বার্তা: গৃহবন্দি ক্রিকেটারদের ব্যাটিংয়ের নানা শট অনুশীলনের পাশাপাশি অতীতের ময়নাতদন্ত করার পরামর্শও দিচ্ছেন সচিন তেন্ডুলকর। ফাইল চিত্র
আজ, ২৪ এপ্রিল তাঁর ৪৭তম জন্মদিন। করোনাভাইরাস অতিমারির মধ্যে উৎসব পালন বন্ধ রেখেছেন। চব্বিশ বছর ধরে ভারতীয় ক্রিকেট দলের চাপ বহন করা কিংবদন্তির কাছে আনন্দবাজার প্রশ্ন রেখেছিল, করোনা-যুদ্ধে জেতার জন্য তাঁর টোটকা কী? নিজে টেনিস এলবো থেকে অবিশ্বাস্য লড়াই করে কী ভাবে ফিরে এসেছিলেন? খেলায় লকডাউনের কী প্রভাব পড়তে চলেছে? প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বিশেষ বৈঠকে কী বার্তা দিলেন? সব প্রশ্নের জবাব দিলেন তিনি। খোলামেলা, অন্তরঙ্গ, সচিন তেন্ডুলকর। আরও এক বার আনন্দবাজারের পাতায়...
প্রশ্ন: করোনাভাইরাস, লকডাউন সব মিলিয়ে এই যে কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে সকলে যাচ্ছে, এই অবস্থার মধ্যে দাঁড়িয়ে আপনার বার্তা কী?
সচিন তেন্ডুলকর: আমাদের সকলের জীবনের খুবই অপ্রত্যাশিত একটা অধ্যায়। এ ছাড়া আর কী ভাবেই বা ব্যাখ্যা করতে পারি এই সময়টাকে! কে ভাবতে পেরেছিল বলুন তো যে, গোটা বিশ্ব এ ভাবে দিনের পর দিন লকডাউনে থাকবে! যদি কেউ বাবা, ঠাকুরদাদের সঙ্গেও কথা বলে দেখে, তাঁরাও হয়তো এ রকম কিছু প্রত্যক্ষ করেননি। ক্যাটাসট্রফিক। আমরা সকলে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়ছি। গোটা দেশ, গোটা পৃথিবী একত্রিত হয়ে লড়ছে। সব রকম ভাবে আমরা সকলে চেষ্টা করছি যাতে করোনাভাইরাসকে হারানো যায়।
প্র: কী ভাবে এই যুদ্ধ জিততে পারে মানুষ? আপনার টোটকা কী?
সচিন: আমাদের ধৈর্য ধরতে হবে। ধারাবাহিকতা দেখাতে হবে। যে ভাবে লড়াই করছি, সে ভাবেই এককাট্টা হয়ে লড়ে যেতে হবে। ছাড়লে চলবে না, হাল্কা দিলে হবে না। মনে রাখতে হবে, আমরা একে অন্যের জন্য লড়াই করছি। সেটা চালিয়ে যেতে হবে।
প্র: খেলার ময়দানে যে রকম দেখা যায়। টিম স্পিরিট রেখে লড়ে যাও?
সচিন: আমি শুধু খেলাকে বলব না। জীবনের যে কোনও ক্ষেত্রে, যে কোনও খাতে সফল যে কোনও টিমই আমাদের কাছে উদাহরণ হতে পারে। ভাল টিমের গুণ হচ্ছে, তারা একসঙ্গে থাকতে পারে। ভাল সময়ে, খারাপ সময়ে। আমি বলব, বেশি করে খারাপ সময়ে একত্রিত থাকতে পারে বলেই তারা ভাল টিম। সেই উদাহরণকে অনুসরণ করতে হবে। করোনার সঙ্গে লড়াই আমাদের চরিত্রের অগ্নিপরীক্ষা। মনে-মনে বলে যেতে হবে, আমরা একে অন্যের সঙ্গে আছি এই লড়াইয়ে। টিম স্পিরিট ছাড়া কিন্তু আমরা এগোতে পারব না।
প্র: প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকেও নানা ব্যাপার নিয়ে আলোচনা করেছেন, নানা পরামর্শ দিয়েছেন। কিছু কিছু অংশ জানা গিয়েছে। সেই বৈঠকে কী বলেছিলেন আপনি?
