Surajit Sengupta

Surajit Sengupta: খবরটা শোনার পর থেকে ভাবতেই পারছি না: সুরজিৎ-প্রয়াণে শোকস্তব্ধ বাংলার ক্রীড়ামহল

বাংলার ফুটবলে আরও এক নক্ষত্রপতন। সুভাষ ভৌমিকের মৃত্যুর কিছু দিনের মধ্যেই প্রয়াত হলেন একই প্রজন্মের তারকা ফুটবলার সুরজিৎ সেনগুপ্ত।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ১৪:৪৮
Share:

প্রয়াত সুরজিৎ ফাইল ছবি

বাংলার ফুটবলে আরও এক নক্ষত্রপতন। সুভাষ ভৌমিকের মৃত্যুর কিছু দিনের মধ্যেই প্রয়াত হলেন একই প্রজন্মের তারকা ফুটবলার সুরজিৎ সেনগুপ্ত। বয়স হয়েছিল ৭১ বছর। বৃহস্পতিবার দুপুর ১টা ৫৪ মিনিটে প্রয়াত হন সুরজিৎ। সুরজিতের প্রয়াণে শোকস্তব্ধ বাংলার ক্রীড়ামহল।

Advertisement

বিদেশ বসু: এত বছর ধরে আমরা একসঙ্গে খেলেছি। ভাবতেই পারছি না এই খবরটা। বিশ্বাসই হচ্ছে না। আমি এই অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করে বোঝাতে পারব না। মানুষ হিসেবে অসামান্য ছিল সুরজিৎ। গত কয়েকদিনে কতগুলো মানুষকে আমরা হারিয়ে ফেললাম। লতা মঙ্গেশকর, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, বাপ্পি লাহিড়ি। তারও আগে আমাদের ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন সুভাষ ভৌমিক। আর এখন সুরজিতও চলে গেল। কী ভাবে এটা মেনে নেব? এতদিন এত স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে আমাদের। বৌদির সঙ্গেও কত ভাল সম্পর্ক ছিল।

সুব্রত ভট্টাচার্য: খবরটা শোনার পর থেকে ভাবতেই পারছি না। ইদানীং ওর ছেলে বা বউমাকে ফোন করতেই ভয় পেতাম। কবে খারাপ খবর শুনতে পাব। সেই সময়টা অবশেষে এসেই গেল। ভাবতেই পারছি না। এত বড় মাপের ফুটবলার ছিল। অথচ ওর চলনে-বলনে কোনওদিন সেটা প্রকাশ পায়নি। ফুটবলাররা কেন এ ভাবে চলে যাচ্ছে এটা নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে এ বার। আমরা কোনও ভাবে সাহায্য করতে পারি কিনা, সেটাও এক বার দেখা উচিত। ছোট বেলা থেকে আমরা একসঙ্গে খেলে আসছি। বড় হয়েছি একসঙ্গে।

Advertisement

প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়: কয়েকদিন ধরেই অসুস্থ ছিল জানতাম। ভাবতেই পারছি না সুরজিৎ চলে গেল। আমরা দু’জনেই দু’জনের খুব কাছের বন্ধু ছিলাম। সব সময় এক সঙ্গে থাকতাম। সুরজিৎ রাইট আউটে খেলত। আমার দাদা পিকে-র পর ময়দানে আমার দেখা সেরা রাইট আউট সুরজিৎ-ই। সুকুমার সমাজপতির প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলছি একথা। দারুণ শিল্পী ফুটবলার ছিল। আলাদা দলে খেললেও আমাদের বন্ধুত্বে প্রভাব পড়েনি কখনও। কারো বিরুদ্ধে কথা বলত না কখনও। ওর মৃতদেহের সামনে আমি দাঁড়াতে পারব না।

মেহতাব হোসেন: বাংলার ফুটবলের জন্য খুব খারাপ খবর। বাংলার ফুটবলে ওঁর অবদান ভোলার নয়। সবসময় উৎসাহ দিতেন। পরামর্শ দিতেন। ইতিবাচক থাকার কথা বলতেন সবসময়। বাংলার ফুটবলকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা বলতেন বার বার। সকলের সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল ওঁর।

ভাস্কর গঙ্গোপাধ্যায়: সুরজিতদা আমার কাছে অন্য ধরনের এক মানুষ ছিলেন। দাদার মতো ছিলেন। পরিবারের সঙ্গে সম্পর্কও খুব ভাল ছিল। আশা করেছিলাম এই যুদ্ধে লড়ে জিতবেন তিনি। কিন্তু শেষরক্ষা হল না। বড় খেলোয়াড় অনেকেই হয়, বড় মাপের মানুষ সবাই হতে পারে না। সুরজিৎ বড় মাপের, বড় মনের মানুষ ছিলেন। নিজের দুঃসময়ে ইস্টবেঙ্গল ক্লাবে যোগ দিয়েছিলাম। কিন্তু উনি সেটা কোনও দিন বুঝতেই দেননি। শুরু থেকেই আপন করে নিয়েছিলেন। এ ধরনের মানুষের চলে যাওয়া অত্যন্ত বেদনাদায়ক।

গৌতম সরকার: ফুটবলে শিল্পী অনেকেই হয়। কিন্তু শিল্পকে ফুটিয়ে তোলার পাশাপাশি আদর্শ টিমম্যান হতে পারে ক’জন? সুরজিৎ ছিলেন সেই ধরনের ফুটবলার। অসাধারণ উইং প্লেয়ার ছিলেন। ওর সঙ্গে কত স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে। মানতেই পারছি না এই খবরটা। এ রকম ফুটবলার বারবার আসে না। দেশের বাইরেও ওর পরিচিতি রয়েছে।

মানস ভট্টাচার্য: আমরা সকলে মিলে গত কয়েকদিনে অনেক চেষ্টা করেছি ওকে সুস্থ করে তোলার। রাজ্য সরকারও এগিয়ে এসেছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমরা হেরে গেলাম। প্রথম বার ১৯৭৬ সালে ওর সঙ্গে একসঙ্গে খেলি। এরপর বাংলার হয়েও খেলেছি। এই খবরটা সত্যি বিশ্বাস করতে পারছি না। অল্প সময়ে ছেড়ে চলে গেলেন উনি। বাংলার ফুটবলে গভীর শূন্যতা তৈরি হল।

সত্যজিৎ চট্টোপাধ্যায়: এত কাছের লোক ছিলেন উনি। ওঁকে দেখেই বড় হয়েছি। ফুটবল আকাশের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র ছিলেন উনি। একসঙ্গে কোনওদিন খেলিনি। কিন্তু তা সত্ত্বেও কত সুন্দর বন্ধুত্ব তৈরি হয়ে গিয়েছিল ওঁর সঙ্গে। বয়সে অনেক ছোট ছিলাম। কিন্তু সম্পর্কটা ছিল সমবয়সীদের মতোই। রোজই ওঁর ছেলের সঙ্গে কথা হত। কিছুদিন আগে ওঁর চিকিৎসা নিয়ে বৈঠক হয়েছিল। সেখানেও ছিলাম। মনাদার (মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য) ছেলের বিয়েতে দেখা হয়েছিল। কত গল্প হল ওঁর সঙ্গে। এক বার বালি-তে এক প্রতিযোগিতায় ওঁর খেলা দেখি। সে দিনই ওঁর খেলার প্রেমে পড়ে গিয়েছিলাম।

কম্পটন দত্ত: আমরা সবাই গত ২ বছরে করোনায় বিপর্যস্ত। প্রত্যেকেই প্রতি মুহূর্তেই ভয়ে ভয়ে রয়েছে। আজ সেই করোনাই আমাদের বিরাট বড় একটা আঘাত দিয়ে গেল। কিছুদিন আগে সুভাষ ভৌমিক চলে গেল। ভেবেছিলাম সুরজিৎদা হয়তো লড়াই করে বাড়ি ফিরবে। সেটাও হল না। এত ভদ্র মানুষ খুব কমই দেখেছি। আমরা বয়সে ছোট ছিলাম। সারাজীবন আমাদের গাইড করেছে। ভাল খেলতে প্রতি মুহূর্তে উৎসাহিত করেছে। বাংলা হোক ভারতীয় দল, একসঙ্গেই খেলেছি। জুনিয়র বলে কোনওদিন ছোট করে দেখেননি।

দীপেন্দু বিশ্বাস: চিন্ময়দা (রায়), সুভাষ (ভৌমিক) স্যর এবং সুরজিৎদা। পরপর বাংলার ফুটবলের তিন নক্ষত্রের পতন হল। এটা মেনে নেওয়া যায় না কোনও ভাবেই। আমাদের ডেকে নিয়ে কথা বলতেন। মূল্যবান উপদেশ দিতেন। কখনও ছোট করে দেখেননি।

এটিকে মোহনবাগান: সুরজিৎ সেনগুপ্তের প্রয়াণে আমরা গভীর ভাবে শোকাহত। ওঁর দক্ষতা এবং পায়ের কাজ বছরের পর বছর ফুটবল-সমর্থকদের আন্দোলিত করেছিল। কিংবদন্তি সারাজীবন আমাদের হৃদয়ে থাকবেন।

এসসি ইস্টবেঙ্গল: ক্লাবের কিংবদন্তি সুরজিৎ সেনগুপ্তের প্রয়াণে আমরা গভীর শোকাহত। ওঁর পরিবারের প্রতি সমবেদনা থাকল। লাল-হলুদ রংয়ে আপনি সারাজীবন বেঁচে থাকবেন।

প্রফুল পটেল (এআইএফএফ সভাপতি): ভারতীয় ফুটবলের ইতিহাসের অন্যতম সেরা উইঙ্গার সুরজিৎদার প্রয়াণের খবর শুনে খুবই খারাপ লাগছে। ভারতীয় ফুটবলে তাঁর অমূল্য অবদান সারাজীবন আমাদের হৃদয়ে থেকে যাবে। ভারতীয় ফুটবল আরও শূন্য হল। ওঁর পরিবারের প্রতি সমবেদনা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement