প্রত্যয়ী: আইপিএলে দল না পেলেও হতাশ নন হনুমা। নিজস্ব চিত্র
পরীক্ষা দিতে সব সময়েই প্রস্তুত। অস্ট্রেলিয়ায় মিচেল স্টার্ক, প্যাট কামিন্সের গতি ও সুইংয়ের বিরুদ্ধে ওপেন করাই হোক। অথবা ইংল্যান্ডের স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে জেমস অ্যান্ডারসন, স্টুয়ার্ট ব্রডদের বিরুদ্ধে অভিষেক টেস্টে হাফসেঞ্চুরি করেই হোক। কঠিন পরীক্ষা কখনওই সমস্যায় ফেলতে পারেনি হনুমা বিহারীকে। সামনে নিউজ়িল্যান্ড সফর, তার আগে রঞ্জি ট্রফিই তাঁর প্রস্তুতির মঞ্চ। সোমবার ইডেনের বাইশ গজে ঘাসের আভা দেখে জানিয়ে দিলেন, এ রকম উইকেট পেলে এখন থেকেই নিউজ়িল্যান্ড সফরের প্রস্তুতি হয়ে যাবে।
বুধবার থেকে শুরু বাংলা বনাম অন্ধ্রপ্রদেশের রঞ্জি ট্রফির লড়াই। রিকি ভুই, শ্রীকর ভরতদের দলের অধিনায়ক হনুমা। সোমবার আনন্দাবাজারকে একান্ত সাক্ষাৎকার দিলেন ড্রেসিংরুমে ডেকে। ভারতের হয়ে টেস্ট অভিষেক থেকে অস্ট্রেলিয়ায় ওপেন করার অভিজ্ঞতা। অ্যান্টিগায় সেঞ্চুরি হাতছাড়া করার পরে সাবাইনা পার্কে প্রথম সেঞ্চুরির অনুভূতি। আইপিএলে দল না পেয়ে কি তিনি ভেঙে পড়েছেন? কী ভাবে নিজেকে উদ্বুদ্ধ করেন, সব কিছু নিয়েই খোলামেলা ভারতীয় অলরাউন্ডার।
প্রশ্ন: সাতটি টেস্ট খেলার অভিজ্ঞতা হয়ে গিয়েছে। তার মধ্যে সব চেয়ে কঠিন পরীক্ষা কাদের বিরুদ্ধে দিতে হয়েছে?
হনুমা: অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে। তৃতীয় টেস্টের আগের দিন বলা হয়েছিল আমি ওপেন করছি। সেই রাতে ঘুম হয়নি। ছটফট করেছি। কী ভাবে নতুন বলে মিচেল স্টার্ক, প্যাট কামিন্সদের সামলানো যায় তার উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছি। পরের দিন সকালে টসের পরে বিরাট ভাই প্যাড পরার ইঙ্গিত করে।
প্রশ্ন: তারপর?
হনুমা: তখনই বুঝে যাই, বিপদ দূরে নেই। যদিও মায়াঙ্ক আগরওয়ালকে পাশে পেয়ে কিছুটা চাপ কমেছিল। মায়াঙ্কের সেটা ছিল অভিষেক ম্যাচ। আমার চেয়ে বেশি চাপে ছিল ও-ই। তাই প্রথম বল আমাকেই খেলতে হয়। সেই ইনিংসে রান না পেলেও (৮) ৬৬ বল খেলেছিলাম। নতুন বলের চকচকে ভাব নষ্ট করার পক্ষে যথেষ্ট। স্টার্কদের গতি সামলানোর পরে আর কোনও বোলারকেই ভয় পাই না। সে ম্যাচের পরে ব্যাটসম্যান হিসেবে আরও সাহসী হয়ে উঠেছি।
প্রশ্ন: যখনই সুযোগ এসেছে, রান করেছেন হনুমা। সাত টেস্টে আপনার রান ৪৬৬। একাধিক ম্যাচে দলের বাইরে থাকার পরেও কী করে একটি সুযোগের জন্য নিজেকে তৈরি রাখেন?
হনুমা: এটাই তো আমাদের কাজ। ভারতীয় দলের পরিবেশই একজনকে উদ্বুদ্ধ করার জন্য যথেষ্ট। তার উপরে বিরাট ভাইয়ের মতো অধিনায়ক থাকলে কোনও কথাই নেই। কখনওই আপনাকে ভেঙে পড়তে দেবে না।
প্রশ্ন: সামনে নিউজ়িল্যান্ড সফর। যেখানে গতি ও সুইংয়ের বিরুদ্ধে মোকাবিলা করতে হবে। কী ভাবে নিজেকে তৈরি করবেন?
হনুমা: এখনই নিউজ়িল্যান্ড সফর নিয়ে চিন্তা করছি না। অধিনায়ক হিসেবে রঞ্জি ট্রফিতে দলকে ভাল জায়গায় নিয়ে যেতে চাই। তবে ইডেনের মতো পিচে খেলার সুযোগ পেলে এমনিতেই নিউজ়িল্যান্ড সফরের প্রস্তুতি হয়ে যাবে। এ ধরনের উইকেটে ব্যাট করাও কঠিন পরীক্ষা।
প্রশ্ন: আইপিএলে কোনও দল পাননি। এ ধরনের পরিস্থিতির সঙ্গে কী ভাবে মানিয়ে নেন?
হনুমা: আইপিএল থেকেই উঠেছি। কিন্তু এ বার দল না পাওয়ায় হতাশ নই। আমার মন খুব শক্ত। সহজে ভেঙে পড়ি না। তা ছাড়া খারাপ লাগলেও কিছু করার নেই। আমার হাতে ব্যাট আছে। সেটাকে কাজে লাগানো ছাড়া কিছু ভাবছি না।
প্রশ্ন: দু’দলই গত ম্যাচ জিতে এসেছে। দু’দলের শক্তিই তাদের পেস বিভাগ। বাংলার বিরুদ্ধে কি গতি বনাম গতির লড়াই?
হনুমা: অবশ্যই। বাংলার যেমন অশোক ডিন্ডা, ঈশান পোড়েলরা রয়েছে, আমাদেরও পৃথ্বীরাজ ইয়ারা, পি বিজয়কুমার, সি স্টিফেনরা আছে। ইডেনের বাইশ গজে গতিই অস্ত্র আমাদের। এ ধরনের পিচেই কিন্তু একজন ব্যাটসম্যানের পরীক্ষা। ব্যাটসম্যানদের পারফরম্যান্সের উপরেই নির্ভর করছে ম্যাচের ফল।
প্রশ্ন: ব্যাটিংয়ের সঙ্গে অফস্পিনও করে দিতে পারেন। বোলিংয়ে নিজেকে আরও উন্নত করে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে?
হনুমা: বোলিং নিয়ে বেশি চিন্তিত নই। আমি ব্যাটিং-অলরাউন্ডার। প্রয়োজনে বল করি। তবে উন্নতি করতে কে না চায়। প্রত্যেক দিনই নতুন কিছু শিখছি। নতুন করে নিজেকে তৈরি করছি। একজন ক্রিকেটারের কাছে প্রত্যেকটি দিন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই ব্যাটিং হোক অথবা বোলিং, শিখে যাওয়াই দায়িত্ব।