এমবাপেকে মনে করালেন পেত্রাতোস। এমবাপে ট্রফি না পেলেও পেত্রাতোস পেলেন। ছবি: সংগৃহীত
ফাইনালের মতো মঞ্চে জোড়া গোল। তার পরেই টাইব্রেকারেও গোল করে দলকে জেতালেন। মোহনবাগানের দিমিত্রি পেত্রাতোস যেন হয়ে কাতার বিশ্বকাপ ফাইনালের কিলিয়ান এমবাপেকে মনে করিয়ে দিলেন। সেই ম্যাচে হ্যাটট্রিক এবং টাইব্রেকারে গোল করেছিলেন ফ্রান্সের তারকা। পেত্রাতোস হ্যাটট্রিক না করলেও দু’টি গোল এবং টাইব্রেকারে সাফল্য পেলেন। তবে এমবাপের সঙ্গে পেত্রাতোসের তফাত একটাই, বিশ্বকাপ এমবাপের হাতে ওঠেনি। কিন্তু পেত্রাতোস আইএসএল ট্রফি জিতেই মাঠ ছাড়লেন।
রয় কৃষ্ণকে মোহনবাগান ছেড়ে দেওয়ার পরে আপামর মোহনবাগান সমর্থকদের প্রশ্ন ছিল, গোল করবেন কে? সেই সময় ফেরান্দো বলেছিলেন, তাঁর দলে নির্দিষ্ট করে গোল করার কেউ নেই। দায়িত্ব নিতে হবে সবাইকেই। কার্যক্ষেত্রে দেখা গেল, ফেরান্দো যাঁদের উপরে ভরসা করেছিলেন, তাঁরা প্রত্যেকেই ডোবালেন। মনবীর সিংহ দশটা সুযোগ পেলে একটা কাজে লাগালেন। লিস্টন কোলাসো ছিলেন গত বারের ছায়ামাত্র। তাঁকে বসিয়ে আশিককে প্রতি ম্যাচে খেলিয়েছেন ফেরান্দো।
বেশি দেরি না করে মরসুমের শুরুতেই অস্ট্রেলিয়া থেকে পেত্রাতোসকে উড়িয়ে এনেছিলেন ফেরান্দো। এই ফুটবলারের নামই কেউ শোনেননি আগে। শুধু জানা ছিল, তিনি ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়া দলে ছিলেন। কোনও ম্যাচে খেলেননি। ইস্টবেঙ্গলও সেই সময় পাল্টা জর্ডান ও’ডোহার্টিকে অস্ট্রেলিয়া থেকে নিয়ে আসে।
প্রথম দিকে পেত্রাতোসকে দেখে বোঝা যায়নি, তাঁর কাছে মরসুমটা এত ভাল যেতে চলেছে। প্রথম দিকে ভারতের আবহাওয়া এবং ফুটবলের সঙ্গে ধাতস্থ হতে সময় নেন। ধীরে ধীরে তাঁর আসল রূপ বেরোতে থাকে। ডার্বিতে গোল করে রাতারাতি সমর্থকদের নয়নের মণি হয়ে ওঠেন। লিস্টন, মনবীররা খেলতে না পারায় সমর্থকদের হৃদয়ের আরও কাছাকাছি চলে আসেন পেত্রাতোস।
ফাইনালে খেলতে নামার আগে নিজের চুলের রং পাল্টে ফেলেছিলেন। প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, ট্রফি নিয়েই ফিরবেন। সেই প্রতিশ্রুতি রাখলেন অস্ট্রেলিয়ার ফুটবলার। ম্যাচের হয়ে যাওয়ার পরেও রীতিমতো উত্তেজনায় ফুটছিলেন। তার ফাঁকেই বললেন, “খুব কঠিন ম্যাচ খেললাম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমরা লড়াই করেছি। সবাই দেখেছে যে এই ট্রফি কতটা দরকার ছিল আমাদের। আজ আমরা জিতলাম। খুব ভাল লাগছে। আপাতত মুহূর্তটা উপভোগ করতে চাই ভাল করে। তার পরে বিরতি নিয়ে পরের মরসুমের জন্যে শক্তিশালী হয়ে ফিরতে চাই।”
মোহনবাগানের গোটা শিবিরকেই অত্যন্ত তৃপ্ত লেগেছে। অধিনায়ক প্রীতম কোটালও খুশি। তাঁর কথায়, “যে ভাবে মরসুমটা শুরু হয়েছিল আমাদের কাছে, তাতে এই ট্রফি জয় আমাদের কাছে খুব, খুব বিশেষ একটা অনুভূতির। গোটাটাই দলগত প্রচেষ্টার কারণে সম্ভব হয়েছে। প্রত্যেকে দারুণ খেলেছে।”
কোচ জুয়ান ফেরান্দোর মুখেও সেই পরিবারের কথা। বললেন, “প্রচণ্ড খুশি লাগছে। মোহনবাগান একটা পরিবারের মতো। এখন প্রত্যেকেই খুশি। সবার পিছনেই পরিবারের অবদান রয়েছে। আগেই বলেছি, দীপাবলি বা হোলির মতো অনুষ্ঠানে কেউ পরিবারের সঙ্গে আনন্দে শামিল হতে পারেনি। তা ছাড়া গোটা মরসুম ধরে চোট-আঘাত সমস্যা আমাদের ভুগিয়েছে। কিন্তু কেউ হাল ছাড়েনি। প্রত্যেকে অসাধারণ খেলেছে।”