দুরন্ত গোলের পর উচ্ছ্বাস মেসির। ছবি: ইমাগো
সৌদি আরবের কাছে হারের ধাক্কা কাটিয়ে কাতার বিশ্বকাপে অবশেষে জয় পেল আর্জেন্টিনা। শনিবার গ্রুপের দ্বিতীয় ম্যাচে মেক্সিকোকে হারাল ২-০ ব্যবধানে। দ্বিতীয়ার্ধে দু’টি গোল লিয়োনেল মেসি এবং এনজ়ো ফের্নান্দেসের। দু’টি গোলই হয়েছে দেখার মতো। গ্রুপ ‘সি’-তে দুই ম্যাচে তিন পয়েন্ট হল আর্জেন্টিনার। পরের রাউন্ড এখনও নিশ্চিত নয়। পরের ম্যাচে পোল্যান্ডকে হারাতেই হবে মেসিদের।
যত বার দেশের তাঁকে দরকার পড়েছে, তত বারই মেসি এগিয়ে এসেছেন। গত বিশ্বকাপে নাইজেরিয়ার বিরুদ্ধে এ রকমই মরণ-বাঁচনের ম্যাচ খেলতে নেমেছিল আর্জেন্টিনা। সে বারও দলের প্রথম গোল এসেছিল মেসির পা থেকে। এ বার প্রথম ম্যাচে তিনিই গোল করেছিলেন সৌদি আরবের বিপক্ষে। মেক্সিকোর বিপক্ষেও প্রথম গোল এল তাঁর পা থেকে। জ়োনাল মার্কিংয়ের ফাঁকে সামান্য সুযোগ পেয়েছিলেন আর্জেন্টিনার অধিনায়ক। পায়ের জঙ্গলের ফাঁক থেকে নীচু গড়ানো শটে বল জালে জড়ালেন তিনি।
জয়ের লক্ষ্যে দলে পাঁচ পরিবর্তন করেছিলেন কোচ লিয়োনেল স্কালোনি। শুরুটা দুর্দান্ত হয়েছিল আর্জেন্টিনার। প্রথম থেকেই বল নিয়ন্ত্রণে ছিল মেসিদের। তরুণ ফুটবলাররা মনে হচ্ছিল বাড়তি শক্তি নিয়ে খেলতে নেমেছেন। কিছু ক্ষণ পরে খেলায় ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা করতে থাকে মেক্সিকো। দু’বার গোলের কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিল তারা। সেই সময় প্রতিপক্ষের চাপ দেখে রক্ষণ নিয়ে বাড়তি সতর্ক হয়ে পড়েছিল আর্জেন্টিনা। বলের নিয়ন্ত্রণও তখন ছিল মেক্সিকোর পায়ে।
বল নিজেদের দখলে রাখতে সমস্যা হচ্ছিল আর্জেন্টিনার। প্রেসিং ফুটবল খেলছিল মেক্সিকো। বল পেলেই উঠে যাচ্ছিল আক্রমণে। সামনের দিকে মেসি সঙ্গী পাচ্ছিলেন না কাউকে। তিনি যা-ও বা বল পাচ্ছিলেন, তাঁকে ছেঁকে ধরছিলেন মেক্সিকোর ফুটবলাররা। ২০ মিনিট আর্জেন্টিনার বক্সের বাইরে ফ্রিকিক পেয়েছিল মেক্সিকো। ফাউল করেছিলেন ওটামেন্ডি। ছোট ফ্রিকিক নিয়ে ক্রস বক্সে ভাসানোর চেষ্টা করেছিল মেক্সিকো। তাতে কিছু সুবিধা হয়নি।
