ডার্বির সেই বিতর্কিত মুহূর্ত। বক্সের মধ্যে মোহনবাগানের আপুইয়ার হাতে বল লাগলেও পেনাল্টি দেননি রেফারি। ছবি: সমাজমাধ্যম।
শনিবার আইএসএল ডার্বিতে রেফারির দু’টি সিদ্ধান্ত নিয়ে এখনও ক্ষোভ কমছে না ইস্টবেঙ্গলের। প্রথমার্ধের শেষ দিকে মোহনবাগান বক্সে হাতে বল লাগে সবুজ-মেরুন ফুটবলার আপুইয়ার। লাল-হলুদ ফুটবলারেরা পেনাল্টির দাবি করলেও রেফারি তা দেননি। ইস্টবেঙ্গলের অভিযোগ, ন্যায্য পেনাল্টি ছিল। দ্বিতীয়ার্ধে ৬১ মিনিটের মাথায় লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়তে হয় ইস্টবেঙ্গলের মিডফিল্ডার শৌভিক চক্রবর্তীকে। সেই সিদ্ধান্তও অন্যায্য বলে দাবি করেছে ইস্টবেঙ্গল। এই দু’টি ঘটনায় কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রী মনসুখ মাণ্ডবীয়ের দ্বারস্থ হতে চলেছে তারা।
শনিবার ম্যাচ শেষে ইস্টবেঙ্গল কোচ অস্কার ব্রুজ়ো পেনাল্টি ও লাল কার্ডের সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। তাঁর দাবি ছিল, বার বার তাঁদের সঙ্গেই এটা হচ্ছে। অন্য কোনও দলকে এই সমস্যায় পড়তে হচ্ছে না। লাল-হলুদ কোচের দাবি সমর্থন করেছিলেন ধারাভাষ্যকার ও বিশেষজ্ঞেরা। কিন্তু সর্বভারতীয় ফুটবলার সংস্থার প্রধান রেফারিং আধিকারিক ট্রেভর কেটল সেই দাবি উড়িয়ে দেন। তিনি বলেন, “ও ভাবে হ্যান্ডবল বোঝা যায় না। বল হাতে লাগলেই সেটা অপরাধ নয়। আমি রেফারিদের পরিষ্কার বলে দিয়েছি কোন কোন ক্ষেত্রে হ্যান্ডবল দিতে হবে।”
কেন ইস্টবেঙ্গলের দাবি খারিজ হয়েছে তার ব্যাখ্যাও দিয়েছেন কেটল। তিনি বলেন, “বল হাতে লাগলে দেখতে হবে হাত ন্যায্য জায়গায় ছিল কি না। যদি ন্যায্য জায়গায় থাকে তা হলে হ্যান্ডবল নয়। ন্যায্য জায়গায় না থাকলে তখন হ্যান্ডবল দিতে হবে। আপুইয়ার ক্ষেত্রে ওটা হ্যান্ডবল ছিল না। ওর হাত ন্যায্য জায়গায় ছিল। ও চেয়েছিল হাত সরিয়ে নিতে। হাত দিয়ে ইচ্ছে করে বল আটকায়নি।” কেটল জানিয়েছেন, বাকি রেফারিরাও তাঁর সঙ্গে সহমত।
কেটলের বক্তব্যের পরেও ক্ষোভ কমছে না ইস্টবেঙ্গলের। মঙ্গলবার বিবৃতি দিয়ে ক্লাব জানিয়েছে যে তাদের সঙ্গে বিমাতৃসুলভ আচরণ করা হয়েছে। বেশ কয়েকটি অভিযোগ করেছে ইস্টবেঙ্গল। তার মধ্যে অন্যতম পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ। ক্লাবের অভিযোগ, গত ১০-১২ বছর ধরে তাদের সঙ্গে পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করা হচ্ছে। রেফারিংয়ের মান দিন দিন খারাপ হচ্ছে। ইচ্ছা করেই দলের গুরুত্বপূর্ণ মিডফিল্ডার শৌভিককে প্রথমে অকারণে হলুদ কার্ড দেখানো হয়েছে। সেটি না হলে শৌভিক লাল কার্ড দেখতেন না। ইস্টবেঙ্গলের দাবি, তাদের দুই মিডফিল্ডার সাউল ক্রেসপো ও মাদিহ তালাল ডার্বিতে ছিলেন না। ফলে শৌভিকের উপর ভরসা ছিল। সেই কারণেই শৌভিককে নিশানা করা হয়েছে। পেনাল্টি নিয়ে কেটলের বক্তব্যকে হাস্যকর বলে উল্লেখ করেছে ইস্টবেঙ্গল। এ রকম মন্তব্য করে ভারতীয় ফুটবলকে হাসির খোরাকে পরিণত করা হচ্ছে বলে মত তাদের।
কলকাতার অপর প্রধান মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট বা তার মালিক সঞ্জীব গোয়েন্কার নাম না করলেও পরোক্ষে তাদের উপর প্রভাব খাটানোর অভিযোগ করেছে ইস্টবেঙ্গল। বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, আইএসএলের শুরু থেকে ভারতীয় ফুটবল সংস্থা ‘ওয়ান সিটি ওয়ান টিম’-এর তত্ত্বে বিশ্বাসী ছিল। পরে কলকাতা থেকে আরও দু’টি ক্লাব আইএসএল খেললেও দেখে মনে হচ্ছে সেই তত্ত্ব থেকে সরে আসেনি তারা। তাই একটি ক্লাবকেই বাড়তি সুবিধা দেওয়া হয়েছে। দিনের পর দিন তাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে বলে অভিযোগ করেছে লাল-হলুদ।
আইএসএলে দুই প্রধান খেলা শুরু করার পর থেকে সেই প্রতিযোগিতায় মোট ১০টি ডার্বি হয়েছে। ন’টি ডার্বি জিতেছে মোহনবাগান। একটি ড্র হয়েছে। অর্থাৎ, ইস্টবেঙ্গল একটি ডার্বিও জেতেনি। এই সময়ে ইস্টবেঙ্গল দু’বার মোহনবাগানকে হারিয়েছে। তবে দু’টির একটিও আইএসএলে নয়। একটি সুপার কাপে। অপরটি ডুরান্ড কাপে। অর্থাৎ, আইএসএল কর্তৃপক্ষের দিকেই নিশানা লাল-হলুদের। পাশাপাশি ইস্টবেঙ্গল এও স্পষ্ট করে দিয়েছে যে অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়লেও আইএসএল থেকে সরবে না তারা। এই প্রতিযোগিতায় খেলার মাধ্যমেই তাদের লড়াই চলবে।
তা হলে কেন ভারতীয় ফুটবল সংস্থার কাছে আবেদন করছে না ইস্টবেঙ্গল? তাদের স্পষ্ট জবাব, ভারতীয় ফুটবল সংস্থার উপর তাদের ভরসা নেই। আইএসএল চালায় এফএসডিএল সংস্থা। এটি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। ইস্টবেঙ্গলের অভিযোগ, তারাই ভারতীয় ফুটবলের উপর ছড়ি ঘোরাচ্ছে। পাশাপাশি সংস্থার বন্ধু ব্যবসায়ী গোষ্ঠীদের সুবিধাও করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তাদের। সেই কারণে ফেডারেশনের কাছে না গিয়ে সরাসরি কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে চায় তারা। ভারতীয় ফুটবলের পরিস্থিতি তুলে ধরে মাণ্ডবীয়ের হস্তক্ষেপের দাবি জানাবে লাল-হলুদ। এখন দেখার, এই অভিযোগের পর ভারতীয় ফুটবল সংস্থা জবাব দেয় কি না।