সৌজন্য: সাংবাদিক বৈঠকের ফাঁকে আলেসান্দ্রো ও কিবু। নিজস্ব চিত্র
শিল্প বনাম শক্তির দ্বৈরথ!
কিবু ভিকুনার মতো ইস্টবেঙ্গল কোচ আলেসান্দ্রো মেনেন্দেস গার্সিয়াও স্পেনীয়। কিন্তু রবিবাসরীয় ডার্বিতে তাঁর কাছে যেন সুন্দর ফুটবল উপহার দেওয়ার চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ মোহনবাগানের জোসেবা বেইতিয়াদের গোল করতে না দেওয়া।
গোকুলম এফসির বিরুদ্ধে আগের ম্যাচে ১-৩ বিপর্যয়ের পর থেকেই সমর্থকদের সঙ্গে আলেসান্দ্রোর রক্তচাপ বেড়ে গিয়েছে রক্ষণ নিয়ে উদ্বেগে। তবে হারের জন্য সমর্থকেরা স্ট্রাইকার মার্কোস খিমেনেস দে লা এসপারা মার্তিনকে কাঠগড়ায় তুললেও, লাল-হলুদ শিবিরের মতে ডিফেন্ডারদের ভুলেই ডুবেছে দল।
রবিবারের লড়াই তো আরও কঠিন। বিপক্ষে দুরন্ত ছন্দে থাকা বেইতিয়ারা। স্পেনীয় তারকা এক দিকে যেমন গোল করছেন, তেমনই ফ্রান গঞ্জালেস, নংদম্বা নওরেমকে সঙ্গে নিয়ে আক্রমণের ঝড় তুলছেন। শুধু তা-ই নয়। মোহনবাগান এখন গোলের জন্য শুধু স্ট্রাইকারদের উপরেই নির্ভরশীল নয়। ডিফেন্ডার ড্যানিয়েল সাইরাস থেকে শুরু করে মিডফিল্ডার নওরেমও গোল করে ম্যাচ জেতাচ্ছেন। অথচ লাল-হলুদ রক্ষণের প্রধান ভরসা বোরখা গোমেস পেরেস নেই। আগের ম্যাচেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে চার ডিফেন্ডার মার্তি ক্রেসপি, আশির আখতার, কমলপ্রীত সিংহ ও অভিষেক অম্বেকরের মধ্যে বোঝপড়ার অভাব। এই পরিস্থিতির মোকাবিলায় প্রাক্তন গুরু জোসে মোরিনহোর বিখ্যাত ‘পার্ক দ্য বাস’ (রক্ষণে ফুটবলারের সংখ্যা বাড়িয়ে বিপক্ষকে গোল করতে না দেওয়ার পরিকল্পনা) রণনীতিই
ভরসা আলেসান্দ্রোর।
ডার্বিকে কেন্দ্র করে সবুজ-মেরুন সমর্থকদের মধ্যে যা উন্মাদনা, তার প্রায় কিছুই নেই ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের মধ্যে। শনিবার সকালে সল্টলেকের সাই ক্যাম্পাসের বাইরে খাইমে সান্তোস কোলাদো-দের দেখতে হাজির ছিলেন জনা পাঁচেক সমর্থক! কোচের অনুমতি না থাকায় তাঁরা অনুশীলন দেখতে পাননি। যদি দেখতেন, তা হলে অবাকই হতেন। অধিকাংশ সময় ডিফেন্ডারদেরই অনুশীলন করালেন স্পেনীয় কোচ।
গোকুলমের ফুটবলারেরা নিজেদের মধ্যে বল দেওয়া-নেওয়া করে বিনা বাধায় দ্রুত পৌঁছে যাচ্ছিলেন ইস্টবেঙ্গলের পেনাল্টি বক্সের সামনে। স্পেনীয় কোচ তাই মিডফিল্ডার কাশিম আইদারা, লালরিনডিকা রালতেকে বাড়তি দায়িত্ব দিচ্ছেন ডার্বিতে মাঝমাঠেই মোহনবাগানের আক্রমণ থামিয়ে দেওয়ার। এ ছাড়া রক্ষণ মজবুত করতে প্রথম একাদশে আশির আখতারের জায়গায় ফেরাতে পারেন মেহতাব সিংহকে। সাংবাদিক বৈঠকে আলেসান্দ্রো বলেছেন, ‘‘রক্ষণের চেয়েও মোহনবাগানের আক্রমণভাগ অনেক বেশি শক্তিশালী। ওদের আটকাতে অনেক বেশি মনঃসংযোগ করতে হবে।’’
পাপা বাবাকর জিয়োয়ারাদের আটকানোর পরিকল্পনা তো করলেন আলেসান্দ্রো। নিজের দলের ফুটবলারদের গোল করতে না পারার রোগ কী ভাবে সারাবেন তিনি? গত ১৪ ডিসেম্বর ট্রাউয়ের বিরুদ্ধে শেষ বার বিপক্ষের জালে বল জড়িয়েছিলেন এনরিকে এসকুয়েদার পরিবর্তে নেওয়া মার্কোস। তাঁকে সরানোর দাবিতে সরব লাল-হলুদ সমর্থকেরা। স্পেনীয় স্ট্রাইকার নিজেও প্রবল চাপে। বলছিলেন, ‘‘ডার্বিতে আমাকে গোল করতেই হবে।’’
লাল-হলুদ শিবিরে সমস্যা শুধু মাঠের মধ্যে নয়, বাইরেও! বিনিয়োগকারী সংস্থার সঙ্গে ক্লাব কর্তাদের সম্পর্ক যে তলানিতে পৌঁছে গিয়েছে, আরও এক বার স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে ডার্বির চব্বিশ ঘণ্টা আগে। শনিবার সকালে মাঠের বাইরে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলছিলেন ক্লাবের অন্যতম শীর্ষ কর্তা। তাঁকে বিনিয়োগকারী সংস্থার এক আধিকারিক থামানোর চেষ্টা করায় উত্তপ্ত হয়ে
ওঠে আবহ।