উদ্বেগ: কোমানের গোল রুখতে পারেনি সবুজ-মেরুন রক্ষণ। ফাইল চিত্র।
শেষ তিন ম্যাচে জয় নেই এটিকে-মোহনবাগানের। পরপর দু’ম্যাচে হার। শনিবার চেন্নাইয়িন এফসির বিরুদ্ধে এগিয়ে গিয়েও ড্র করেন রয় কৃষ্ণরা। এবং সেই রক্ষণের ভুলেই গোল খায় এটিকে-মোহনবাগান।
মুম্বই সিটি এফসি ও জামশেদপুর এফসির কাছে হারের জন্য এটিকে-মোহনবাগান রক্ষণই মূলত দায়ী ছিল। এই কারণেই চেন্নাইয়িনের বিরুদ্ধে ডিফেন্ডার তিরিকে নামিয়েছিলেন কোচ আন্তোনিয়ো লোপেস হাবাস। তা সত্ত্বেও রক্ষণের সমস্যা পুরোপুরি দূর হয়নি সবুজ-মেরুনের। প্রথমত, রাইটব্যাক আশুতোষ মেহতার ফিটনেসে সমস্যা রয়েছে। আক্রমণে উঠলে সময় মতো নীচে নামতে পারছেন না তিনি। অনিরুদ্ধ থাপা, লালিয়ানজ়ুয়ালা ছাংতেরা তাই সবুজ-মেরুনের ডান প্রান্তকেই বেছে নিয়েছিলেন আক্রমণ শানানোর জন্য।
দ্বিতীয়ত, মাঝমাঠ ও রক্ষণের মধ্যে শূন্যস্থান তৈরি হচ্ছে। যা বাড়তি চাপে ফেলে দিচ্ছে ডিফেন্ডারদের। ফলে তাঁরা ভুল করছেন।এই কারণেই চেন্নাইয়িনের বিরুদ্ধে কৃষ্ণকে একটু পিছন থেকে খেলিয়েছিলেন হাবাস। যদিও তাতে সমস্যা পুরোপুরি দূর হয়নি। ম্যাচের পরে সাংবাদিক বৈঠকে হাবাসের ব্যাখ্যা, ‘‘এই ম্যাচে আমাদের খেলার ধরন পরিবর্তন করেছিলাম। চেন্নাইয়িনের মতো শক্তিশালী প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে রণনীতি পরিবর্তন করে খেলাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল।’’
তৃতীয়ত, সন্দেশ জিঙ্ঘনের বিকল্প এখনও খুঁজে পাননি হাবাস। বাধ্য হয়েই রাইটব্যাক প্রীতম কোটালকে স্টপার হিসেবে খেলাতে হচ্ছে স্পেনীয় কোচকে। সবুজ-মেরুন অন্দরমহলের খবর, রক্ষণ নিয়ে রীতিমতো উদ্বেগে রয়েছেন হাবাস।আগামী বৃহস্পতিবার পরের ম্যাচেই প্রতিপক্ষ সুনীল ছেত্রীদের বেঙ্গালুরু এফসি। চলতি আইএসএলে এখনও পর্যন্ত ভারত অধিনায়ক গোল না পেলেও তাঁকে নিয়েই অস্বস্তি বাড়ছে। সবুজ-মেরুন শিবিরের সকলেই মনে করছেন, গোলে ফেরার জন্য এটিকে-মোহনবাগান ম্যাচকেই হয়তো বেছে নেবেন সুনীল। কারণ, মোহনবাগান তাঁর প্রাক্তন ক্লাব। সুনীলের গোল করা আটকানোই এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় পরীক্ষা হাবাসের। জানা গিয়েছে, শনিবার রাত থেকেই বেঙ্গালুরু ম্যাচের পরিকল্পনা শুরু করে দিয়েছেন তিনি।
হাবাস চিন্তিত তাঁর পরিকল্পনা অনুযায়ী দল খেলতে না পারায়। সবুজ-মেরুন কোচের রণকৌশলই হল, রক্ষণ মজবুত করে আক্রমণের জন্য ঝাঁপানো। কিন্তু চলতি আইএসএলে তা হচ্ছে না। যদিও চেন্নাইয়িন ম্যাচের পরে সাংবাদিক বৈঠকে হাবাস দাবি করেছেন, দলের খেলায় তিনি খুশি। বলেছেন, ‘‘ছেলেরা শৃঙ্খলাবদ্ধ ফুটবল খেলেছে। কৌশলগত ভাবেও ভাল জায়গায় ছিল। ওদের খেলায় আমি খুশি।’’ যোগ করেছেন,‘‘চেন্নাইয়িন দারুণ দল। আমরাও উন্নতি করছি।’’
হাবাস মানতে চাননি আক্রমণ ও রক্ষণের মধ্যে ভারসাম্য ঠিক নেই। বলেছেন, ‘‘ছেলেরা যেমন আক্রমণে উঠেছে, তেমনই দলের প্রয়োজনে রক্ষণে নেমেছে। কোনও সমস্যা হয়নি।’’ তবে মেনে নিয়েছেন প্রতিআক্রমণে ঠিক মতো উঠতে পারেননি হুগো বুমোস, রয় কৃষ্ণরা। বলেছেন,‘‘বিপক্ষের উপরে চাপ সৃষ্টি করা উচিত ছিল আমাদের। পাশাপাশি, আরও প্রতিআক্রমণে ওঠা প্রয়োজনীয় ছিল।’’ সবুজ-মেরুন কোচের চিন্তা বাড়াচ্ছে টানা ম্যাচ খেলার ক্লান্তিও। বলছিলেন, ‘‘পর্যাপ্ত বিশ্রামের সুযোগ ফুটবলাররা পাচ্ছে না। অবশ্য অন্যান্য দলেরও একই সমস্যা হচ্ছে।’’ যোগ করেছেন, ‘‘গরম ও প্রচণ্ড আর্দ্রতায় টানা ম্যাচ খেলা খুবই কঠিন। তার উপরে জৈব সুরক্ষা বলয়ে দীর্ঘ দিন ধরে থাকার ক্লান্তি। তবুও আমার মনে হয় না, ফুটবলাররা শারীরিক সমস্যার মধ্যে রয়েছে।’’
সবুজ-মেরুন শিবিরে অস্বস্তি বাড়ছে কৃষ্ণকে নিয়েও। আগামী বছরের মার্চ মাসে ওসেনিয়া গ্রুপে বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন পর্বের ম্যাচ রয়েছে ফিজির। আগামী সপ্তাহ থেকেই প্রস্তুতি শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে কোচ ফ্লেমিং সেরিতস্লেভের। ১০ জানুয়ারির মধ্যে জাতীয় দলে যোগ দিতে হবে কৃষ্ণকে। যা বড় ধাক্কা হবে এটিকে-মোহনবাগানের। সেক্ষেত্রে কি কৃষ্ণের বিকল্প হিসেবে কাউকে নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে? সূত্রের খবর, আইএসএল টেবলে প্রথম চারটি দলের মধ্যে যদি এটিকে-মোহনবাগানের থাকা নিশ্চিত হয়, তা হলেই নতুন ফুটবল নেওয়ার কথা ভাবা হবে।
আত্মবিশ্বাসী হায়দরাবাদ: শেষ ম্যাচে বেঙ্গালুরু এফসির বিরুদ্ধে দুর্দান্ত ফুটবল উপহার দেওয়ার পরে তরতাজা রয়েছে হায়দরাবাদ এফসি। আজ, সোমবার তাদের প্রতিপক্ষ খালিদ জামিলের নর্থিস্ট ইউনাইটেড এফসি।