FIFA World Cup 2022

রণকৌশল ফাঁসের ভয়, দেশঁর শিবিরে আচমকা প্রবেশ নিষিদ্ধ

স্পেনের মাদ্রিদের রাস্তায় ঠেলা গাড়িতে শিশুদের খেলনা বিক্রি করতেন হাকিমির বাবা। সংসারের অভাব দূর করতে পরিচারিকার কাজ করতেন তাঁর মা।

Advertisement

শুভজিৎ মজুমদার

দোহা শেষ আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০২২ ০৯:২২
Share:

ভরসা: এমবাপেকে ঘিরেই তৃতীয় বার কাপ জয়ের স্বপ্ন দেখছে ফ্রান্স। শনিবার দ্বিতীয় গোলের পরে। ফাইল চিত্র

রূপকথার উত্থান নাকি অঘটন? ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর পর্তুগালকে ছিটকে দিয়ে বিশ্বকাপের শেষ চারে মরক্কো প্রথমবার যোগ্যতা অর্জন করায় উচ্ছ্বসিত ফ্রান্সের কোচ দিদিয়ে দেশঁ। শনিবার রাতেই ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে জয়ের পরে সাংবাদিক বৈঠকে তিনি বলে দেন, ‘‘মরক্কোর সাফল্যে অনেকেই অবাক হয়েছেন। অঘটন হিসেবেও দেখছেন ওদের এই সাফল্যকে। আমি মনে করি, যোগ্য দল হিসেবেই মরক্কো এই উচ্চতায় পৌঁছেছে। আমাদের তাই সতর্ক হয়েই খেলতে হবে।’’ উত্তেজিত গ্যারি লিনেকার গণমাধ্যমে লেখেন, ‘‘মরক্কোর জয়ে শিহরিত। লড়াই, দায়বদ্ধতা, সংগঠিত ও পরিকল্পিত ফুটবল খেলে যোগ্য দল হিসেবেই আফ্রিকার প্রথম দেশ হিসেবে শেষ চারে উঠেছে। ’’

Advertisement

দোহার আল থুমামা স্টেডিয়ামে পর্তুগালকে হারিয়ে সোফিয়ান বুফাল যখন মাঠের মধ্যেই মায়ের হাত ধরে নাচছিলেন, হাকিমি জিয়েচরা গ্যালারিতে মাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছিলেন, মনে হচ্ছিল এ তো শুধু বিশ্বকাপের শেষ চারে ওঠার আনন্দ নয়, জীবনযুদ্ধে জয়ের উৎসবও। ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর স্বপ্নভঙ্গের মঞ্চেই যেন রচিত হচ্ছে নতুনআরব্য রজনী।

স্পেনের মাদ্রিদের রাস্তায় ঠেলা গাড়িতে শিশুদের খেলনা বিক্রি করতেন হাকিমির বাবা। সংসারের অভাব দূর করতে পরিচারিকার কাজ করতেন তাঁর মা। ২০১৬ সালে রিয়াল মাদ্রিদ যখন চুক্তি করেছিল হাকিমির সঙ্গে, উৎসব শুরু হয়ে গিয়েছিল বাড়িতে। নতুন আশায় বুক বেঁধেছিলেন মরক্কোর তারকার বাবা-মা। কিন্তু এক বছরের মধ্যেই রিয়াল লোনে হাকিমিকে তুলে দেয় বরুসিয়া ডর্টমুন্ডের হাতে। রিয়ালের এই উপেক্ষাই যে আশীর্বাদ হয়ে উঠবে ছেলের জন্য, প্যারিস সঁ জরমঁ-এ লিয়োনেল মেসির পাশে খেলতে দেখবেন ইন্টার মিলান ঘুরে আসা হাকিমিকে, কল্পনাও করেননি কেউ। মরক্কোর উত্থানের মতোই রোমাঞ্চকর তাঁর জীবনের কাহিনি। মরক্কো দলের প্রতিটি সদস্যের জীবনই রূপকথার মতো। গোলরক্ষক ইয়াসিন বোনোর জন্ম কানাডায়। ডিফেন্ডার রোমেন সাইসের জন্ম ও ফুটবলার হয়ে ওঠার পাঠ শুরু ফ্রান্সে। নৌসির মাজ়রাওই জন্মেছেন নেদারল্যান্ডসে। সোফিয়ান আমরাবাতের জন্মও সেখানে। ভিন্ন দেশ ও সংস্কৃতির মধ্যে বড় হয়ে ওঠা হাকিমি, ইয়াসিনদের একসূত্রে বাঁধাই সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষা ছিল কোচ ওয়ালিদ রেগ্রাগুইয়ের।

Advertisement

মরক্কোর কাসাব্লাঙ্কা থেকে বিশ্বকাপ কভার করতে কাতারে এসেছেন সাবা। বিশ্বকাপ শুরু হওয়ার আগেই দাবি করেছিলেন, ‘‘মরক্কো এ বার সবাইকে চমকে দেবে।’’ কেন? বলছিলেন, ‘‘বিশ্বের অধিকাংশ দেশই মনে করে, মরক্কো হল ইউরোপে প্রবেশের পথ। জিব্রাল্টার প্রণালী পেরোলেই স্পেনে পৌঁছে যাওয়া যায়। আমাদের দেশও যে ফুটবল খেলতে পারে, অনেকেই মনে করেন না। বিশেষ করে পশ্চিম দুনিয়ার দেশগুলি।’’ মরক্কোর ফুটবলারদের লড়াই যে রক্তচাপ বাড়িয়ে দিয়েছে ফ্রান্সের, অস্বীকার করেননি অভিজ্ঞ কোচ দেশঁও। তাই সময় নষ্ট না করে রবিবার সন্ধেয় আল সাদ স্টেডিয়ামে অনুশীলনে নেমে পড়েছিলেন।

অনুশীলনে নামার ঘণ্টা চারেক আগে ফরাসি শিবির থেকে ফতোয়া জারি করা হল, অনুশীলনে সংবাদমাধ্যমের প্রবেশ নিষেধ। মরক্কোর ফুটবলাররা রবিবার বিশ্রাম নেন। নৈশভোজের আগে ফুটবলারদের নিয়ে কোচ ওয়ালিদ ইংল্যান্ড বনাম ফ্রান্স ম্যাচেররেকর্ডিং দেখেছেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement