June Malia and CAB

ক্রিকেট প্রশাসনের বৈঠকে থেকে ইতিহাসই গড়ে বসলেন জুন মাল্য, কিন্তু কী ভাবে, কী কারণে

মেদিনীপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার হয়ে সোমবার সিএবি-র বার্ষিক সাধারণ সভায় এসেছিলেন জুন মাল্য। এই অভিনেত্রী তৃণমূল বিধায়ক হঠাৎ সিএবি-তে কেন? উঠছে প্রশ্ন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০২২ ১৬:৩১
Share:

অভিনেত্রী, তৃণমূল বিধায়ক জুন মাল্য। তাঁর সিএবি-র সভায় যাওয়া নিয়ে শুরু হয়েছে জল্পনা। ফাইল ছবি

বিনোদন জগতের লোকজন চিরকালই সমাজে অন্যদের চেয়ে খানিক এগিয়ে। সে পরিচিতিতেই হোক বা প্রভাবে। তার উপরেও সাম্প্রতিক কালে দেখা গিয়েছে তাঁদের জন্য বিবিধ দরজা খুলে যাচ্ছে। কেউ বিধায়ক হচ্ছেন, কেউ সাংসদ। কেউ কেউ বিভিন্ন সরকারি কমিটির সদস্য। আর তেমন কিছু না হলে সিএবি!

Advertisement

অভিনেত্রী জুন মাল্যের সিএবি-র বৈঠকে যোগ দেওয়ার সূত্রেই অনেকে এমন কথা বলছেন। কখনও সখনও গ্যালারির দর্শক ছাড়া জুনকে কেউ কোনও দিন ক্রিকেটের ধারেপাশে দেখেছেন বলে ‘অভিযোগ’ নেই। সেই তিনিই মেদিনীপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার তরফে সিএবি-তে।

জুন অভিনেত্রী। ঘটনাপ্রবাহে তিনি এখন রাজনীতিকও এবং শাসকদলের বিধায়কও বটে। সেই ঘটনাপ্রবাহেই তিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘ঘনিষ্ঠ’ বৃত্তে রয়েছেন। সেই কারণেই জুনের আচমকা ক্রিকেট প্রশাসনে আগমন নিয়ে জল্পনা এবং আলোচনা শুরু হয়েছে। বস্তুত, জুনের আগে কোনও মহিলা বিধায়ক বা রাজনীতিক রাজ্যের ক্রিকেট প্রশাসনে অন্তত সাম্প্রতিক কালে এসেছেন বলে তথ্যাভিজ্ঞেরা মনে করতে পারছেন না। সেদিক থেকে দেখতে গেলে একটি ইতিহাসই গড়ে বসেছেন তিনি। কিন্তু পাশাপাশিই জন্ম দিয়েছেন একাধিক জল্পনার।

Advertisement

অনেকে মনে করছেন, এর পিছনে ‘দিদির হাত’ রয়েছে। সেই আলোচনার মধ্যেই জল্পনাও শুরু হয়েছে— দিদি সিএবি প্রশাসনে হস্তক্ষেপ করতে চান, না কি চান না? তেমন মনে হওয়ার কারণ সিএবি প্রশাসনে সাম্প্রতিক রদবদল। যেখানে মুখ্যমন্ত্রীর ‘আস্থাভাজন’ বিশ্ব মজুমদার সিএবি-র প্রশাসনে আসার জন্য তৈরি হয়েও শেষমেষ ঘটনাপ্রবাহে আসতে পারেননি। তৃণমূলের একাংশের অনুমান, জুনকে ‘বোড়ে’ হিসেবে সিএবি-র প্রশাসনের অংশ হিসাবে সামনে ঠেলে দিয়ে নতুন প্রশাসনে ‘জল মাপতে’ চাইছে তৃণমূল শিবির।

সিএবি-র বার্ষিক সাধারণ সভায় সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে জুন মাল্য। ছবি: ফেসবুক

আবার অন্য অনেকের মতে, মমতা সিএবি প্রশাসনে ‘হস্তক্ষেপ’ করতে চাইলেও জুনের মতো কাউকে দিয়ে তা করাবেন না। দলের এক নেতার কথায়, ‘‘পরিস্থিতি বোঝার জন্য জুন ছাড়া অন্য অনেকে ছিলেন। দিদির তো মাথা খারাপ হয়ে যায়নি যে, জুনকে সিএবি-র প্রশাসনে পাঠিয়ে পরিস্থিতি বুঝবেন!’’ ওই ‘ক্রীড়ামনস্ক’ নেতার আরও বক্তব্য, জুন সিএবি-তে এলে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় এবং তাঁর শিবির কিছু দিনের মধ্যেই তাঁকে ‘নিজেদের লোক’ করে নেবেন। তখন জুন তৃণমূলের কম, সিএবি-র বেশি হয়ে যাবেন!

অন্য একটি জল্পনা বলছে, জুনের স্বামীর একটি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সংস্থা আছে। তারা একটা সময় ‘স্পোর্টস ম্যানেজমেন্ট’-এর কাজও করত। সেই সূত্রেই জুনের সিএবি-তে আগমন। আবার অন্য একাংশের বক্তব্য, তা নয়। কারণ, প্রথমত এখন জুনের স্বামীর সংস্থা ক্রীড়াক্ষেত্রে কাজ করে না। দ্বিতীয়ত, জুন সিএবি-র গভর্নিং বডিতে না থাকলেও সংস্থার নির্বাচনে তাঁর একটি ভোট থাকবে। জুন সিএবি-তে সক্রিয় হওয়ার পর তাঁর স্বামীর সংস্থা সেখানে যুক্ত হলে তা ‘স্বার্থের সংঘাত’-এর আওতায় পড়বে। ফলে সেই যুক্তি বা জল্পনাও ধোপে টিকছে না।

তা হলে কেন সিএবিতে জুন?

