FIFA World Cup 2022

রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে টাইব্রেকারে নেদারল্যান্ডসকে হারিয়ে সেমিফাইনালে মেসির আর্জেন্টিনা

বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে লিয়োনেল মেসির আর্জেন্টিনা। কোয়ার্টার ফাইনালে নেদারল্যান্ডসকে হারিয়েছেন মেসিরা। ১২০ মিনিটে খেলার ফয়সালা হয়নি। শেষে টাইব্রেকারে জিতে সেমিফাইনালে গেলেন মেসিরা।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০২২ ০৩:২৫
Share:

পেনাল্টি থেকে গোল করলেন মেসি। আর্জেন্টিনার হয়ে বিশ্বকাপে নিজের ১০ নম্বর গোল করলেন লিয়ো। ছবি: রয়টার্স

আর্জেন্টিনা ২ (মোলিনা, মেসি-পেনাল্টি)

Advertisement

নেদারল্যান্ডস ২ (উইঘর্স্ট-২)

টাইব্রেকারে আর্জেন্টিনা ৪-৩ ব্যবধানে জয়ী।

Advertisement

আর্জেন্টিনা-নেদারল্যান্ডস ম্যাচে নাটকের পর নাটক। প্রথমে আর্জেন্টিনা এগোল ২ গোলে। দেখে মনে হচ্ছিল, বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে পৌঁছে গিয়েছেন লিয়োনেল মেসিরা। কিন্তু শেষ দিকে ২ গোল শোধ করল নেদারল্যান্ডস। খেলা গড়াল অতিরিক্ত সময়ে। সেখানেও হল না গোল। শেষ পর্যন্ত টাইব্রেকারে হল ম্যাচের ফয়সালা। নেদারল্যান্ডসকে ৪-৩ ব্যবধানে হারিয়ে সেমিফাইনালে গেলেন মেসিরা।

তাঁকে রোখার অনেক চেষ্টা করেছিলেন নেদারল্যান্ডসের কোচ লুই ফান হাল। তাঁর জন্য জোনাল মার্কিং রেখেছিলেন। মেসি বল ধরলেই ছেঁকে ধরছিলেন তিন থেকে চার জন কমলা জার্সি পরা ফুটবলাররা। কিন্তু তাঁকে আটকাতে পারলেন না ফান হাল। জোনাল মার্কিং ভেঙে বেরিয়ে গোল করালেন। আবার পেনাল্টি থেকে গোল করলেন।

খেলার শুরু থেকে দু’দলই রক্ষণ মজবুত রেখে আক্রমণে ওঠার চেষ্টা করছিল। ছোট ছোট পাস খেলছিল দু’দল। নেদারল্যান্ডস দু’প্রান্ত ব্যবহার করে আক্রমণে উঠছিল। প্রথম ২০ মিনিটে দু’বার আর্জেন্টিনার বক্সে ঢুকে পড়েন মেম্ফিস দেপাই, কোডি গাকপোরা। কিন্তু খুব একটা সমস্যায় পড়তে হয়নি এমিলিয়ানো মার্তিনেসকে। অন্য দিকে থ্রু বলে আক্রমণে ওঠার চেষ্টা করছিল আর্জেন্টিনা। মেসির পায়ে বল পড়লেই অন্তত তিন জন মিলে তাঁকে আটকানোর চেষ্টা করছিলেন। তার মধ্যেই এক বার ছিটকে বেরিয়ে দূর থেকে শট মারেন মেসি। কিন্তু গোল উঁচিয়ে সেই বল বেরিয়ে যায়।

দু’দলেরই খেলা তৈরি হচ্ছিল নিজেদের রক্ষণ থেকে। নিজেদের মধ্যে ছোট ছোট পাসে বলের নিয়ন্ত্রণ রাখার চেষ্টা করছিলেন ফুটবলাররা। তার পরে আক্রমণে উঠছিলেন। কিন্তু প্রতিপক্ষের রক্ষণ জমাট থাকায় গোলের সুযোগ তৈরি হচ্ছিল না। মাঝে মধ্যে খেলার গতি খুব মন্থর হয়ে যাচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত মেসির জাদুতে ৩৪ মিনিটের মাথায় এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনা। প্রায় ৩০ গজ দূরে বল ধরেন মেসি। ঘাড়ের কাছে চার জন ডিফেন্ডারকে নিয়ে সামনের দিকে এগোন। তার পর কোনাকুনি বল বাড়ান বক্সে থাকা মোলিনার দিকে। বল ধরে আগুয়ান গোলরক্ষকের ডান দিক থেকে বল জালে জড়িয়ে দেন মোলিনা।

