অনুশীলনে মোহনবাগানের ফুটবলাররা। ছবি: টুইটার।
এএফসি কাপের স্বপ্ন শেষ হয়ে গিয়েছে ওড়িশা এফসি-র কাছে ঘরের মাঠে পাঁচ গোল খেয়ে। কলকাতা লিগের ডার্বিতে আইএফএ-কে দায়ী করে বৃহস্পতিবার দল নামানো হয়নি। গত কয়েক দিন মোহনবাগানের কাছে বেশ ঘটনাবহুলই কেটেছে। এএফসি কাপ বা কলকাতা লিগ ভুলে মোহনবাগানের নজর আবার আইএসএলে। শনিবার হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে অ্যাওয়ে ম্যাচে খেলতে নামছে তারা।
এক মাস পরে আইএসএলে নামছে মোহনবাগান। এর আগে চারটি ম্যাচের চারটিতেই জিতেছে তারা। পয়েন্টের বিচারে রয়েছে তৃতীয় স্থানে। শীর্ষে থাকা কেরলের পয়েন্ট ৮ ম্যাচে ১৭। অর্থাৎ মোহনবাগান পরের দু’টি ম্যাচে জিতলেই কেরলকে টপকে যাবে। সব ম্যাচে জিতলে শীর্ষস্থানে বাকিদের থেকে অনেকটাই এগিয়ে থাকবে। তাই কোচ জুয়ান ফেরান্দোর লক্ষ্য আইএসএলে মনঃসংযোগ করাই।
গত মাসে আইএসএলে মাত্র একটি ম্যাচ খেলেছে মোহনবাগান। ডিসেম্বরে তাদের ছ’টি ম্যাচ রয়েছে। অর্থাৎ ঠাসা সূচি। তবে মোহনবাগানের কাছে চিন্তার কারণ হল, হঠাৎ চোট-আঘাতে জর্জরিত হয়ে পড়ায় এবং কয়েক জন নির্ভরযোগ্য ফুটবলারের পারফরম্যান্সের ধারাবাহিকতা না থাকায় তাদের নিয়ে প্রত্যাশা ক্রমশ নামতে শুরু করেছে।
সম্প্রতি এএফসি কাপের দুই ম্যাচে হারের ফলে তাদের প্রতিযোগিতা থেকে ছিটকে যেতে হয়েছে। এই ধাক্কা সামলে সবুজ-মেরুন শিবির আইএসএলে সাফল্যের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারবে কি না, সেটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। হায়দরাবাদে উড়ে যাওয়ার আগে মোহনবাগানের কোচ ফেরান্দোকেও এই প্রশ্ন করা হয়। তিনি বলেন, “আমরা পেশাদার। সামনের দিকে তাকাতে ভালবাসি। যা হয়েছে তা নিয়ে বেশি কথা বলে লাভ নেই। এএফসি কাপে ব্যর্থতা খুবই হতাশাজনক। আমাদের সবারই মন খারাপ। এখন আমাদের সামনে হায়দরাবাদকে হারিয়ে তিন পয়েন্ট জেতা ছাড়া আর কোনও লক্ষ্য নেই।”
মরশুমের শুরুতেই দুঃসংবাদ আসে মোহনবাগান শিবিরে। আশিক কুরুনিয়ন ভারতীয় দলের হয়ে খেলতে গিয়ে চোট পেয়ে কার্যত সারা মরশুমের জন্যই ছিটকে যান। তখন থেকেই শুরু মোহনবাগানের দুঃসময়। আশিকের পর চোট পান আনোয়ার আলিও। তিনিও কবে মাঠে ফিরবেন কেউ নিশ্চিত নন। ফর্মে ফিরতে থাকা মনবীর সিংহও চোট পেয়ে ছিটকে যান। অস্ট্রেলীয় স্ট্রাইকার দিমিত্রি পেত্রাতোসও চোটের তালিকায় নাম লেখান। সব মিলিয়ে প্রথম দলের চার জন ফুটবলারকে পাচ্ছে না সবুজ-মেরুন শিবির।
দলের চোট-আঘাত সমস্যা নিয়ে জানতে চাইলে ফেরান্দো বলেছেন, “যে খেলোয়াড়েরা সুস্থ তাদের নিয়েই পরিকল্পনা করছি। চোট-আঘাত ফুটবলে হয়েই থাকে। কোনও এক জন-দু’জনের নাম নিয়ে ভাবছি না। আমরা একটা দল হিসেবে কাজ করি। কখনও সফল হই, কখনও ব্যর্থতা আসে। তবে গত দুটো ম্যাচের পারফরম্যান্সে আমি হতাশ। দিমিত্রির জন্য আরও দু’দিন অপেক্ষা করব। কারা খেলার অবস্থায় আছে বা কারা নেই, এর ব্যাখ্যা এখনই দেওয়া কঠিন। খেলা শুরু হওয়ার ২-৩ ঘণ্টা আগে পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয় আমাদের।”
মোহনবাগানের সবচেয়ে বড় সুবিধা হল, চলতি মরসুমে দুর্বল হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে খেলতে নামছে তারা। ৭টি ম্যাচ খেলে হায়দরাবাদ এখনও জেতেনি। পয়েন্ট তালিকায় সবার শেষে রয়েছে। তবু হায়দরাবাদকে সমীহ করছেন ফেরান্দো। তিনি বলেছেন, “কেরলের বিরুদ্ধে হায়দরাবাদ খুবই ভাল খেলেছে। একটা ছোট্ট ভুলের জন্য একটা গোল খায়। চেন্নাইয়িনের বিরুদ্ধে ঘরের মাঠে ওরা ম্যাচ জেতার প্রচুর সুযোগ পেয়েছিল। গত দুটো ম্যাচে ওরা হয়তো খুব সহজ কোনও সুযোগ পায়নি। তবে ওদের ভাল দল এবং ভাল খেলছে। ফলে ম্যাচটা বোধহয় আমাদের পক্ষে কঠিন হবে। এই লিগে অ্যাওয়ে ম্যাচ সব সময়ই কঠিন।”
মোহনবাগান দলে হঠাৎই গোল করার লোকের অভাব দেখা দিচ্ছে। গত দু’ম্যাচে সবুজ-মেরুন বাহিনী সাত গোল খেয়েছে। দিয়েছে মাত্র তিন গোল। জেসন কামিংস, আর্মান্দো সাদিকুরা দলকে সে ভাবে সাহায্য করতে পারছেন না। লিস্টন কোলাসোর পারফরম্যান্সে ধারাবাহিকতা নেই। সাহাল সামাদও একই রকম। ব্যক্তিনির্ভর হতে রাজি নন সবুজ-মেরুন কোচ। বলেছেন, “কখনওই কোনও একজনের ওপর দায়িত্ব থাকে না। আমরা আক্রমণে জায়গা তৈরি করছি। দলের স্ট্রাইকারের প্রথম কাজই হল জায়গা তৈরি করে তাকে কাজে লাগিয়ে আক্রমণ করা। এই কাজটাই সবচেয়ে জরুরি। কে গোল করল, সেটা কিন্তু বড় কথা নয়।”