জিতে উল্লাস ইংল্যান্ডের ফুটবলারদের। ছবি: রয়টার্স।
ইংল্যান্ড ১ — সুইৎজ়ারল্যান্ড ১
(টাইব্রেকারে ইংল্যান্ড ৫-৩ ব্যবধানে জয়ী)
প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালে শেষ মুহূর্তে বাঁচিয়েছিলেন জুড বেলিংহ্যাম। কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ডকে বাঁচালেন বুকায়ো সাকা। আরও এক বার গোল খেয়ে পিছিয়ে পড়ে ৯০ মিনিটের মধ্যে কোনও রকমে সমতা ফেরাল ইংল্যান্ড। অতিরিক্ত সময়ে গেল খেলা। সেখানেও সুইৎজ়ারল্যান্ডের দাপট। শেষ পর্যন্ত টাইব্রেকারে হল ম্যাচের ফয়সালা। সুইৎজ়ারল্যান্ডকে হারিয়ে ইউরো কাপের সেমিফাইনালে উঠল ইংল্যান্ড। টাইব্রেকারে নায়ক হয়ে উঠলেন ইংল্যান্ডের গোলরক্ষক জর্ডন পিকফোর্ড।
চলতি ইউরোতে খুব একটা ভাল ফর্মে খেলছিল না ইংল্যান্ড। গ্রুপ পর্ব থেকে শুরু করে কোনও ম্যাচেই তেমন সুযোগ তৈরি করতে পারেনি তারা। সুইৎজ়ারল্যান্ড ইংল্যান্ডের এই দুর্বলতাকেই কাজে লাগায়। রক্ষণ সাজিয়ে আক্রমণে ওঠার পরিকল্পনা নিয়ে নেমেছিল তারা। প্রথমার্ধ জুড়ে মন্থর ফুটবল চলে। কিছুটা হলেও গোল করার তাগিদ দেখাচ্ছিল সুইৎজ়ারল্যান্ড। সেই সব আক্রমণও ইংল্যান্ডের বক্সের কাছে গিয়ে আটকে যাচ্ছিল। প্রথম ৪৫ মিনিটে গোলের মুখ খুলতে পারেনি কোনও দল। গোলশূন্য অবস্থায় বিরতিতে যায় দু’দল।
দ্বিতীয়ার্ধে অনেক বেশি আক্রমণাত্মক ফুটবল শুরু করে সুইৎজ়ারল্যান্ড। ৫১ মিনিটের মাথায় কনসার শট বাঁচান ইংল্যান্ডের গোলরক্ষক জর্ডন পিকফোর্ড। ব্রিল এমবোলো, গ্রানিট জ়াকা, রুবেন ভারগাসেরা সুযোগ তৈরি করছিলেন। অন্য দিকে খুঁজেই পাওয়া যাচ্ছিল না হ্যারি কেনকে। ইংল্যান্ডের অধিনায়ক যে ১০০ শতাংশ ফিট নন, তা তাঁর দৌড় দেখেই বোঝা গেল। তাঁর পা থেকে সহজেই প্রতিপক্ষ ফুটবলারেরা বল কেড়ে নিলেন। বার বার পড়ে গিয়ে ফাউল আদায়ের চেষ্টা করলেন কেন। আগের ম্যাচের নায়ক বেলিংহ্যামকেও এই ম্যাচে নিষ্প্রভ দেখাচ্ছিল। ইংল্যান্ডের হয়ে একমাত্র চোখে পড়ছিল বুকায়ো সাকাকে।
৭৫ মিনিটে গোল করে এগিয়ে যায় সুইৎজ়ারল্যান্ড। ডান প্রান্ত ধরে এনডয়ে বক্সে বল পাঠান। সেই বল বার করতে পারেননি জন স্টোনস। তাঁর পায়ে লেগে বল যায় এমবোলোর কাছে। কাইল ওয়াকারকে ঘাড়ের কাছে নিয়ে গোল করেন তিনি। পিকফোর্ডের কিছু করার ছিল না।
গোল খাওয়ার পরে একসঙ্গে তিনটি পরিবর্তন করেন ইংল্যান্ডের কোচ গ্যারেথ সাউথগেট। তাতে দলের খেলা কিছুটা বদলে দেয়। আক্রমণ বাড়ায় ইংল্যান্ড। তার ফলও মেলে। ৮০ মিনিটের মাথায় একক দক্ষতায় ইংল্যান্ডকে খেলায় ফেরান সাকা। বক্সের বাইরে বল ধরে বাঁ পায়ের শটে গোল করেন তিনি। তবে গোলের ক্ষেত্রে দোষ রয়েছে সুইৎজ়ারল্যান্ডের রক্ষণ ও গোলরক্ষক ইয়ান সোমারের। রক্ষণের কেউ সাকাকে আটকানোর চেষ্টা করেননি। সোমারও গোল বাঁচানোর চেষ্টা করেননি। এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকেন। সাকার পায়ে সমতা ফেরায় ইংল্যান্ড।
নির্ধারিত সময়ে আর গোল করতে পারেনি ইংল্যান্ড ও সুইৎজ়ারল্যান্ড। ফলে খেলা গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। ৯৪ মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে ডান পায়ে জোরালো শট মারেন ডেকলান রাইস। ভাল বাঁচান সোমার। অতিরিক্ত সময়ের প্রথমার্ধে ইংল্যান্ডই বেশি সুযোগ তৈরি করে। কিন্তু গোলের মুখ খুলতে পারেনি তারা।
অতিরিক্ত সময়ের দ্বিতীয়ার্ধে কেনকে তুলে নেন সাউথগেট। ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন ইংরেজ অধিনায়ক। দু’দলই কিছুটা সাবধানি ফুটবল খেলছিলেন। আক্রমণে উঠলেও রক্ষণ মজবুত রাখছিলেন। কারণ, তাঁরা জানতেন এই পরিস্থিতিতে গোল খেলে ফিরতে সমস্যা হবে। ধীরে ধীরে টাইব্রেকারের দিকে এগোচ্ছিল খেলা। ১১৬ মিনিটের মাথায় কর্নার থেকে প্রায় সরাসরি গোল করে ফেলেছিলেন জ়াদরান শাকিরি। তাঁর বাঁ পায়ের শট বারে লেগে ফেরে। শেষ কয়েক মিনিটে আরও দু’টি সুযোগ পায় সুইৎজ়ারল্যান্ড। কিন্তু গোল করতে পারেনি তারা। খেলা গড়ায় টাইব্রেকারে।
টাইব্রেকারে নায়ক হয়ে উঠলেন পিকফোর্ড। সুইৎজ়ারল্যান্ডের হয়ে প্রথম পেনাল্টি নিতে যান ম্যানুয়েল আকাঞ্জি। দুর্বল শট বাঁচিয়ে দেন পিকফোর্ড। ইংল্যান্ডের হয়ে পেনাল্টি নিতে যাওয়া পাঁচ ফুটবলারই গোল করেন। একটি শটও বাঁচাতে পারেননি সোমার। ফলে ৫-৩ গোলে টাইব্রেকারে জেতে ইংল্যান্ড।