উল্লাস: রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে পিছিয়ে গিয়েও অবিশ্বাস্য প্রত্যাবর্তন ঘটিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে ওঠার পরে রিয়াল মাদ্রিদ ফুটবলারেরা।
লড়াই মাদ্রিদের মানুষের রক্তে। বুধবার রাতে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ সেমিফাইনালে ম্যাঞ্চেস্টার সিটিকে হারিয়ে আরও একবার প্রমাণ করল আমার প্রিয় রিয়াল মাদ্রিদ। অবিশ্বাস্য অনুভূতি হচ্ছে। সান্তিয়াগো বের্নাবাউ থেকে যখন বেরোচ্ছি, তখন প্রায় মাঝরাত। গোটা শহরে উৎসব হচ্ছে। রাস্তায় হাজার হাজার মানুষ গান গাইছে ‘হালা মাদ্রিদ’ (এগিয়ে চলো মাদ্রিদ)।
আমার বাড়ি থেকে বের্নাবাউয়ের দূরত্ব মিনিট চল্লিশের। কিন্তু কখনওই আমি নিজের গাড়ি নিয়ে খেলা দেখতে যাই না। রিয়ালের জয়ের পরে আনন্দ করতে করতে বাড়ি ফেরার অনুভূতিটাই আলাদা। বিশ্ব ফুটবলে সেরা প্রত্যাবর্তনের উদাহরণ দেওয়ার সময় অনেকেই আগে ১৯৯৯ সালে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড বনাম বায়ার্ন মিউনিখ ম্যাচের প্রসঙ্গ তোলেন। আমি কিন্তু তাঁদের সঙ্গে পুরোপুরি একমত নই। খুব বেশি অতীতে যাওয়ার দরকার নেই। চলতি চ্যাম্পিয়ন্স লিগেই গ্রুপ পর্বে শেরিফের কাছে ঘরের মাঠে হেরে যাওয়ার পরে কেউ কেউ রিয়ালের ভবিষ্যৎ নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশও করেছিলেন। বিশ্বাস ছিল, আমার প্রিয় দল ঘুরে দাঁড়াবেই। প্রথমত, অভিজ্ঞ কার্লো আনচেলোত্তির মতো অভিজ্ঞ ম্যানেজার রয়েছেন। আর আছে করিম বেঞ্জেমা, ভিনিসিয়াস জুনিয়র, রদ্রিগো সিলভা দে গোয়েস, লুকা মদ্রিচের মতো একঝাঁক অবিশ্বাস্য প্রতিভাবান ফুটবলার। সবার উপরে রিয়ালের ঐতিহ্য ও গৌরবময় ইতিহাস।
শেষ ষোলোয় দুর্ধর্ষ প্যারিস সাঁ জারমাঁর কাছে অ্যাওয়ে ম্যাচে ০-১ গোলে রিয়াল হেরে যায়। বলা হচ্ছিল, বের্নাবাউতে লিয়োনেল মেসি, নেমার দা সিলভা স্যান্টোস জুনিয়র, কিলিয়ান এমবাপেরা নাকি দাঁড়াতেই দেবে না বেঞ্জেমাদের। ম্যাচটা রিয়াল ৩-১ জিতে শেষ আটে পৌঁছে গেল! চেলসিকে তাদের ঘরের মাঠে ৩-১ গোলে হারাল। ঘরের মাঠে ২-৩ গোলে হেরে গেল। যদিও দুই পর্ব মিলিয়ে ৫-৪ গোলে জিতে শেষ চারের ছাড়পত্র আদায় করে ভিনিসিয়াসরা। সেমিফাইনালের প্রথম পর্বে ম্যান সিটির কাছে হার ৩-৪ গোলে। ফাইনালে উঠতে হলে বুধবার অন্তত দু’গোলের ব্যবধানে জিততেই হত রিয়ালকে। কিন্তু ৭৩ মিনিটে রিয়াদ মাহরেজ়ের দুরন্ত গোলে পিছিয়ে পড়ে মদ্রিচরা। সকলেই যখন ধরে নিয়েছিলেন রিয়ালের বিদায় নিশ্চিত, তখনই বেঞ্জেমা-রদ্রিগো যুগলবন্দিতে অবিশ্বাস্য প্রত্যাবর্তন। ৯০ মিনিটে বেঞ্জেমার অসাধারণ পাস থেকে ১-১ করে পরিবর্ত হিসেবে নামা রদ্রিগো। এক মিনিটের মধ্যেই হেডে ২-০ করে। ৯৫ মিনিটে পেনাল্টি থেকে ৩-১ করল বেঞ্জেমা। প্রবল চাপের মধ্যে যে ভাবে ও ঠান্ডা মাথায় বল জালে জড়িয়ে দিল, তা অনবদ্য। আমার মতে এই মুহূর্তে বেঞ্জেমাই বিশ্বের সেরা স্ট্রাইকার।
ব্যক্তিগত ভাবে আমি মনে করি, রিয়ালের চেয়ে পিএসজি, চেলসি এবং ম্যান সিটি ভাল ফুটবল উপহার দিলেও পার্থক্য গড়ে দিচ্ছে মানসিকতা। রিয়ালের এই আগ্রাসী ফুটবলই অন্যদলগুলিকে চাপে ফেলে দিচ্ছে। আরও একটা ব্যাপার মনে হয়েছে, ম্যান সিটি ধরেই নিয়েছিল ওরা ফাইনালে চলে গিয়েছে। বুঝলাম না পেপ গুয়ার্দিওলার মতো অভিজ্ঞ ম্যানেজার থাকা সত্ত্বেও কী করে এ রকম ভুল করে!