গোলের পর সতীর্থদের সঙ্গে উচ্ছ্বাস হ্যারি কেনদের। ছবি: রয়টার্স
ইংল্যান্ড ৩ (হেন্ডারসন, হ্যারি কেন, সাকা)
সেনেগাল ০
যা প্রত্যাশা করা হয়েছিল তাই হল। প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালে অনায়াসে সেনেগালকে হারিয়ে শেষ আটে উঠে গেল ইংল্যান্ড। হ্যারি কেনের দল রবিবার রাতে জিতল ৩-০ গোলে। অধিনায়ক হ্যারি কেন ছাড়াও ইংল্যান্ডের হয়ে গোল করলেন জর্ডান হেন্ডারসন এবং বুকায়ো সাকা।
বিশ্বকাপে এর আগে সাত বার আফ্রিকার দেশের বিরুদ্ধে খেলেছে ইংল্যান্ড। তবে এই প্রথম বার সেনেগালের বিরুদ্ধে খেলল তারা। এক বারও হারেনি। রবিবারও তার ব্যতিক্রম হল না। শুরুর দিকে সেনেগাল একটু তেড়েফুঁড়ে খেললেও গোল খেতেই গুটিয়ে গেল তারা। প্রথমার্ধেই দু’গোল করে ম্যাচ কার্যত শেষ করে দিয়েছিল ইংল্যান্ড। দ্বিতীয়ার্ধে তারা আরও একটি গোল করল। অ্যালিউ সিসের দলের পক্ষে সেই পরিস্থিতি থেকে ম্যাচে ফেরা সম্ভব ছিল না।
চার মিনিটের মাথায় ম্যাচের প্রথম উল্লেখযোগ্য আক্রমণ অবশ্য সেনেগালেরই। মিডফিল্ড থেকে বল পেয়ে ইংল্যান্ডের গোলের কাছে পৌঁছে গিয়েছিলেন বৌলায়ে দিয়া। কিন্তু হ্যারি ম্যাগুয়ের এসে বল ক্লিয়ার করে দেন। ইংল্যান্ড বল রাখছিল নিজেদের পায়ে। সেই সঙ্গে দুই দিকের উইং ধরে আক্রমণ করছিলেন বুকায়ো সাকা এবং জুড বেলিংহ্যাম। রাহিম স্টার্লিংকে এ দিনের ম্যাচে রাখা হয়নি। প্রথম ২০ মিনিট ইংল্যান্ডের ফুটবলারদের পায়ে ৭০ শতাংশ বল ছিল।
২৩ মিনিটে অল্পের জন্য বেঁচে যায় ইংল্যান্ড। ম্যাগুয়েরের ভুল পাসে বল পেয়ে যান সেনেগালের দিয়াত্তা। তাঁর থেকে বল পান দিয়া। তাঁর থেকে পাস পেলেও গোলের উপর দিয়ে উড়িয়ে দেন ইসমাইলা সার। ৮ মিনিট পরে আবার বেঁচে যায় ইংল্যান্ড। এ বার সাকার খারাপ ব্যাক পাস কাজে লাগিয়ে আক্রমণ করেন সার। পাস দেন সেই দিয়াকে। দিয়ার বাঁ পায়ের শট ঝাঁপিয়ে পড়ে বাঁচিয়ে দেন জর্ডান পিকফোর্ড।
৩৮ মিনিটে এগিয়ে যায় ইংল্যান্ড। হ্যারি কেন মিডফিল্ড থেকে বল পেয়ে বাঁ দিকে বাড়িয়ে দেন বেলিংহ্যামকে। তিনি বেশ কিছুটা সামনে এগিয়ে পাস দেন হেন্ডারসনকে। বাঁ পায়ে চলতি বলেই শট নিয়ে গোল করেন হেন্ডারসন। তার পরেই বেলিংহ্যামে দিকে আঙুল দিয়ে দর্শকদের ইঙ্গিত করেন তাঁকেই অভিবাদন জানাতে। ৩২ বছর ১৭০ দিন বয়সে হেন্ডারসন বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় প্রবীণতম গোলদাতা হলেন।
গোল পেয়েই আগ্রাসী হয়ে ওঠে ইংল্যান্ড। দু’মিনিট পরে সাকার শট বারের উপর দিয়ে উড়ে যায়। ৪৩ মিনিটে এগিয়ে যেতে পারত ইংল্যান্ড। বাঁ দিকে লুক শ একটু বেশি বলটি এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। ফলে ঠিকঠাক ক্রস রাখতে পারেননি। তবে বিরতির আগেই দ্বিতীয় গোল হয়ে যায় ইংল্যান্ডের। প্রতি আক্রমণের আদর্শ উদাহরণ হয়ে থাকতে পারে এই গোল। সেনেগালের আক্রমণ থেকে হঠাৎই বল পেয়ে যান বেলিংহ্যাম। মাঝ মাঠ দিয়ে তিনি উঠতে থাকেন। পাস দেন ফিল ফোডেনকে। ফোডেন সঙ্গে সঙ্গে পাস দেন ডান দিকে ছুটতে হ্যারি কেনকে। বল রিসিভ করে ঠান্ডা মাথায় জালে জড়ান ইংরেজ অধিনায়ক।
এ বারের বিশ্বকাপে প্রথমার্ধে যেখানে বেশির ভাগ দলই গোল দিতে পারছে না, সেখানে ব্যতিক্রম একমাত্র ইংল্যান্ড। গত চারটি ম্যাচে পাঁচটি গোল করেছে তারা। বাকি দেশগুলির থেকে বেশি। পাঁচটি গোলই এসেছে ম্যাচ ৩০ মিনিট হয়ে যাওয়ার পর। প্রথমার্ধের স্কোর থেকেই মনে হয়েছিল সেনেগালের পক্ষে ম্যাচে ফেরা সম্ভব হবে না। ৫৬ মিনিটে হ্যারি কেন ৩০ গজ দূর থেকে শট মেরেছিলেন। কিন্তু তা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। পরের মিনিটেই তৃতীয় গোল করে ইংল্যান্ড। হ্যারি কেন বল হারালেও তা পেয়ে যান ফোডেন। বাঁ দিক ধরে দৌড়তে থাকেন। বক্সে ক্রস ভাসানোর পর প্রথম পোস্ট দাঁড়িয়ে থাকা সাকা অনায়াসে সেনেগাল গোলকিপার এডুয়ার্ড মেন্ডির মাথার উপর দিয়ে বল জালে জড়ান।
তিনটি গোল খেয়ে যাওয়ার পরে সেনেগালের খেলাতেও পাল্টা লড়াই দেওয়ার কোনও মনোভাব দেখা যায়নি। ইংল্যান্ড বেশ কয়েক বার আক্রমণ করলেও গোল করতে পারেনি। বরং রিজার্ভ বেঞ্চের কিছু ফুটবলারকে শেষ দিকে নামিয়ে দেখে নেন কোচ গ্যারেথ সাউথগেট।