ময়দানে তাঁর বাঁ পায়ের ম্যাজিকের ভক্ত আট থেকে আশির সবাই। খেলার মাঠে বিপক্ষের ত্রাসের কারণ হয়ে দাঁড়ান প্রায় সব ম্যাচেই। তিনি ফুটবল দুনিয়ায় অন্যতম সফল স্ট্রাইকার লিওনেল আন্দ্রেস মেসি। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
আর্জেন্টিনার রোসারিও শহরে ১৯৮৭-এর ২৪ জুন জন্ম হয় তাঁর।
নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম নেওয়া মেসির বাবা জর্জ ছিলেন পেশায় একজন স্টিল কারখানার শ্রমিক। পাশাপাশি স্থানীয় ফুটবল টিমের কোচও ছিলেন তিনি। লিও-র ফুটবলের প্রতি অনুরাগের অন্যতম কারণ ছিলেন তাঁর বাবা।
যে মানুষটার ভক্ত আজ বিশ্ব জুড়ে, মাত্র ১১ বছর বয়সেই ‘গ্রোথ হরমোন ডেফিসিয়েন্সি’ নামে এক বিরল রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন তিনি, যা সাময়িক ভাবে স্তব্ধ করে দিয়েছিল তাঁর ফুটবল খেলার স্বপ্ন। ছিল প্রাণ সংশয়ও।
এই রোগের চিকিৎসার জন্য মাসে তখন খরচ পড়ত প্রায় ৯০০ ডলার, যা তখনকার ভারতীয় মুদ্রায় ছিল প্রায় ২৫ হাজার টাকার সমান। তাঁর পরিবারের পক্ষে এত টাকা খরচ করা সম্ভব ছিল না। সেই সময় তিনি নিউএল ওল্ড বয়েজ নামে যে স্থানীয় ক্লাবে খেলতেন, তাঁরাও এই খরচ বহন করতে অস্বীকার করেন।
তাঁর খেলায় মুগ্ধ হয়ে বার্সার তৎকালীন স্পোর্টিং ডিরেক্টর কার্লেস রেক্সাস মেসির চিকিৎসার যাবতীয় খরচ দিতে রাজি হন।
মাত্র ১৩ বছর বয়সে কাছাকাছি কোনও কাগজ না থাকায় একটি টিস্যু পেপারে তার সঙ্গে চুক্তি সই করেন কার্লেস। তখন থেকেই সূত্রপাত বার্সা আর লিও-র অবিচ্ছেদ্য সম্পর্কের।
২০০৫ সালে মেসি প্রথম বার জাতীয় দলের হয়ে মাঠে নামলে মাত্র ৪৭ সেকেন্ডের ভিতর লাল কার্ড দেখে মাঠের বাইরে চলে যান।
ইচ্ছা করলেই ২০১০ এর বিশ্বকাপ তাঁর ঝুলিতে থাকতে পারত। মেসি বার্সেলোনা আসার পর স্পেনের জাতীয় দলের পক্ষ থেকে তাঁকে বিশ্বকাপে খেলার প্রস্তাব দেওয়া হলে তিনি তা অস্বীকার করেন। তিনি ঠিক করেন নিজের দেশের হয়েই শুধুমাত্র বিশ্বকাপ খেলবেন। সেই বার বিশ্বকাপ স্পেনের ঘরে আসে।
সর্বকালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ এই ফুটবলারের ঝুলিতে রয়েছে পাঁচ টি ব্যালন ডি ওর। গোল্ডেন বুট জিতেছেন ছয়টা।
আর্জেন্টিনা এবং স্পেন এই দুই দেশেরই নাগরিক তিনি। ২০০৫ সালে তাঁকে স্পেনের নাগরিকত্ব দেওয়া হয়।
গোল করার পর আকাশের দিকে দুই হাত তুলে মেসির ‘সিগনেচার স্টেপ’-এর কথা অনেকেরই জানা। কিন্তু কেন ওরকম ভঙ্গিমা করেন তিনি? নিজের পরলোকগত দিদা-কে এভাবেই গোল উৎসর্গ করে শ্রদ্ধা জানান তিনি।
২০১৭ সালে তিনি সাতপাকে বাঁধা পড়েন তাঁর ছোটবেলার প্রেম আন্তোনেলা রোকুজো-র সঙ্গে। তাঁদের তিন সন্তানও রয়েছে।
সেরার সেরা লিও খেলোয়াড়ের হওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন সমাজ সেবামূলক কাজের সঙ্গেও যুক্ত। তাঁর ‘লিও মেসি ফাউন্ডেশন' থেকে দুঃস্থ এবং অটিজিম আক্রান্ত শিশুদের পাশে দাঁড়ানো হয়।