মোহনবাগানের দিমিত্রি পেত্রাতোস (বাঁ দিকে) এবং ইস্টবেঙ্গলের ক্লেটন সিলভা। ছবি: সমাজমাধ্যম।
অতীতে আইএসএলে মোহনবাগান এবং ইস্টবেঙ্গল মুখোমুখি হওয়ার আগে প্রায় প্রতি বারই এগিয়ে রাখা হয়েছে সবুজ-মেরুনকে। কখনও খারাপ দল, কখনও কোচ, কখনও সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স— বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কারণে পিছিয়ে থেকেছে লাল-হলুদ। এ বারের আইএসএলের প্রথম ডার্বি ১৯ অক্টোবর। ফর্মের বিচারে মোহনবাগান খুব একটা ভাল জায়গায় নেই। চিরশত্রুকে এ বার চেপে ধরতেই পারত ইস্টবেঙ্গল। তবে তাদের অবস্থা আরও খারাপ।
চার ম্যাচে সাত পয়েন্ট নিয়ে লিগে মোহনবাগান রয়েছে চার নম্বরে। এখনও পর্যন্ত প্রতিটি ম্যাচে হারা ইস্টবেঙ্গল সবার শেষে। ভঙ্গুর হায়দরাবাদ দলও যেখানে একটি ম্যাচে ড্র করেছে, সেখানে ইস্টবেঙ্গল একটিও পয়েন্ট পায়নি। প্রচুর অর্থব্যয়ে গড়া দলের হাল শোচনীয়। আগামী শনিবার ডার্বিতে কি তারা মোহনবাগানের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারবে? মাঠে দু’দলের ১১ জন ফুটবলারকে ধরলে কোন কোন জায়গায় এগিয়ে থাকবে মোহনবাগান? কোথায় এগিয়ে ইস্টবেঙ্গল? আলোচনায় আনন্দবাজার অনলাইন।
দুই দলের সম্ভাব্য একাদশ
ধরে নেওয়া যাক দুই দলই ৪-৪-২ ছকে খেলবে। মোহনবাগানের প্রথম একাদশ হতে পারে এ রকম: বিশাল কাইথ, আশিস রাই, টম অলড্রেড, আলবের্তো রদ্রিগেস, শুভাশিস বসু, গ্রেগ স্টুয়ার্ট, অনিরুদ্ধ থাপা, আপুইয়া, লিস্টন কোলাসো, মনবীর সিংহ বং জেমি ম্যাকলারেন। ইস্টবেঙ্গলের প্রথম একাদশে থাকবেন: প্রভসুখন গিল, প্রভাত লাকরা, আনোয়ার আলি, হেক্টর ইয়ুস্তে, লালচুংনুঙ্গা, সাউল ক্রেসপো, মাদিহ তালাল, শৌভিক চক্রবর্তী, নন্দকুমার, নাওরেম মহেশ এবং ক্লেটন সিলভা।
বিশাল কাইথ বনাম প্রভসুখন গিল
যে কোনও দিন বিশাল এগিয়ে থাকবেন প্রভসুখনের থেকে। ইদানীং খুবই খারাপ ফর্ম যাচ্ছে প্রভসুখনের। দু’কোটি টাকা ব্যয়ে তাঁকে কেরল থেকে আনার পর প্রথম মরসুমে খারাপ খেলেননি। তবে এই মরসুমে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আগের ম্যাচে বসিয়ে দিতে হয়েছে। অন্য দিকে, ডুরান্ড কাপ থেকে ছন্দে রয়েছেন বিশাল। প্রতি ম্যাচেই একাধিক গোল বাঁচাচ্ছেন। রক্ষণের ব্যর্থতা রুখে দিচ্ছেন।
লিস্টন কোলাসো বনাম লালচুংনুঙ্গা
এখানেও এগিয়ে মোহনবাগান। লালচুংনুঙ্গার অবস্থা দিন দিন খারাপ হচ্ছে। ডার্বিতে জ্বলে উঠতে না পারলে লিস্টনের কাছে পরাজিত হবেন। লিস্টনের কাট করে ভেতরে ঢুকে পড়ার প্রবণতা আটকাতেই হবে তাঁকে।
মনবীর সিংহ বনাম আনোয়ার আলি