মেদিনীপুর জেলা প্রশাসনের ব্যাখ্যা মানতে গেলে ‘ঔপচারিক’ পদ্ধতিতে। প্রথমত, জুনের সিএবি-তে আগমন শুধু গত সোমবারের বার্ষিক সাধারণ সভার জন্যই। পরের বছরও যে তিনিই সিএবি-তে প্রতিনিধিত্ব করবেন, তা নিশ্চিত নয়। কারণ, নির্বাচন না হওয়ায় এখন মেদিনীপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থা চালাচ্ছে প্রশাসক কমিটি। পদাধিকার বলে যার শীর্ষে রয়েছেন জেলাশাসক। তিনিই জুনকে মনোনীত করেছেন। এর পর সংস্থার নির্বাচন হয়ে যাবে। তখন যিনি সভাপতি এবং সচিব নির্বাচিত হবেন, তাঁরাই ঠিক করবেন, সিএবি-তে তাঁদের হয়ে কে প্রতিনিধিত্ব করবেন। তখনও জুনই মনোনীত হন কি না, সেটাই দেখার।

মেদিনীপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার ফুটবল সচিব গৌরীশঙ্কর সরকার আনন্দবাজার অনলাইনকে জানিয়েছেন, জুনের মনোনয়ন হয়েছে জেলাশাসক আয়েশা রানির ইচ্ছানুসারে। গৌরীশঙ্করের বক্তব্য, ‘‘উনি (জেলাশাসক) পদাধিকার বলে আমাদের সংস্থার সভাপতি। উনিই ঠিক করেছেন সিএবি-তে আমাদের হয়ে কে যাবেন।’’

কেন জুনকে মনোনীত করা হল? গৌরীশঙ্করের কথায়, ‘‘আমাদের সংবিধান অনুযায়ী যতক্ষণ না নতুন কমিটি তৈরি হচ্ছে, পুরনো কমিটিই কাজ চালাবে। আমরা সাত-আট জন সই করে জেলাশাসককে একটা চিঠি দিয়ে বলেছিলাম, কমিটির সকলের সঙ্গে আলোচনায় বসুন। সেখানেই ঠিক করা হবে, কাকে সিএবি-তে পাঠানো হবে। কিন্তু উনি আমাদের সঙ্গে কথা বলেননি। ওঁর বিবেচনা মতো এক জনকে পাঠিয়েছেন। যাঁকে পাঠানো হয়েছে, কেন তাঁকে বাছা হল, সেটা আমাদের কাছে অজানা।’’

জেলা ক্রীড়া সংস্থার যুগ্মসচিব সুতীর্থ সাহু মেদিনীপুর জেলার ক্রিকেটের দায়িত্বে। তিনিও একই কথা জানিয়েছেন। তবে ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ হল, গৌরীশঙ্কর জেলাশাসককে যে চিঠি দেওয়ার কথা বলেছেন, সেই চিঠিতে সই ছিল না সুতীর্থের। তাঁর কথায়, ‘‘কী ভাবে কার নাম মনোনীত হল বলতে পারব না।’’

জেলাশাসক আয়েশা রানির সঙ্গেও যোগাযোগ করেছিল আনন্দবাজার অনলাইন। তাঁর জবাব, ‘‘এখন যেহেতু ক্রীড়া সংস্থায় কোনও বোর্ড নেই, তাই ওঁকে পাঠিয়েছি। আমিই বেছেছি ওঁকে। উনি এখানকার বিধায়ক, মানুষের প্রতিনিধি। খেলাধুলোর প্রতি ওঁর যথেষ্ট আগ্রহ আছে। নিয়মিত শালবনীর স্টেডিয়ামেও আসেন। জঙ্গলমহলের খেলাধুলো নিয়ে অত্যন্ত উৎসাহী।’’

অর্থাৎ যা দাঁড়াল— আনুষ্ঠানিক কারণ: জেলা ক্রীড়াসংস্থার কোনও নির্বাচিত প্রতিনিধি না-থাকায় নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হিসাবে সিএবি-র সভায় ছিলেন জুন। রাজনৈতিক জল্পনা: মুখ্যমন্ত্রীর ‘ঘনিষ্ঠ এবং আস্থাভাজন’ হওয়ায় রাজ্য ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ামক সংস্থার বৈঠকে জুন।

এর মধ্যে কোনটি সত্যি, তা জানার জন্য আগামী বৈঠক পর্যন্ত অপেক্ষা থাকবে রাজনৈতিক এবং ক্রিকেট মহলের। জেলা ক্রীড়া সংস্থায় নতুন সভাপতি এবং সচিব নির্বাচনের পরেও যদি তৃণমূল বিধায়ক জুন ক্রিকেটের ময়দানে থেকে যান, তা হলে সঙ্কেত খুব স্পষ্ট— রাজ্যের ক্রিকেট প্রশাসনে তৃণমূলের জুনকে বড় ইনিংস খেলতেই নামানো হয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement