মেসি, এমবাপেদের কারা তৈরি করেছেন? ফাইল ছবি
মাত্র ১২ বছর বয়সে বার্সেলোনার লা মাসিয়া অ্যাকাডেমিতে খুদে ফুটবল শিক্ষার্থী হিসাবে এসেছিলেন লিয়োনেল মেসি। পেশাদার ফুটবল জীবন শুরু করেন আরও ছ’বছর পর। তার পর থেকে চলছে তো চলছেই। দীর্ঘ ১৮ বছরের ফুটবলজীবনে বহু কোচের অধীনে খেলেছেন মেসি। ক্লাবই হোক বা দেশ, মেসিকে পছন্দ ছিল সব কোচেরই। অন্য দিকে, কিলিয়ান এমবাপের ফুটবলজীবন বছর ছয়েকের বেশি নয়। ১৮ বছর বয়সে খ্যাতির আলোয় আসেন তিনি। তার পর থেকে মাত্র একবারই ক্লাব বদলেছেন। ফলে কোচের সংখ্যাও খুব বেশি নয়। যদিও দু’জনের ফুটবল প্রতিভা প্রশ্নাতীত, নিজ গুণেই তাঁরা সেরা, তবু তাঁদের জীবনে কোচেদের ভূমিকা একেবারে অস্বীকার্য নয়। দুই তারকা ফাইনালে নামার আগে তাঁদের গুরুদের অবদান ফিরে দেখল আনন্দবাজার অনলাইন।
লিয়োনেল মেসি
বার্সেলোনায় মেসির অভিষেক হয় ২০০৬-এ। তার তিন বছর আগে থেকেই কোচ ছিলেন ফ্রাঙ্ক রাইকার্ড। দলও সেই সময়ের সাফল্যের তুঙ্গে। জাভি, ইনিয়েস্তা তো ছিলেনই। তবে তখন বার্সেলোনার আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে রোনাল্ডিনহো। মেসিকে ক্লাবের হয়ে প্রথম গোল করান রোনাল্ডিনহোই। এই জুটি সেই মরসুমে ঝড় তুলেছিল। তবে রাইকার্ডের সঙ্গে ঝামেলার জেরে রোনাল্ডিনহো ক্লাব বদলাতে সেই জুটিতে ছেদ পড়ে। ২০০৮-এ রাইকার্ড সরে যাওয়ার পর আসেন পেপ গুয়ার্দিওলা। সাম্প্রতিক সময়ে বার্সেলোনার সবচেয়ে সফল ম্যানেজার তিনিই।
গুয়ার্দিওলার সময় থেকেই তিকিতাকা ফুটবলের প্রবর্তন। পাসের বন্যা বইয়ে তখন সামনে যে দলই আসত, তাঁকে মাত করে দিত বার্সেলোনা। মেসি ছিলেন সেই দলের হৃৎপিণ্ড। তত দিনে তিনি ক্লাবে নিজের জায়গা পাকা করে ফেলেছেন। জাভি, আন্দ্রে ইনিয়েস্তা, সের্জিয়ো বুস্কেৎসের সঙ্গে জুটি বেঁধে একের পর এক সাফল্য পায় বার্সেলোনা। চার বছরের কোচিং পর্বে ১৪টি ট্রফি পায় তারা। মেসি ছিলেন সেই দলের নয়নের মণি। গুয়ার্দিওলার প্রিয় পাত্র ছিলেন তিনি।
পেপ গুয়ার্দিওলা চলে যাওয়ার পরের দু’বছর খুব একটা ভাল যায়নি বার্সেলোনার কাছে। সহকারী টিটো ভিলানোভাকে ২০১৩-তে কোচ করা হলেও শুধু লা লিগা জেতে বার্সেলোনা। অসুস্থতার কারণে ভিলানোভা সরে যাওয়ার পর মেসির ইচ্ছাতেই আর্জেন্টাইন জেরার্দো মার্তিনোকে কোচ করে আনা হয়। সে বছর সুপারকোপা ছাড়া কিছুই জেতেনি বার্সেলোনা। মার্তিনো বিদায়ের পর আবার সাফল্যের মুখ দেখেন মেসিরা। লুই এনরিকে কোচ হয়ে এসে ফের তিকিতাকা ফুটবল চালু করেন। মেসি ছিলেন তাঁর প্রধান অস্ত্র এবং আক্রমণের কেন্দ্রবিন্দু। তাঁর তিন বছরের কোচিংয়ে ৯টি ট্রফি জেতে বার্সেলোনা।