প্রথমার্ধে আর্জেন্টিনা আরও দু’বার নেদারল্যান্ডসের গোলের কাছে পৌঁছে যায়। মেসির ডান পায়ের শট গোলরক্ষক আটকে দেন। অন্য দিকে প্রথমার্ধের শেষ দিকে তিনটি ফ্রিকিক পায় নেদারল্যান্ডস। কিন্তু সেখান থেকে ফসল তুলতে পারেনি তারা। ফলে প্রথমার্ধে ১-০ গোলে এগিয়ে সাজঘরে যায় আর্জেন্টিনা।

দ্বিতীয়ার্ধে অনেক বেশি আক্রমণাত্মক খেলা শুরু করে নেদারল্যান্ডস। দু’প্রান্ত ব্যবহার করে আক্রমণে উঠছিলেন গাকপোরা। কিন্তু আর্জেন্টিনার বক্সে সে রকম বিপদ তৈরি হয়নি। প্রাথমিক ধাক্কা সামলে খেলায় ফেরে আর্জেন্টিনা। মেসির পায়ে বেশ কয়েক বার বিপদ তৈরি হয় নেদারল্যান্ডসের বক্সে। মেসির পাস থেকে সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি ম্যাক অ্যালিস্টার। ৬৩ মিনিটের মাথায় ফ্রিকিক পায় আর্জেন্টিনা। মেসির শট একটুর জন্য বাইরে বেরিয়ে যায়।

৭১ মিনিটের মাথায় বক্সের মধ্যে আকুনাকে ফাউল করেন ডেঞ্জিল ডামফ্রিস। পেনাল্টি পায় আর্জেন্টিনা। পোল্যান্ডের বিরুদ্ধে ফস্কালেও এ বার গোল করতে ভুল করেননি মেসি। গোলরক্ষকের বাঁ দিক দিয়ে বল জালে জড়িয়ে দেন তিনি। ২-০ এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনা।

গোল শোধ করার জন্য আক্রমণে আরও লোক বাড়ান ফান হাল। ৮৩ মিনিটের মাথায় এক গোল শোধ করেন উইঘর্স্ট। ডান প্রান্ত ধরে ক্রসে দুরন্ত হেড করেন তিনি। বল মাটিতে পড়ে গোলে ঢুকে যায়। মাঝেমধ্যেই খেলার মধ্যে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে পড়ছিল। হাতাহাতিতে জড়াচ্ছিলেন দু’পক্ষের ফুটবলাররা। ফলে সময় নষ্ট হচ্ছিল। ১০ মিনিট সংযুক্তি সময় দেওয়া হয়। এই সময়ের মধ্যে বার বার আর্জেন্টিনার বক্সে আক্রমণ করে নেদারল্যান্ডস। শেষ মিনিটে ফ্রিকিক থেকে গোল করে সমতা ফেরান সেই উইঘর্স্ট। খেলা গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে।

অতিরিক্ত সময়ে গোল করার বেশি সুযোগ পায় আর্জেন্টিনা। বক্সের মধ্যে থেকে লাউতারো মার্তিনেসের শট ভার্জিল ভ্যান ডাইকের গায়ে লেগে বেরিয়ে যায়। পরের মুহূর্তেই এনজো ফের্নান্দেসের শট একটু হলেই গোলের মধ্যে চলে যেত। শেষ মুহূর্তে মার্তিনেসের আরও একটি শট ভাল বাঁচান নেদারল্যান্ডসের গোলরক্ষক আন্দ্রিজ নোপার্ট। ফের্নান্দেসের শট পোস্টে লেগে ফেরে। কিছুতেই গোল করতে পারেনি আর্জেন্টিনা। খেলা গড়ায় টাইব্রেকারে।

টাইব্রেকারে দলের রক্ষাকর্তা হয়ে দাঁড়ালেন মার্তিনেস। নেদারল্যান্ডসের প্রথম দু’টি শট বাঁচিয়ে দেন তিনি। আর্জেন্টিনার হয়ে চার নম্বর পেনাল্টি নিতে যান ফের্নান্দেস। বাইরে মারেন তিনি। ফলে আবার হৃদ্‌স্পন্দন বেড়ে যায় আর্জেন্টিনার সমর্থকদের। কিন্তু শেষ পেনাল্টি থেকে গোল করে দলকে জিতিয়ে দেন লাউতারো মার্তিনেস। সেমিফাইনালে আর্জেন্টিনার প্রতিপক্ষ ক্রোয়েশিয়া।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement