মোহনবাগানের কোচ হোসে মোলিনা। — ফাইল চিত্র।
শনিবার মহমেডান ম্যাচ শুরু হওয়ার আগে সমর্থকদের মধ্যে একটা ফিসফাস শোনা যাচ্ছিল। তাঁরা বলছিলেন, এই ম্যাচ হারলে কলকাতার পুজো দেখা হবে না কোচ হোসে মোলিনার। সেই আশঙ্কা দূর করে প্রথম ৪৫ মিনিটেই নিজের চাকরি টিকিয়ে ফেলেন স্পেনীয় কোচ। মাঠে তাঁর ছেলেরা ফুল ফোটাবেন এটা অতি বড় সমর্থকও ভাবতে পারেননি। তবে ম্যাচ জিতেও মোলিনা জানালেন, কলকাতা ডার্বিতে ইস্টবেঙ্গলের মুখোমুখি হওয়ার আগে অনেক বিষয়ে উন্নতি করতে হবে তাঁদের। অন্য দিকে মহমেডানের কোচ জানালেন, সব বিভাগেই মোহনবাগানের থেকে পিছিয়ে ছিলেন তাঁরা।
দল এমন ভাবে জয়ে ফেরায় স্বাভাবিক ভাবেই খুশি মোলিনা। শনিবার যুবভারতীতে গ্রেগ স্টুয়ার্ট ও জেমি ম্যাকলারেনের বোঝাপড়ায় মোহনবাগানের আক্রমণে আমূল পরিবর্তন লক্ষ করা গিয়েছে। আট মিনিটের মাথায় গোল করে দলকে এগিয়ে দেন অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপার ম্যাকলারেন। ৩১ মিনিটের মাথায় ব্যবধান বাড়ান শুভাশিস বসু এবং ৩৬ মিনিটের মাথায় গোল করে জয় নিশ্চিত করে ফেলেন স্টুয়ার্ট।
যে পরিমাণ গোলের সুযোগ পেয়েছিল মোহনবাগান সেগুলি কাজে লাগাতে পারলে অনেক বেশি ব্যবধানে জিততে পারত তারা। মোলিনাও সে রকমই মনে করেন। ম্যাচের পর সাংবাদিক বৈঠকে তিনি বলেছেন, “পুরো দলই ভাল খেলেছে। মহমেডান আমাদের চাপে ফেলার চেষ্টা করেছিল। তবে রক্ষণে দ্রুত বল কেড়ে নিয়েছে আমাদের ছেলেরা। বল নিজেদের দখলে রেখে দ্রুত আক্রমণেও উঠেছি আমরা। তিন গোল করেছি। আরও গোল করতে পারতাম।”
মহমেডানের বিরুদ্ধে ১৮টি গোলের সুযোগ তৈরি করেছিল মোহনবাগান। সারা ম্যাচে ১২টি শট গোলে রেখেছিল সবুজ-মেরুন বাহিনি। তবে প্রতিপক্ষকে একটির বেশি শট গোলে রাখতে দেয়নি তারা। গোলের সুযোগ নষ্ট নিয়ে প্রশ্ন উঠলে মোলিনা বলেন, “সুযোগ তৈরি করাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অনেক গোলের সুযোগ তৈরি করতে পেরেছি। সুযোগ তৈরি করলেও কখনও সাফল্য পাওয়া যায়। কখনও পাওয়া যায় না। আসল কথা হল আমরা ভাল খেলেছি। তবে আমার মনে হয় আরও ভাল খেলতে হবে। যতটা পারব ততটাই উন্নতি করার চেষ্টা করব যাতে দলকে আরও উন্নত করে তোলা যায়।”
মহমেডানের কোচ আন্দ্রে চেরনিশভ মেনে নিয়েছেন যোগ্য দলের কাছেই হেরেছে তাঁর দল। মানের দিক থেকে মোহনবাগানের চেয়ে তাঁরা অনেক পিছিয়ে রয়েছেন সেটাও উল্লেখ করেছেন। চের্নিশভ বলেন, “আইএসএলের আসল ক্ষমতা বুঝিয়ে দিল মোহনবাগান। ওরা খুবই ভাল খেলেছে। অনেক ভাল ভাল খেলোয়াড় আছে। যদিও আমার দল খারাপ এ কথা বলব না। আমরা চেষ্টা করেছি। লড়াই করেছি। কিন্তু আমাদের সঙ্গে ওদের খেলোয়াড়দের মানের ফারাক অনেকটাই। ফুটবলে এমন হতেই পারে। মোহনবাগানের মতো শক্তিশালী দলের বিরুদ্ধে খেলতে নামলে তো বটেই।”
শনিবারের ম্যাচ থেকে তাঁরা যে অনেক কিছু শিখেছেন সেটাও মেনে নিয়েছেন রুশ কোচ। বলেন, “সব দিক থেকেই আমাদের উন্নতি করতে হবে। আমাদের আরও শক্তিশালী হতে হবে এবং পারফরম্যান্সের মানও বাড়াতে হবে। বল নিয়ে আমাদের আরও দ্রুত খেলতে হবে। এই ম্যাচে এগুলোই শিখলাম আমরা। ফিটনেসের দিক থেকে আরও উন্নতি করতে হবে। হয়তো এই ম্যাচে শারীরিক দিক থেকে আমরা সঠিক জায়গায় ছিলাম না।”
তিন গোলে হেরেও মহমেডানের পারফরম্যান্সে হতাশ নন কোচ। হারের পর তাঁর দলের ফুটবলার আলেক্সিস গোমেজ়ের পারফরম্যান্স এবং দল বাছাই নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। তবে একা গোমেজ়ের জন্য দল হেরেছে মানতে রাজি চাইলেন না তিনি। বলেন, “প্রথম তিন ম্যাচে আলেক্সিস ভাল খেলেছিল। এক দিন পারফরম্যান্স ভাল না হওয়ার কারণেই যে আমরা হারলাম তা নয়। হয়তো প্রথম কয়েকটা ম্যাচে প্রতিপক্ষ দল নিজেদের সেরাটা দিতে পারেনি। হয়তো আমরা আই লিগ থেকে উঠে এসেছি বলে ওরা তেমন গুরুত্ব দেয়নি। এখন দলগুলো নিশ্চয়ই বুঝতে পারছে মহমেডান ভাল দল। সেই জন্য গুরুত্ব দিচ্ছে। দল বাছাইয়ে কোনও ভুল হয়েছে বলে মনে হয় না। এই খেলোয়াড়রাই তো গত ম্যাচে জিতেছিল। আমার কোনও অভিযোগ নেই।”