সচিন: আমাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে, এই কঠিন সময়ে ভক্তদের জন্য আমি কী বার্তা দিতে চাই। প্রশ্নটা শুনে আমি আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ি। কারণ, চব্বিশ বছর আমি ভারতের হয়ে খেলেছি। আমার ভক্তরা সব সময় আমার জন্য প্রার্থনা করে গিয়েছেন যে, সচিন যেন আউট না হয়। আমি তাই বলেছিলাম, এই সময়টায় আমি সকল ভক্তের জন্য প্রার্থনা করতে চাই যেন তাঁরা ভাল থাকেন, সুস্থ থাকেন। এ বার আমি প্রার্থনা করছি, সকলে ভাল থাকুন, আউট হবেন না।
প্র: খেলার উপরে এই দীর্ঘ লকডাউনের কী প্রভাব পড়তে পারে?
সচিন: শুধু খেলা বলে তো নয়, সব কিছুর উপরেই সাংঘাতিক প্রভাব পড়তে চলেছে। এমন নয় যে, খেলোয়াড়দেরই শুধু বাড়িতে বসে থাকতে হচ্ছে আর বাকি পৃথিবী ইচ্ছে মতো বাইরে বেরোতে পারছে। লকডাউন সকলের জন্য, সব জগতের মানুষের জন্য। সব কিছুই নিষ্ক্রিয় এই মুহূর্তে। সেই কারণেই আমি টিম স্পিরিটের উপর জোর দিচ্ছি। সকলে এক থাকতে হবে। এই মুহূর্তে জীবন বাঁচানোটাই সকলের কাছে সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আমি বিশেষ ভাবে বলতে চাই চিকিৎসা মাধ্যমের সঙ্গে জড়িত সকলের কথা। যে ভাবে নিজেদের এবং নিজেদের পরিবারের ঝুঁকি নিয়েও তাঁরা দিন-রাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন মানুষের কাজে, তার কোনও তুলনা হতে পারে না। কোনও শব্দই যথেষ্ট নয় তাঁদের অবদানকে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য। আমাদের উচিত, এই মানুষদের আত্মত্যাগকে সম্মান করা, তাঁদের সব রকম ভাবে সমর্থন করা। আমি বলব, এই সময়টা আমাদের পেশার লোকজনদের চেয়েও সেই সব ব্যক্তিদের নিয়ে কথা বলার সময়, যাঁরা নিজেদের প্রাণের ঝুঁকি নিয়েও মানুষের সেবা করে যাচ্ছেন। ওঁরা কী চেষ্টা করছেন? চেষ্টা করছেন জীবন বাঁচানোর। এই মুহূর্তে তার চেয়ে মহৎ কাজ আর কিছু হয় না।
প্র: কী ভাবে চ্যালেঞ্জ নিয়ে জিততে হয়, ক্রীড়াবিশ্বে আপনার চেয়ে বড় উদাহরণ আর কে আছে? নানা কঠিন মুহূর্তের মধ্যে দিয়েই তো আপনাকে যেতে হয়েছে। যেমন ধরুন, টেনিস এলবোর সেই পর্বটা। অনেকে ভয় পেয়েছিলেন, আপনার ক্রিকেট জীবনই না শেষ হয়ে যায়। আপনি ফিরলেন রাজকীয় ভঙ্গিতে। কী ভাবে সম্ভব হল? করোনা-যুদ্ধে হয়তো আপনার সেই লড়াই অনেককে অনুপ্রেরণা দিতে পারে।
সচিন: হ্যাঁ, আমার ক্রিকেট জীবনের খুবই চ্যালেঞ্জিং একটা অধ্যায় ছিল সেটা। সমস্যাটা বড় হয়ে দেখা দিয়েছিল কারণ মরসুমের মধ্যে আমার টেনিস এলবো হয়। আমাদের টিমে আরও কয়েক জনের টেনিস এলবো হয়েছিল কিন্তু তাদের মরসুমের শেষের দিকে এসে সেটা হয়েছিল। আমারটা ছিল মরসুমের শুরুতে। তাই চটজলদি বিশ্রামে চলে যেতে পারিনি। অনেক ম্যাচ খেলার ছিল। আমি সব রকম চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলাম, সব ম্যাচের জন্য নিজেকে যাতে তৈরি রাখতে পারি। কিন্তু মরসুমটাই চলে যায়। আমাকে অপারেশন টেবলে যেতেই হয়। কনুইয়ে অস্ত্রোপচারের পর প্রায় সাড়ে চার মাস লাগে সুস্থ হতে। সেই সময়টা সত্যিই খুব কঠিন ছিল। অস্বীকার করব না, মনোবলে খুব ধাক্কা লেগেছিল। অবসাদে ভুগতাম। চুপচাপ হয়ে যেতাম মাঝেমধ্যে। ভাবতাম, সামনের রাস্তায় কী আছে কে জানে!
