ইস্টবেঙ্গলের কোচ কার্লেস কুয়াদ্রাত। — ফাইল চিত্র।
জামশেদপুরের বিরুদ্ধে হারের ধাক্কা কাটিয়ে সোমবার ঘরের মাঠে চেন্নাইয়িন এফসি-র বিরুদ্ধে নামছে ইস্টবেঙ্গল। নয়ে থাকা লাল-হলুদের কাছে ভাল সুযোগ চেন্নাইয়িনকে হারিয়ে পয়েন্ট তালিকায় আটে উঠে আসার। চেন্নাইয়িন এখন ইস্টবেঙ্গলের তলায় রয়েছে। তবে ম্যাচের আগে ইস্টবেঙ্গলের কোচ কার্লেস কুয়াদ্রাত সাংবাদিক বৈঠকের প্রায় পুরোটাই কথা বললেন ভারতীয় ফুটবলের খারাপ রেফারিং নিয়ে। এমনকি দু’জন রেফারির নাম উল্লেখ করে বললেন, দুঃস্বপ্নে তাঁদের দেখতে পান।
রবিবার তিনি বলেছেন, “বিশ্বের অনেক দেশেই খারাপ রেফারিং রয়েছে। স্পেনেও এই মরসুমে খারাপ রেফারিং নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। ভারতে যে রেফারিদের কমিটি রয়েছে তাদের একটা কথা বুঝতে হবে, ফুটবলে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল ফুটবলারেরা। কোচ বা রেফারিরা নয়। ফুটবলারেরাই খেলাটা খেলে।” এর পরেই তিনি বলেছেন, “আমি রাতে দুঃস্বপ্ন দেখি যে, ক্রিস্টাল জনকে রাহুল কুমার বলছে, কেন ডার্বির দিন নন্দকুমারকে ফাউল না দিয়ে তিনি খেলা চালিয়ে গিয়েছিলেন। পাল্টা ক্রিস্টাল জন রাহুল কুমারকে বোঝাচ্ছেন, কেন সে দিন রাকিপের বিরুদ্ধে ফাউল দেওয়া হয়েছিল।”
আইএসএলের ১৫টি ম্যাচে কী ভাবে তারা খারাপ রেফারিংয়ের শিকার হয়েছেন, তা আবার বর্ণনা করেছেন কুয়াদ্রাত। বলেছেন, “ভারতীয় ফুটবলের সঙ্গে আমি ১০ বছরের উপর যুক্ত। ভারতীয় ফুটবলের মান আগের থেকে অনেক উন্নত হয়েছে। অনেক ভাল খেলোয়াড়েরা জাতীয় দলে খেলছে। কিন্তু রেফারিদের এক ফোঁটাও উন্নতি হয়নি। প্রত্যেকটা ম্যাচে খারাপ রেফারিং প্রভাব ফেলছে। আমাদের সঙ্গেই অন্তত পাঁচটা ম্যাচে হয়েছে। ম্যাচের শেষ মুহূর্তে একটা সিদ্ধান্ত ফলাফল বদলে দিতে পারে। ওড়িশা ম্যাচে দু’বার আমরা পেনাল্টি পেতে পারতাম। রেফারি দেননি। আমরা দু’পয়েন্ট হারাই।”
কুয়াদ্রাতের সংযোজন, “মোহনবাগান ম্যাচে নন্দকুমারকে আমাদের বক্সে ফাউল করা হয়। রেফারি খেলা চালিয়ে যান। মোহনবাগান গোল করায় আমরা দু’পয়েন্ট হারাই। আগের ম্যাচেও শেষ মুহূর্তে ওই ফাউল দেওয়া উচিত হয়নি। বিপক্ষের এক জনের বিরুদ্ধে আমাদের চার জন ফুটবলার ছিল। ওই ফাউলটা ছিল না। আগের পাঁচ ম্যাচে পাঁচ পয়েন্ট হারিয়েছি আমরা। জামশেদপুর ম্যাচে বিপক্ষ দল শেষ ১৫ মিনিট কোনও সুযোগ তৈরি করতে পারেনি। একমাত্র সুযোগ ওরা পেল রেফারির জন্যই। এমন একটা জায়গায় ফ্রিকিক পেল যেটা পেনাল্টির সমান। শুধু আমাদের খেলোয়াড়দের শারীরিক সক্ষমতার দোষ দেবেন না। রেফারিদের প্রভাবও রয়েছে। কর্তৃপক্ষকে এমন সিদ্ধান্ত নিতে হবে যাতে খেলাটার ভাল নয়। রেফারিদের আড়াল করলে চলবে না।”
খারাপ রেফারিদের শাস্তি দেওয়া উচিত বলেও ঘুরিয়ে মত প্রকাশ করেছেন ইস্টবেঙ্গল কোচ। মোহনবাগানের প্রাক্তন কোচ জুয়ান ফেরান্দোর অপসারণের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, “কোনও দলের কোনও ফুটবলার খারাপ খেললে তাঁকে নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয় ক্লাব। হয় চুক্তি ভেঙে দেয় বা অন্য ক্লাবে পাঠিয়ে দেয়। কোচেদের ক্ষেত্রেও বরখাস্ত করার রীতি রয়েছে। এ বছরই জুয়ান ফেরান্দো, সাইমন গ্রেসনদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। আইএসএল ১২ দলের। কিন্তু রেফারিদেরও একটা দল রয়েছে এবং সেখানেও একজন কোচ রয়েছেন। আমরা জানি সেই কোচ কে। আমার মনে হয় এ বার ওর ভাল কাজ করা উচিত।”
রেফারিদের উন্নতিসাধনে তিনটি পরামর্শও দিয়েছেন কুয়াদ্রাত। বলেছেন, “আয়োজকেরা বলে, প্রতিযোগিতা শুরুর আগে কোচেদের সঙ্গে রেফারি এবং বাকিদের বৈঠক হবে। সেটা কখনওই হয় না। প্রতিযোগিতার মাঝে আমরা মুখ খুললে আজ ওয়েন কয়েল (চেন্নাইয়িন কোচ), কাল দিমাস দেলগাডো (ইস্টবেঙ্গলের সহকারী কোচ), পরশু মানোলো মার্কুয়েসকে (গোয়ার কোচ) গ্যালারিতে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। রেফারিদের বুঝতে হবে কোথায় সমস্যা হচ্ছে।”
তাঁর সংযোজন, “আমার মতে, কোচ, ফুটবলারদের কথা শুনতে হবে আয়োজকদের। খেলোয়াড়দের রক্ষা করতে হবে। সেটাই রেফারিদের কাজ। দ্বিতীয়ত, বিদেশি রেফারিদের আনতে হবে এবং দরকারে তাঁদের গিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়াতে হবে। আগে এই জিনিস ছিল। তখন কোনও গণ্ডগোল হয়নি। তৃতীয়, এই মুহূর্তে ভার (ভিডিয়ো অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি) চালু করতে হবে।”