গত মরসুমে দু’জনে একসঙ্গে খেলেছেন। তা ছাড়া মনবীরও সাম্প্রতিক কালে ফর্মে নেই। এই জায়গায় এগিয়ে থাকবেন ইস্টবেঙ্গলের আনোয়ার। কারণ পুরনো সতীর্থ হওয়ায় মনবীরের খেলার ধরন তিনি ভালই জানেন।
জেমি ম্যাকলারেন বনাম হেক্টর ইয়ুস্তে
হেক্টরও গত বার মোহনবাগানে খেলেছেন। তবে ম্যাকলারেনের খেলা তিনি জানেন না। শারীরিক ভাবে ম্যাকলারেনকে টেক্কা দিতে পারেন। অসি ফরোয়ার্ড বাজিমাত করতে পারেন গতি এবং দক্ষতায়। তাই সামান্য হলেও এগিয়ে মোহনবাগান।
গ্রেগ স্টুয়ার্ট বনাম প্রভাত লাকরা
মাঝমাঠ থেকে খেলা তৈরি করায় সিদ্ধহস্ত গ্রেগ। তাঁকে থামানো সহজ নয়। ইস্টবেঙ্গলের হয়ে মাত্র এক ম্যাচ খেলা প্রভাতকে নিজের শীর্ষ দক্ষতায় পৌঁছতে হবে গ্রেগকে আটকাতে।
অনিরুদ্ধ থাপা বনাম শৌভিক চক্রবর্তী
শৌভিক সাধারণত ডিফেন্সিভ ব্লকার। তাই অনিরুদ্ধকে খেলা তৈরি না করতে দেওয়া হবে তাঁর প্রধান কাজ। অনিরুদ্ধের জায়গায় সাহাল সামাদ খেললেও তাঁকে বেশি উঠতে দেওয়া যাবে না। অভিজ্ঞতার কারণে এগিয়ে থাকবেন শৌভিকই।
আপুইয়া বনাম সাউল ক্রেসপো
গোল করাতে বা আটকাতে দুটোই পারেন ক্রেসপো। আপুইয়াকে নিজের খেলা না খেলতে দিলেই বাজিমাত করতে পারেন। আপুইয়ার বল বাড়ানোর ক্ষমতা অনেক ভাল। ফলে ক্রেসপোর লক্ষ্য থাকবে আপুইয়া যাতে বেশি ক্ষণ বল পায়ে না রাখতে পারেন। লড়াই সমানে-সমানে।
নন্দকুমার বনাম শুভাশিস বসু
উপরে উঠে গেলে দ্রুত নামার ক্ষেত্রে একটু সমস্যা রয়েছে শুভাশিসের। সেই জায়গাটি কাজে লাগাতে পারেন তিনি। তবে এখনও বল নিয়ে ভেতরে ঢোকায় সমস্যা রয়েছে নন্দের। অভিজ্ঞতা দিয়ে বাজিমাত করতে পারেন শুভাশিস। এই বিভাগে এগিয়ে মোহনবাগান।
নাওরেম মহেশ বনাম আশিস রাই
মহেশ ইদানীং ফর্মে নেই। গত মরসুমে যে মহেশকে দেখা গিয়েছিল তার ধারেকাছেও পৌঁছতে পারছেন না তিনি। আশিস খুব খারাপ খেলছেন না। তবে ধারাবাহিকতায় সমস্যা রয়েছে। ডার্বিতে তা শোধরাতে হবে। এগিয়ে মোহনবাগান।
মাদিহ তালাল বনাম টম অলড্রেড
আগের ম্যাচে লাল-হলুদ জার্সিতে নিজের সেরা ম্যাচটা খেলেছেন তালাল। ডার্বিতেও সে রকম বা তার চেয়ে ভাল খেলতে পারলে রাতারাতি সমর্থকদের চোখে নায়ক হয়ে যেতে পারেন। তালাল যে রকম সুযোগসন্ধানী, তাতে অলড্রেডের কাজ সহজ হবে না।
ক্লেটন সিলভা বনাম আলবের্তো রদ্রিগেস
ক্লেটনের বয়স বেড়ে যাওয়া নিয়ে রোজই জল্পনা চলছে। তবে ব্রাজিলের ফুটবলার বার বার প্রমাণ করেছেন বয়স তাঁর কাছে সংখ্যামাত্র। তিনি বড় ম্যাচের খেলোয়াড়। তাই ডার্বিতে তাঁকে অন্য রূপে দেখা যেতে পারে। সামলানো কঠিন হবে মোহনবাগানের আলবের্তোর কাছে। এগিয়ে ইস্টবেঙ্গলই।