প্র: সচিন তেন্ডুলকরেরও এ রকম মনে হয়েছিল?
সচিন: হ্যাঁ, মনে হয়েছিল। কারণ, চোখের সামনেই তো দেখতে পাচ্ছিলাম, নিজের ক্রিকেট কিটব্যাগ তুলতে পারছি না। ব্যাগ দূরের কথা, ক্রিকেট ব্যাট হাতে নিতে পারছি না। একটা সময়ে আমি প্লাস্টিক ব্যাট আর প্লাস্টিক বল নিয়ে খেলতাম। তা-ও সামনে থেকে দাঁড়িয়ে কেউ আমার দিকে প্লাস্টিকের বল ছুড়ে দিত, যেমন নেটে থ্রোডাউন দেয়। আর আমি প্লাস্টিক ব্যাট হাতে সেই বলগুলো খেলার চেষ্টা করতাম। সেই প্লাস্টিক ব্যাট-বলে খেলতে গিয়েও আমি হিমশিম খেতাম।
প্র: কী বলছেন? প্লাস্টিক ব্যাট-বল নিয়েও পারতেন না? সেখান থেকে পুরনো তেন্ডুলকরের শাসন ফিরল?
সচিন: খুব আস্তে আস্তে আমাকে পুরনো জায়গায় ফিরতে হয়েছিল। খুবই মন্থর, কঠিন, চ্যালেঞ্জিং ছিল সেই প্রক্রিয়া। কিন্তু আমি চেয়েছিলাম নিজের জায়গায় ফিরতে। তাই লড়াইটা চালিয়ে গিয়েছিলাম। সেই কারণে আমি বলছি, জীবনের কঠিনতম অধ্যায় পেরনোর সেরা উপায় হচ্ছে, সময় নাও। ধৈর্য ধরে ক্রিজে পড়ে থাকো। অন্ধকার পেরিয়ে ঠিক আলো ফুটবে। টেনিস এলবো অধ্যায় আমাকে এটাই শিখিয়েছিল।
প্র: শুধু সময়ের উপরে ছেড়ে দিলেই কি হবে? সাধনাও লাগবে?
সচিন: মনোবল ধাক্কা খাবে। আবার তা জড়ো করে এগিয়ে যেতে হবে। বিশ্বাস রাখতে হবে। ধৈর্য ধরতে হবে। ক্রীড়াবিদদের জন্য সময় নিয়ে অপেক্ষা করাটা বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ তাদের জীবনটাই অ্যাকশনের। এখনই সব কিছু করার প্রক্রিয়ার মধ্যে থাকে ক্রীড়াবিদরা। সে দিক দিয়ে টেনিস এলবো সারানোর জন্য আমাকে যে ধৈর্য আর অপেক্ষার পরীক্ষা দিতে হয়েছিল, সেটা অন্য রকম ছিল। একটা সময়ে মনে হয়েছিল, সব ধৈর্য বাদ দিয়ে মাঠে নেমে পড়ি। কিন্তু চিকিৎসকেরা আমাকে সাবধান করে দেন। তাঁরা বলেন, যদি দ্রুত মাঠে নেমে কয়েক মাসের মধ্যে টেনিস এলবো ফিরে আসে, তা হলে ভয়ঙ্কর অবস্থা হবে। আমি তাই কষ্ট হলেও নিজেকে বোঝাই, ধৈর্য ধরতেই হবে। কিন্তু একটা কথা বলব। আমার পরিবারের সমর্থন ছাড়া টেনিস এলবোর সঙ্গে লড়াইয়ে জেতা সম্ভব হত না। আমার স্ত্রী অঞ্জলি, মা, ভাই- বোনেরা, ডাক্তার, ফিজিয়োর সমর্থন ছাড়া কিছুতেই ফিরে আসা সম্ভব ছিল না। কখনওসখনও আমার মনে হত, আমার ফেরার কোনও সম্ভাবনাই নেই। আমি ভাগ্যবান, আমার পাশে সব সময় ঠিক মানুষদের পেয়েছি। আর বলব প্রকৃতির কথা। আমি মনে করি, প্রকৃতির একটা নিজস্ব উপায় আছে সকলকে সুস্থ রাখার। সেটাকেও সকলের সম্মান করা দরকার।
প্র: পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ফাঁকা মাঠে ম্যাচ করার কথা উঠছে। আপনি কি এই মতকে সমর্থন করেন?
সচিন: ফাঁকা মাঠে খেলার ব্যাপারটা কী রকম যেন একটা শোনাচ্ছে। খুবই আশ্চর্যজনক একটা ব্যাপার হবে। আমি মনে করি, খেলোয়াড়রা গ্যালারিভর্তি দর্শকদের থেকে প্রচুর এনার্জি পায়। ভাবুন তো একবার, কেউ একটা দারুণ বাউন্ডারি মারল আর গোটা মাঠ নিশ্চুপ, কোনও প্রশংসাসূচক ধ্বনি বা হাততালি নেই! কী রকম অদ্ভুত হবে না! আমি তো মনে করি, একটা সুন্দর শট মারার পরে যখন দর্শকেরা তারিফ করেন, সেখান থেকে লম্বা ইনিংস খেলার এনার্জি পাওয়া যায়। ভাল করার অনুপ্রেরণা পাওয়া যায়। বোলারদের ক্ষেত্রেও একই জিনিস হয়। দর্শকহীন মাঠে খেলা হলে সেই আবহটাই যে থাকবে না!
প্র: একটা কথা উঠছে যে, এত দিন লকডাউনে থাকার ফলে খেলোয়াড়দের স্কিলে প্রভাব পড়তে পারে। বাড়িতে বসে ট্রেনিং করা সম্ভব, নিজেকে ফিট রাখা সম্ভব কিন্তু মাঠে নেমে অনুশীলনের সুযোগ নেই। খেলোয়াড় নৈপুণ্য ধরে রাখবে কী করে? আপনার পরামর্শ কী?
সচিন: দু’টো বিষয় আছে। এক) এই সময়টা পুরোপুরি খেলা থেকে সুইচ-অফ করে থাকতে পারো। সেটাও খুব জরুরি। বুঝতে হবে যাতে অতিরিক্ত ব্যবহার করে না-ফেলি, তাই ক্রিকেট থেকে দূরে থাকাটাও দরকার। খাদ্যের মতো। অতি রান্নায় নষ্ট হয়ে যেতে পারে। ক্রিকেট থেকে দূরে থাকার এই সময়টাকে মান্য করলে তাই উপকারও হতে পারে। দুই) এই লকডাউনে থেকেও আমি কী কী অর্জন করতে পারি? শারীরিক সক্ষমতা আনতে পারি এবং সব চেয়ে জরুরি, মানসিক দৃঢ়তা বাড়িয়ে নিতে পারি। আন্তর্জাতিক স্তরে খেলা মানে কিন্তু যতটা শারীরিক সক্ষমতা লাগবে, তার চেয়েও বেশি মানসিক শক্তির পরীক্ষা। বাড়িতে বসে মানসিক অনুশীলনটা তো করা যেতেই পারে। বাড়িতে বসে ব্যাটিংয়ের নানা ড্রিলস করা যায়। স্ট্রেট ড্রাইভ, কভার ড্রাইভ, ব্যাকফুট ড্রাইভে শান দেওয়া যায়। ভিস্যুয়ালাইজেশন সেশন করা যায়। মনে-মনে ভাবার চেষ্টা করা যায় কী ভাবে কোন প্রতিপক্ষকে হারাচ্ছি। অতীতে কী করেছি, সে সব নিয়ে ময়নাতদন্ত করে নিজেকে আরও ক্ষুরধার, আরও তীক্ষ্ণ করে তুলতে পারি। কোন জায়গায় আরও ভাল হতে পারি, সে দিকে নজর দিতে পারি। এর সব ক’টা জিনিসই কিন্তু খেলোয়াড়ের জীবনে বড় ভূমিকা নিতে পারে। ফের মাঠে নামার দিনে যার এই জিনিসগুলো করা থাকবে, সে অন্য লোকগুলোর চেয়ে অনেক এগিয়ে থাকবে, যারা এই লকডাউনের সময়ে হাত-পা গুটিয়ে বসেছিল আর ভেবেছিল, এই সময়টাতে কিছুই তো করার নেই! যদি তুমি সমাধানের রাস্তা খুঁজে পেতে চাও, তা হলে ঠিকই সমাধান পাবে। যদি তুমি সারাক্ষণ ভাবতে থাকো, আমার চারপাশে কত কী সমস্যা আছে, তা হলে সমস্যার সংখ্যাই আরও বাড়তে থাকবে। আমি বরাবর এই মন্ত্রে বিশ্বাস করে এসেছি।
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)