ব্রিজভূষণ শরণ সিংহ। —ফাইল চিত্র
ভারতীয় কুস্তি সংস্থার প্রধান ব্রিজভূষণ শরণ সিংহের বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশ করল দিল্লি পুলিশ। কেন্দ্রীয় সরকার প্রতিবাদী কুস্তিগিরদের আশ্বাস দিয়েছিল, ১৫ জুনের মধ্যে তদন্ত শেষ করা হবে। সেই মতো ১৫ জুনই ১০০০ পাতার চার্জশিট পেশ করা হয়েছে। ১৫০ জন সাক্ষীর বয়ান রেকর্ড করেছে পুলিশ। অন্য দিকে ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া পকসো ধারায় মামলা খারিজ করার আর্জিও জানিয়েছে দিল্লি পুলিশ। তাদের মতে, এই অভিযোগের পক্ষে কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তাই মামলা খারিজ করার আর্জি জানানো হয়েছে।
দিল্লি পুলিশের একটি দল বৃহস্পতিবার রাউস অ্যাভিনিউ কোর্টে গিয়ে ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশ করেন। চার্জশিটে ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৫৪ (জোর করে মহিলার শ্লীলতাহানির চেষ্টা), ৩৫৪এ (অশালীন মন্তব্য), ৩৫৪ডি (উত্ত্যক্ত করা) ধারায় অভিযোগ করা হয়েছে। এই ধারাগুলির মধ্যে ৩৫৪ জামিনঅযোগ্য। তবে বাকি দু’টি ধারা জামিনযোগ্য।
ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে মূল দু’টি মামলা দায়ের হয়েছিল। তার মধ্যে একটি ছিল পকসো ধারায় মামলা। সেখানে অভিযোগ করা হয়েছিল যে এক নাবালিকা কুস্তিগিরকে যৌন হেনস্থা করেছেন ব্রিজভূষণ। এই ঘটনা নিয়ে গত মঙ্গলবার মুখ খোলেন সেই নাবালিকা কুস্তিগিরের বাবা। তিনি জানান, মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছিল ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে। তাঁর মেয়ে একটি প্রতিযোগিতায় হেরে যাওয়ায় তিনি রেগে গিয়ে কুস্তি কর্তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছিলেন বলে জানিয়েছেন সেই ব্যক্তি। সেই অভিযোগের পক্ষে কোনও প্রমাণ দিল্লি পুলিশ পায়নি বলে জানিয়েছে। তারা দিল্লির পাতিয়ালা হাউস কোর্টে ৫০০ পাতার চার্জশিট পেশ করেছে।
দিল্লি পুলিশের এক আধিকারিক বলেছেন, ‘‘১৭৩ ধারার অধীনে আমরা একটা রিপোর্ট পেশ করেছি। সেখানে ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে পকসো ধারায় মামলা খারিজ করার আবেদন জানানো হয়েছে।’’ ৪ জুলাই এই মামলার পরবর্তী শুনানি।
গত ২৩ এপ্রিল থেকে ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে দিল্লির যন্তর মন্তরে ধর্না শুরু করেন বজরং পুনিয়া, সাক্ষী মালিক, বিনেশ ফোগটদের মতো কুস্তিগিরেরা। বার বার আবেদনের পরেও সরকার তাঁদের কথা না শোনায় গত ২৮ মে নতুন সংসদ ভবন অভিযান করেন সাক্ষীরা। সেই সময় দিল্লি পুলিশ তাঁদের জোর করে আটক করে। এই ঘটনার পরে দেশের হয়ে জেতা সব পদক হরিদ্বারে গঙ্গায় ভাসিয়ে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন কুস্তিগিরেরা। কিন্তু কৃষকনেতাদের হস্তক্ষেপে হরিদ্বারে গিয়েও ফিরে আসেন সাক্ষীরা। তাঁরা ৫ জুন পর্যন্ত সময়সীমা দেন কেন্দ্রকে।
এর পরেই পদক্ষেপ করে কেন্দ্র। কুস্তিগিরদের সঙ্গে বৈঠক করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ও কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর। বৈঠকে পাঁচটি দাবি করেন কুস্তিগিরেরা। তার মধ্যে কয়েকটি দাবি মেনে নেয় কেন্দ্র। আশ্বাস দেওয়া হয় যে ১৫ জুনের মধ্যে তদন্ত শেষ করা হবে। এই আশ্বাস পেয়ে আন্দোলন স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেন কুস্তিগিরেরা। এখন দেখার দিল্লি পুলিশের চার্জশিট পেশের পরে প্রতিবাদী কুস্তিগিরেরা কী পদক্ষেপ নেন।