ফাইল চিত্র।
প্রতিযোগিতা শুরু হওয়ার আগেই করোনা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ল আসন্ন আইপিএলে। যে আতঙ্কের কেন্দ্রে মুম্বই এবং ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়াম। যেখানে ১০ এপ্রিল হওয়ার কথা চেন্নাই সুপার কিংস বনাম দিল্লি ক্যাপিটালসের ম্যাচ।
শনিবার দুপুর থেকেই ছড়িয়ে পড়তে থাকে একে একে করোনা আক্রান্তদের খবর। জানা যায়, দিল্লি ক্যাপিটালসের স্পিনার অক্ষর পটেলের করোনা রিপোর্ট ‘পজ়িটিভ’ এসেছে। পাশাপাশি আবার ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে কর্মরত ১০ জন মাঠকর্মীর রিপোর্টেও করোনাভাইরাস ধরা পড়ে। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড নিযুক্ত ছ’জন ইভেন্ট ম্যানেজারের শরীরেও করোনাভাইরাস পাওয়া গিয়েছে। প্রশ্ন উঠে যায়, মুম্বইয়ে কি এই অবস্থায় ম্যাচ করা সম্ভব হবে? বিশেষ করে যেখানে মহারাষ্ট্রে করোনা আক্রান্তদের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। ১০ থেকে ২৫ এপ্রিলের মধ্যে ১০টি আইপিএল ম্যাচ হওয়ার কথা মু্ম্বইয়ে। এই মুহূর্তে দিল্লি ক্যাপিটালস, চেন্নাই সুপার কিংস, কলকাতা নাইট রাইডার্স, রাজস্থান রয়্যালস, পঞ্জাব কিংসের মতো দলগুলো মুম্বইয়েই অনুশীলন করছে। যদিও তাদের কেউ ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে এখনও যায়নি।
পরিস্থিতি দেখে ভারতীয় বোর্ড দুটি কেন্দ্রকে তৈরি থাকতে বলেছে বিকল্প হিসেবে। সেগুলি হল হায়দরাবাদ এবং ইনদওর। এর মধ্যে হায়দরাবাদের আইপিএল দল থাকলেও ইনদওরের কোনও দল নেই। সন্ধ্যায় অবশ্য ছবিটা একটু বদলেছে। জানা গিয়েছে, ভারতীয় বোর্ড এখনও আশাবাদী মুম্বইয়ে ম্যাচ করার ব্যাপারে। সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে বোর্ডের এক কর্তা বলেছেন, ‘‘হ্যাঁ, হায়দরাবাদকে আমরা একটা বিকল্প কেন্দ্র হিসেবে ভেবে রেখেছি। তবে এই মুহূর্তে মুম্বই থেকে ম্যাচ সরিয়ে নেওয়ার কথা ভাবছি না।’’
মুম্বই থেকে শেষ মুহূর্তে ম্যাচ সরিয়ে নেওয়াটা যে সহজ হবে না, তা বুঝেছে বোর্ড। এই মুহূর্তে নতুন করে জৈব সুরক্ষা বলয় তৈরি করা যে সহজ কাজ নয়, তা স্বীকার করেছেন ওই বোর্ড কর্তাটি। তিনি বলেছেন, ‘‘আর দিন ছয়েকের (৯ এপ্রিল) মধ্যেই আইপিএল শুরু হয়ে যাচ্ছে। এই অল্প সময়ে নতুন করে জৈব সুরক্ষা বলয় তৈরি করা কিন্তু রীতিমতো কঠিন কাজ। বাস্তব দিকটা হল, মুম্বই থেকে ম্যাচ সরানো বেশ কঠিন হবে।’’
বোর্ডকে চিন্তায় রেখেছে ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামের কর্মীদের মধ্যে সংক্রমণের হার। দু’দিনের মধ্যে সংখ্যাটা ১০ ছুঁয়ে গিয়েছে। বোর্ডের কর্তাটি বলেছেন, ‘‘শুক্রবার পর্যন্ত সংখ্যাটা আট ছিল। এ দিন ১০ হয়েছে। ওদের বাড়ি পাঠিয়ে নিভৃতবাসে রাখা হয়েছে।’’ মুম্বই ক্রিকেট সংস্থার এক কর্তার মন্তব্য, ‘‘আমরা অন্য জায়গা থেকে নতুন মাঠকর্মীদের ওয়াংখেড়েতে নিয়ে আসছি।’’