এনরিকে চলে যাওয়ার পর দুঃসময়ের শুরু। আর্নেস্তো ভালভার্দেকেও আনা হয় কিছুটা মেসির ইচ্ছাতেই। তিনি মেসি ছাড়া কিছুই বুঝতেন না। মেসিকে কেন্দ্র করেই শুরু হত সব আক্রমণ। দলও মেসি নির্ভর হয়ে পড়ে। ভালভার্দের কোচিংয়ের সময়েই জাভি, ইনিয়েস্তা বার্সেলোনা ছাড়েন। স্বর্ণযুগের আরও যাঁরা ছিলেন, তাঁরাও অনেকে অবসর নেন বা অন্য কোথাও চলে যান। তার পরে রোনাল্ড কোমান কোচ হন। সেই মরসুমের শেষেই বার্সেলোনা ছাড়েন মেসি।
দেশের জার্সিতে মেসির অভিষেক হয় হোসে পেকেরম্যানের অধীনে। সেই বছর কোয়ার্টার ফাইনালে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় হয় আর্জেন্টিনার। দু’বছর পর দিয়েগো মারাদোনাকে কোচ হিসাবে পান মেসি। মারাদোনা মেসিকে নিজের ছেলের মতোই দেখতেন। কিন্তু ফুটবল মাঠে সেই সাফল্য ধরা পড়েনি। দেশের জার্সিতে ৯ জন কোচের অধীনে খেলেছেন মেসি। তার মধ্যে আলেসান্দ্রো সাবেয়ার অধীনে ২০১৪-র বিশ্বকাপের ফাইনালে ওঠা ছাড়া আর বলার মতো সাফল্য নেই। সেই তথ্য বদলে দিয়েছেন লিয়োনেল স্কালোনি। এখন দেখার, তাঁর অধীনে আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপ জেতে কিনা।
কিলিয়ান এমবাপে
এমবাপে যখন মোনাকোর হয়ে দুনিয়ার নজর কাড়তে শুরু করেন, তখন কোচ ছিলেন লিয়োনার্দো জার্ডিম। ২০১৭-য় চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনালে ওঠে মোনাকো। সে বার দুর্দান্ত খেলেন এমবাপে। পরের বছরই প্যারিস সঁ জরমঁ তুলে নেয় এমবাপেকে। তখন দায়িত্বে উনাই এমেরি। এর পর একে একে টমাস টুখেল, মৌরিসিয়ো পোচেত্তিনো এবং ক্রিস্টোফ গালতিয়েকে এসেছেন পিএসজি-র কোচ হয়ে। সবার অধীনেই এমবাপেকে নিজেকে ক্রমশ ছাপিয়ে উঠেছেন।
ফ্রান্সে এখনও পর্যন্ত এক জন কোচের অধীনেই খেলেছেন এমবাপে। তিনি দিদিয়ে দেশঁ। ২০১৮-য় তাঁর অধীনে বিশ্বকাপ জিতেছেন। আরও একটি বিশ্বকাপ জেতার দোরগোড়ায়। মাঝের সময়টা নিজেকে আরও ধারালো করে তুলেছেন। এখন তাঁকে প্রথম একাদশে না রাখার দুঃসাহস দেখান না দেশঁ। দ্বিতীয় বার দেশঁর অধীনে বিশ্বকাপে নিজেকে কি অপরাজেয় প্রমাণ করতে পারবেন এমবাপে? সময়ই বলবে।