অস্ত্র: লাল-হলুদ আক্রমণের ভরসা পেরোসেভিচ। টুইটার
শনিবার আইএসএলের ফিরতি ডার্বিতে এটিকে-মোহনবাগানের আক্রমণ ঝড় সামলানোর শক্তি কি রয়েছে এসসি ইস্টবেঙ্গলের? পরিসংখ্যান কিন্তু লাল-হলুদ সমর্থকদের রক্তচাপ কয়েকগুন বাড়িয়ে দেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট।
অষ্টম আইএসএলে এখনও পর্যন্ত ১৩টি ম্যাচ খেলেছে ইস্টবেঙ্গল। জিতেছে একটিতে। হার ও ড্র ছ’টি করে ম্যাচে। গোল খেয়েছে ২৫টি! অর্থাৎ ম্যাচ প্রতি গড়ে ১.৯২টি গোল খেয়েছে এসসি ইস্টবেঙ্গল। চলতি আইএসএলে এখন পর্যন্ত সব চেয়ে বেশি গোল খেয়েছে নর্থ ইস্ট ইউনাইটেড এফসি (২৮)। ফ্রানিয়ো পর্চে, আদিল খানরা রয়েছেন দ্বিতীয় স্থানে।
ম্যানুয়েল দিয়াস, রেনেডি সিংহ থেকে মারিয়ো রিভেরা— ইস্টবেঙ্গলের কোচের পদে যখন যিনি থেকেছেন, জানিয়েছেন রক্ষণ মজবুত করে খেলাই প্রধান লক্ষ্য। প্রশ্ন উঠছে তা হলে এত গোল কেন খাচ্ছে মশালবাহিনী? কোথায় সমস্যা? ভারতীয় দল ও ইস্টবেঙ্গলের প্রাক্তন ডিফেন্ডার তরুণ দের পর্যবেক্ষণ, ‘‘মরসুমের শুরু থেকেই দেখছি, ইস্টবেঙ্গল ডিফেন্ডাররা খেলার ব্যাকরণই জানে না।’’ কেন? লাল-হলুদের প্রাক্তন অধিনায়কের ব্যাখ্যা, ‘‘ডিফেন্ডারদের প্রধান কাজই হল বিপক্ষের ফুটবলারদের বল নিয়ে ঘুরতে না দেওয়া। প্রতিপক্ষের আক্রমণভাগে যারা খেলছে, তাদের শরীর দিয়ে আড়াল না করে ওরা পাশে দাঁড়িয়ে থাকছে। বিপক্ষের আক্রমণভাগের ফুটবলাররা যদি শক্তিশালী ও দক্ষ হয়, পাশে দাঁড়িয়ে আটকানো কখনওই সম্ভব নয়।’’ তিনি আরও বললেন, ‘‘স্টপার বা সাইডব্যাকের কাজ হচ্ছে বিপক্ষের ফুটবলারদের বাধ্য করা মাঠের প্রান্তের দিকে বল নিয়ে যেতে। অথচ ইস্টবেঙ্গলের রক্ষণে যারা খেলছে, তারা ঠিক উল্টোটা করেছে। ডিফেন্ডারদের দাঁড়ানো উচিত কোণাকুনি ভাবে এক পায়ের উপরে ভর করে। ইস্টবেঙ্গল রক্ষণের ফুটবলারদের সেই প্রাথমিক জ্ঞানটাও নেই। ফলে বিপক্ষের ফুটবলাররা একটা ‘ফল্স’ দিলেই ওরা কেটে যাচ্ছে। খুলে যাচ্ছে গোলের মুখ। এই কারণেই এত গোল খাচ্ছে।’’
চলতি আইএসএলে প্রথম পর্বের ডার্বির প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তরুণ বলে চললেন, ‘‘ডান প্রান্ত দিয়ে বল নিয়ে উঠে মোহনবাগানের প্রীতম কোটাল যখন মাইনাস করেছিল, পেনাল্টি বক্সের বাইরে রয় কৃষ্ণ ফাঁকায় দাঁড়িয়েছিল। ইস্টবেঙ্গলের ডিফেন্ডাররা ছিল ছ’গজ পেনাল্টি বক্সের মধ্যে। অবিশ্বাস্য! আরও ভয়াবহ হল, খেলার সময় ওরা কেউ-ই ডান, বাঁ এবং পিছনে বিপক্ষের কেউ রয়েছে কি না দেখে না। শুধু তাই নয়। প্রতিপক্ষের কেউ শট নিলে মুখ ঘুরিয়ে নেয়। প্রান্ত দিয়ে ভেসে আসা বলও বিপন্মুক্ত করতে পারে না ঠিক মতো। আমার মতে ব্যতিক্রম হীরা মণ্ডল। ও একাই যা একটু খেলছে।’’
আর এক প্রাক্তন তারকা সুব্রত ভট্টাচার্য বলছিলেন, ‘‘বিপক্ষের আক্রমণকে সব সময় প্রথম বাধা দিতে হবে মাঝমাঠে। যাতে রক্ষণের ফুটবলাররা নিজেদের গুছিয়ে নিতে পারে। ইস্টবেঙ্গল দলে এ বার মাঝমাঠে বাধা দেওয়ার কেউ নেই। ফলে রক্ষণের উপরে বাড়তি চাপ পড়ছে। তা ছাড়া ইস্টবেঙ্গলের ডিফেন্ডারদের খেলা দেখে মনে হচ্ছে, ওরা জানেই না বিপক্ষের আক্রমণ থামানোর জন্য কোথায় দাঁড়াতে হয়। ’’
শনিবারের ডার্বিতে কী হবে? হতাশ তরুণ বললেন, ‘‘ইস্টবেঙ্গলের দলটাই ভুলে ভরা। আইএসএলে বিদেশিরাই পার্থক্য গড়ে দেয়। তাদের সাহায্য করে ভারতীয় ফুটবলাররা। ইস্টবেঙ্গলে তা চোখে পড়েনি।’’ আরও বললেন, ‘‘রক্ষণাত্মক রণনীতি নিয়ে ৯০ মিনিট বিপক্ষের গোল করা আটকানো কঠিন। তার উপরে প্রতিপক্ষ যদি মোহনবাগানের মতো দুর্দান্ত দল হয় তো বিপর্যয় অবশ্যম্ভাবী। কারণ গোলরক্ষক অরিন্দম ভট্টাচার্যের উপরেও খুব একটা ভরসা করতে পারছি না। বিপক্ষের চাপ বেশি থাকলে প্রতিআক্রমণেও উঠতে পারবে না। তাই ডার্বিতে ইস্টবেঙ্গলকে নিয়ে খুব একটা আশাবাদী নই।’’ তরুণের সঙ্গে একমত সুব্রতও। বলে দিলেন, ‘‘ইস্টবেঙ্গলের যা হাল, মোহনবাগানের আক্রমণভাগের ঝড় থামানো কঠিন।’’
প্রাক্তন ফুটবলাররা ডার্বিতে মোহনবাগানকে এগিয়ে রাখলেও হাল ছাড়তে নারাজ মারিয়ো। ফুটবলারদের সঙ্গে আলাদা ভাবে কথা বলেছেন তিনি। জানা গিয়েছে, ফুটবলারদের মারিয়ো বলেছেন, ‘‘গ্যালারিতে না থাকলেও লাল-হলুদ সমর্থকেরা তোমাদের খেলা দেখবেন অনেক আশা নিয়ে। তাঁদের মুখে হাসি ফুটিয়ো।’’ মাঝমাঠে মোহনবাগানের ছন্দ নষ্ট করতে ফ্রান্সিসকো সোতাকে বিশেষ অনুশীলনও করিয়েছেন তিনি। বৃহস্পতিবারই রাহুল পাসোয়ানকে নথিভুক্ত করল ইস্টবেঙ্গল।