দিল্লি ক্যাপিটালসের তরফে এ দিন এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘অলরাউন্ডার অক্ষর পটেল কোভিড পজ়িটিভ। ২৮ মার্চ নেগেটিভ কোভিড রিপোর্ট-সহ দিল্লি শিবিরে যোগ দেন অক্ষর। কিন্তু তাঁর দ্বিতীয় রিপোর্ট পজ়িটিভ এসেছে।’’ বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘‘অক্ষরকে এখন আলাদা করে রাখা হয়েছে। দলের চিকিৎসকেরা ওঁর প্রতি নজর রেখেছেন।’’
গত বার সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে আইপিএল শুরু হওয়ার আগে চেন্নাই সুপার কিংসের জনা দুয়েক ক্রিকেটার-সহ বেশ কিছু সদস্য করোনায় আক্রান্ত হন। শেষ পর্যন্ত অবশ্য কোনও সমস্যা ছাড়াই আইপিএল অনুষ্ঠিত হয়। এ বারও সিএসকে-র এক সদস্য করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। তবে জানা গিয়েছে, তাঁর ক্রিকেট দলের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক নেই। তিনি জৈব সুরক্ষা বলয়ের অন্তর্গতও ছিলেন না।
উদ্বেগের ব্যাপার হল, মহারাষ্ট্রে শুক্রবারই নতুন আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৪৭ হাজার। কিছু দিনের মধ্যে ছোটখাটো লকডাউনের ঘোষণা হওয়াটা অস্বাভাবিক কোনও ব্যাপার হবে না। সে রকম পরিস্থিতি হলে কী হবে? বোর্ডের ওই পদাধিকারী বলেছেন, ‘‘দেখুন, লকডাউন হলেও এমনিতে কোনও সমস্যা হবে না। দলগুলো সব জৈব সুরক্ষা বলয়ের মধ্যেই আছে। তার উপরে মাঠে কোনও দর্শক থাকবে না। তাই আমরা আশা করছি, শেষ পর্যন্ত মুম্বইয়ে ম্যাচ করতে পারব।’’ তবে পরিস্থিতি হাত থেকে বেরিয়ে গেলে হায়দরাবাদ, ইনদওরের কথা ভাবা হবে। ‘‘যে কারণে ওদের বিকল্প কেন্দ্র হিসেবে তৈরি থাকতে বলা হয়েছে,’’ বলেছেন ওই কর্তাটি।
এর আগে কলকাতা নাইট রাইডার্সের ব্যাটসম্যান নীতীশ রানার করোনা রিপোর্টও ‘পজ়িটিভ’ আসে। কিন্তু পরে তাঁর রিপোর্ট ‘নেগেটিভ’ আসায় সমস্যা মিটে যায়। বাঁ-হাতি স্পিনার অক্ষরের করোনায় আক্রান্ত হওয়াটা দিল্লির কাছে বড় ধাক্কা। তাদের প্রথম ম্যাচ ১০ তারিখ। বোর্ড যে স্বাস্থ্যবিধি জারি করেছে, তাতে স্পষ্ট লেখা, ‘‘১০ দিনের নিভৃতবাস পর্বে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে পুরো বিশ্রামে থাকতে হবে। কোনও রকম ব্যায়াম করা চলবে না। পরিস্থিতি খারাপ হলে সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।’’ দিল্লি এর আগে চোটের কারণে তাদের অধিনায়ক শ্রেয়স আয়ারকে হারায়। তাঁর জায়গায় অধিনায়ক হয়েছেন ঋষভ পন্থ। এ বার অক্ষরও খেলতে না পারলে দিল্লির সমস্যা বাড়বে।