মাদ্রিদ থেকে
Euro Cup 2020

বিপজ্জনক মদ্রিচ কাঁটা হতে পারে এনরিকের শিবিরের

পোলান্ডের বিরুদ্ধে ড্র করার পরে কিন্তু সত্যিই দুশ্চিন্তা হচ্ছিল। গ্রুপ পর্ব থেকেই ছিটকে যাবে না তো স্পেন?

Advertisement

মারিয়ো রিভেরা  (ইস্টবেঙ্গল কোচ)

শেষ আপডেট: ২৮ জুন ২০২১ ০৫:৩৪
Share:

নজরে: কোচ এনরিকের উপরে নির্ভর স্পেনের ভবিষ্যৎ। ফাইল চিত্র।

ইউরো ২০২০-তে স্পেন যোগ্যতা অর্জন করবে কি না, তা নিয়ে একটা সময় রীতিমতো সংশয় ছিল। কিন্তু জার্মানির বিরুদ্ধে ৬-০ দুরন্ত জয়ের পরে দুশ্চিন্তা পুরোপুরি দূর হয়ে যায়।

Advertisement

‘ই’ গ্রুপের প্রথম ম্যাচে সুইডেনের বিরুদ্ধে অসাধারণ খেলেও আলভারো মোরাতারা জিততে পারেনি। তা সত্ত্বেও হতাশ হয়ে পড়িনি। জানতাম, যে কোনও প্রতিযোগিতার প্রথম ম্যাচ সব সময় কঠিন হয়। তার উপরে করোনায় আক্রান্ত হয়ে অধিনায়ক সের্খিয়ো বুস্কেৎস ছিল না। আমি নিশ্চিত ছিলাম, দ্বিতীয় ম্যাচে পোলান্ডকে হারিয়ে জয়ের সরণিতে ফিরবে স্পেন। মোরাতা গোল করে এগিয়ে দিয়েছিল। রবার্ট লেয়নডস্কি সমতা ফেরানোর পরে অবিশ্বাস্য ভাবে পেনাল্টি নষ্ট করেছিল জেরার মোরেনো।

পোলান্ডের বিরুদ্ধে ড্র করার পরে কিন্তু সত্যিই দুশ্চিন্তা হচ্ছিল। গ্রুপ পর্ব থেকেই ছিটকে যাবে না তো স্পেন? যদি তা হয় তা হলে কিন্তু অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠবে পরিস্থিতি। কোচ লুইস এনরিকে-কে নিয়ে এমনিতেই ক্ষোভ রয়েছে মাদ্রিদের মানুষের। ইউরো শুরু হওয়ার ঠিক আগে শুধু সের্খিয়ো র‌্যামোসকে বাদ দেওয়া নয়, রিয়াল মাদ্রিদের এক জন ফুটবলারকেও দলে রাখেননি উনি। যা নিয়ে প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ মাদ্রিদের মানুষ। এই অবস্থায় যদি স্পেন গ্রুপ পর্বের বাধা না পেরোতে পারে, তা হলে ফল হবে মারাত্মক।

Advertisement

আমার পরিচিত অনেকে খোলাখুলিই বলছিল, “এনরিকে নিজে বার্সেলোনার ফুটবলার ছিলেন। তার পরে ম্যানেজারও হয়েছেন। স্পেন জাতীয় দলের কোচ হওয়া সত্ত্বেও মানসিকতা বদলায়নি ওঁর। বার্সেলোনার একাধিক ফুটবলার রয়েছে, অথচ রিয়ালের এক জনকেও দলে রাখেননি এনরিকে। ইউরো ২০২০-তে স্পেনকে নিয়ে খুব একটা আশা না করাই ভাল।”

