ্ঞতার কারণেই হার মানল তারা। পাশাপাশি ভাগ্যও সঙ্গ দিল না তাদের। পিছিয়ে থাকার সময় একটি গোললাইন সেভ হল। একটি বল নেদারল্যান্ডসের গোলকিপার ভারব্রুগেন কোনও মতে বাঁচালেন। তার আগে প্রথমার্ধে একটি ফ্রিকিক লাগল পোস্টে। ২০০২ সালে বিশ্বকাপে তৃতীয় স্থানে শেষ করা তুরস্কের দ্বিতীয় বার কোনও বড় প্রতিযোগিতার সেমিফাইনালে ওঠা হল না।
এ বারের ইউরো কাপে এর আগে যতগুলি ম্যাচ খেলেছে তুরস্ক, প্রতিটিতেই তারা প্রতি আক্রমণে মাতিয়ে দিয়েছে। শনিবার নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধেও সেই খেলা যাবে কি না, তা দেখার জন্য উৎসুক ছিলেন অনেকে। ভিনসেঞ্জো মন্টেলার ছেলেরা নিজেদের সাফল্যের মন্ত্র থেকে সরে আসেননি। প্রথম মিনিট থেকে ঝড়ের বেগে আক্রমণে ওঠা শুরু করেছিল তুরস্ক। সুযোগ পেলেই মুহূর্তের মধ্যে বিপক্ষের বক্সে পৌঁছে যাচ্ছিল তারা।
প্রি-কোয়ার্টারে রোমানিয়া ম্যাচ বাদ দিলে নেদারল্যান্ডসকে গোটা প্রতিযোগিতাতেই খুব ম্যাড়মেড়ে লেগেছে। দলে একাধিক প্রতিভাবান খেলোয়াড় থাকা সত্ত্বেও গোলের রাস্তা খুঁজে না পাওয়ার সমস্যা তাদের ভোগাচ্ছিল। তুরস্কের বিরুদ্ধে প্রথমার্ধে সেই খেলায় কোনও বদল ছিল না। মেম্ফিস দেপাই, কডি গ্যাকপোরা আক্রমণে উঠছিলেন বটে। কিন্তু বিপক্ষের রক্ষণ ভাঙতে পারছিলেন না। প্রশংসা করতে হবে তুরস্কেরও। ডিফেন্স তারা এতটাই জমাট রেখেছিল যে মাছি গলারও উপায় ছিল না। বল পেলেই তারা পাস বাড়িয়ে দিচ্ছিল উইংয়ে। সেখান থেকে আর্দা গুলের, বরিস ইলমাজ়েরা উঠে যাচ্ছিলেন। মাঝমাঠে হাকান চালহানোগ্লু তো ছিলেনই।
তুরস্কের বেশির ভাগ আক্রমণ তৈরি হচ্ছিল চালহানোগ্লুর হাত ধরেই। তুরস্কের অধিনায়ক সত্যিকারের নেতার মতো মাঝমাঠ নিয়ন্ত্রণ করছিলেন। তুরস্কের বাকি খেলোয়াড়েরা ডাচদের পায়ে বল রাখতেই দিচ্ছিলেন না। যে কোনও প্রকারে কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। সঙ্গে সঙ্গে প্রতি আক্রমণ। সেই করতে করতেই গোল করে তুরস্ক। একটি কর্নার ডাচ রক্ষণ প্রতিহত করার পর বল আসে গুলেরের পায়ে। তাঁর ভাসানো বলে মাথা ছুঁইয়ে গোল করেন সামেত আকায়দিন।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে সমতা ফেরানোর ভাল সুযোগ পেয়েছিলেন দেপাই। নাথান একের থেকে বল পেয়ে দেপাইয়ের উদ্দেশে নামিয়ে দিয়েছিলেন উওট উইঘর্স্ট। কিন্তু দেপাই সেই বল ছুঁতেই পারেননি। চার মিনিট পরে গুলেরের ফ্রিকিক পোস্টে লাগে। বক্সের বেশ খানিকটা বাইরে থেকে তিনি নিচু শট মেরেছিলেন। ডাচ গোলকিপারের হাত ছুঁয়ে বল পোস্টে লেগে বেরিয়ে যায়।
তুরস্ক ব্যবধান বাড়িয়ে ম্যাচ শেষ করে দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করছিল। কিন্তু মুহূর্তের কমলা-ঝড়ে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে তুরস্ক। ৭০ মিনিটে সমতা ফেরান স্টেফান দে ভ্রাই। দেপাইয়ের পাস থেকে গোলের সুবর্ণ সুযোগ নষ্ট করেছিলেন উইঘর্স্ট। সেই কর্নার থেকেই জোরালো হেডে গোল করেন দে ভ্রাই। তাঁকে কেউ মার্কই করেননি। ৬ মিনিট পরে এগিয়ে যায় নেদারল্যান্ডস। এ বারও তুরস্ক গোল হজম করে রক্ষণের ভুলে। ডান দিক থেকে ডেঞ্জেল ডামফ্রিসের পাস তুরস্কের কেউ আটকাতে পারেননি। বাঁ দিক থেকে গ্যাকপো ছুটে আসছিলেন। তিনি শট নেওয়ার আগেই ক্লিয়ার করতে যান মের্ত মুলদুর। বল তাঁর পায়ে লেগে নিজের গোলেই ঢুকে যায়।
শেষ দিকে একের পর এক আক্রমণ করছিল তুরস্ক। কিন্তু ডাচদের দুর্ভেদ্য রক্ষণের সামনে আটকে গেল তাদের যাবতীয় প্রচেষ্টা।