২৯ মিনিটের মাথায় বাঁ দিক থেকে ক্রস ভাসিয়েছিলেন আকুনা। মেসি হেড করেছিলেন। বল বারের উপর দিয়ে উড়ে যায়। তবে আগেই আকুনা ফাউল করায় রেফারি ফ্রিকিকের নির্দেশ দেন। পাঁচ মিনিট পরে বক্সের কিছুটা দূরে রদ্রিগোকে ফাউল করা হয়। গোলের কোনাকুনি জায়গা থেকে ফ্রিকিক নিয়েছিলেন মেসি। সরাসরি গোলে রাখার চেষ্টা করেছিলেন। ওচোয়া বাঁচিয়ে দেন সেই প্রচেষ্টা। ৪০ মিনিটের মাথায় ম্যাচের প্রথম কর্নার পেয়েছিল আর্জেন্টিনা। দি মারিয়ার ভাসিয়ে দেওয়া বলে লাউতারোর হেড বারের উপর দিয়ে বেরিয়ে যায়।
প্রথমার্ধের সময় শেষের এক মিনিট আগে বক্সের সামান্য বাইরে ফ্রিকিক পেয়েছিল মেক্সিকো। অ্যালেক্সিস ভেগার দুর্দান্ত শট বাঁচিয়ে দেন আর্জেন্টিনার গোলকিপার এমিলিয়ানো। অল্পের জন্য বেঁচে যায় আর্জেন্টিনা। আগাগোড়া মেসিকে জ়োনাল মার্কিংয়ে রাখেন মেক্সিকোর ডিফেন্ডাররা। তিনি বল পেলেই তেড়ে যাচ্ছিলেন বিপক্ষের জনা তিনেক খেলোয়াড়। প্রথমার্ধে একাধিক বার আক্রমণ করেও গোলের মুখ খুলতে পারেনি আর্জেন্টিনা। বিরতির একটু আগে ম্যাচের সেরা মুভ তৈরি করে আর্জেন্টিনা। তবে গোল আসেনি। ক্লিয়ার করে দেন মেক্সিকোর ডিফেন্ডার।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই ভাল সুযোগ পেয়েছিল আর্জেন্টিনা। বক্সের বাইরে মেসিকে ফাউল করেন গুতিয়েরেজ। নিজের পছন্দের জায়গায় ফ্রিকিক পান মেসি। সেখান থেকে বল বারের উপর দিয়ে উড়িয়ে দেন মেসি। সুযোগ হারাল আর্জেন্টিনা। ১০ মিনিট পরে আরও একটি ভাল সুযোগ তৈরি করেছিলেন দি মারিয়া। বক্সের ডান দিক থেকে পাস বাড়ান। লাউতারো তখন বলের ধারেকাছেও ছিলেন না। দি মারিয়া বার বার প্রান্ত বদল করে খেলছেন। কারণ আর্জেন্টিনার এক দিকের উইং দেখাই যাচ্ছিল না।
৬৪ মিনিটে অবশেষে আর্জেন্টিনা শিবিরে স্বস্তি আসে। দুর্দান্ত গোল করে আর্জেন্টিনাকে এগিয়ে দেন সেই মেসি। ডান দিক থেকে দি মারিয়া পাস দিয়েছিলেন মেসিকে। মেক্সিকোর রক্ষণ একটু ফাঁকা জায়গা দিয়েছিল মেসিকে। সুযোগ কাজে লাগাতে ভোলেননি আর্জেন্টিনার অধিনায়ক। বাঁ পায়ের মেসির গড়ানো শট গোলকিপার ওচোয়াকে পরাস্ত করে জালে জড়িয়ে যায়। পরের ১০ মিনিটে আক্রমণের ঝড় বইয়ে দেয় আর্জেন্টিনা। আরও বেশি আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে তারা। তবে মেসি ছাড়া আর কোনও খেলোয়াড়ই ভাল কোনও সুযোগ তৈরি করতে পারছিলেন না। ফলে গোলও আসছিল না। সেই আক্ষেপ মেটালেন ফের্নান্দেস। ৮৭ মিনিটের মাথায় বক্সের ডান দিক থেকে দু’জন ডিফেন্ডারকে পায়ের দোলায় কাটিয়ে গোলের কোণ দিয়ে দিয়ে বল জালে জড়ালেন তরুণ ফের্নান্দেস। ওই গোলই আর্জেন্টিনার জয় নিশ্চিত করে দিল।