স্পেন দলে রিয়ালের কোনও ফুটবলারকে না রাখার এনরিকের এই সিদ্ধান্তে আমিও অবাক হয়েছিলাম। স্পেনের জাতীয় দলে আগে এই রিয়াল বনাম বার্সেলোনা দ্বন্দ্ব ভয়ঙ্কর ছিল। তার প্রভাব পড়ত মাঠে। কখনওই একটা দল হিসেবে খেলতে পারত না স্পেন। ২০০৪ সালে লুইস আরাগোনেস জাতীয় দলের দায়িত্ব নেওয়ার পরে শুরুতেই এই সমস্যা মেটাতে উদ্যোগী হন। এবং সফলও হন। ওঁর কোচিংয়েই নবরূপের স্পেন আত্মপ্রকাশ করে। ২০০৮ সালে ইউরোপ সেরা হয় স্পেন। দু’বছর পরে দক্ষিণ আফ্রিকায় বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হয় র‌্যামোস, জাভি হার্নান্দেস, আন্দ্রে ইনিয়েস্তারা। তখন অবশ্য কোচ ছিলেন ভিসেন্তে দেল বস্কি। তিনিও লুইস আরাগোনেসের পথই অনুসরণ করেছিলেন। ইউরো ২০১২-তেও চ্যাম্পিয়ন হয় স্পেন। ২০১৬ সালে দেল বস্কি দায়িত্ব ছাড়ার পর থেকেই আবার এই সমস্যা শুরু হয়।

মাদ্রিদের অধিকাংশ মানুষই মনে করেন, বার্সেলোনার প্রতিনিধি হিসেবেই জাতীয় দলে কোচিং করাচ্ছেন এনরিকে। গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে স্লোভাকিয়াকে ৫-০ হারিয়ে শেষ ষোলোয় যোগ্যতা অর্জন করায় কিছুটা হলেও চাপ কমেছে এনরিকের। তবে এ বার লড়াই কিন্তু আরও কঠিন। আজ, সোমবার ক্রোয়েশিয়ার বিরুদ্ধে জিততে না পারলে বিদায় কার্যত নিশ্চিত এনরিকের।

গ্রুপ পর্বের তিনটি ম্যাচই স্পেন খেলেছিল সেভিয়ায় ঘরের মাঠে। মাদ্রিদ থেকে প্রায় ৫৩০ কিলোমিটার দূরে হওয়ায় যেতে পারিনি। সোমবার ক্রোয়েশিয়ার বিরুদ্ধে মোরাতারা খেলবে কোপেনহাগেনে। আমি কিন্তু এই ম্যাচটা নিয়ে খুবই চিন্তিত। কারণ বিপক্ষে রয়েছে লুকা মদ্রিচের মতো যে কোনও মুহূর্তে ম্যাচের রং বদলে দেওয়ার মতো ফুটবলার। তা ছাড়া রিয়ালে খেলে বলে ওর প্রতি আলাদা দুর্বলতাও রয়েছে।

স্পেনকে অনেক অঙ্ক করে খেলতে হবে ক্রোয়েশিয়ার বিরুদ্ধে। এই ধরনের ম্যাচে এমনিতেই গোল করার সুযোগ খুব বেশি পাওয়া যায় না। তাই যখনই সুযোগ আসবে, তা কাজে লাগাতে হবে। দুই, মাঝমাঠে শুধু নিজেদের মধ্যে পাস খেললে হবে না। বিপক্ষের রক্ষণের উপরে ক্রমাগত চাপ বাড়িয়ে যেতে হবে স্লোভাকিয়া ম্যাচের মতো। যদিও ২০১৮-তে রাশিয়া বিশ্বকাপে রানার্স ক্রোয়েশিয়া অনেক বেশি শক্তিশালী প্রতিপক্ষ। তিন, মদ্রিচকে সব সময় নজরে রাখতে হবে। পেনাল্টি বক্সের কাছাকাছি জায়গা থেকে ওকে বল মারতে দেওয়া চলবে না। তবে করোনায় আক্রান্ত হয়ে ইভান পেরিসিচের ছিটকে যাওয়া বড় ধাক্কা ক্রোয়েশিয়ার। নির্বাসনের কারণে নেই রক্ষণের অন্যতম ভরসা দেয়ান লভরেনও। বিপক্ষের এই দুর্বলতার সুযোগ এনরিকের স্পেন নিতে পারে কি না,
এখন সেটাই দেখার।

(লেখক ইস্টবেঙ্গলের প্রাক্তন কোচ। সাক্ষাৎকারভিত্তিক অনুলিখন: শুভজিৎ মজুমদার)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement