প্রশ্ন কোহলীকে নিয়েও ফাইল চিত্র
বুধবার সেঞ্চুরিয়ন টেস্টের চতুর্থ দিন মধ্যাহ্নভোজের পরে প্রথম বলেই আউট হয়ে যান বিরাট কোহলী। মার্কো জানসেনের বলে উইকেটেররক্ষকের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি। আউট হওয়ার পর দেখা যায় সাজঘরে বেশ কিছুক্ষণ ধরে কোহলী মাথা নাড়ছেন, হতাশা-বিরক্তি প্রকাশ করছেন।
তাঁর আউট নিয়ে কোনও সন্দেহের অবকাশ ছিল না। কোহলীর বিরক্তির কারণ তিনি নিজেই। ২০১৮ সালে লর্ডস টেস্ট থেকে ধরলে বিদেশের মাটিতে গত ১৮টি টেস্টের ৩২টি ইনিংসে কোহলী উইকেটের পিছনে ক্যাচ দিয়ে আউট হয়েছেন ২৩ বার। এর মধ্যে বিদেশের মাটিতে শেষ ১০টি ইনিংসের প্রত্যেকটিতে কোহলী এ ভাবেই আউট হয়েছেন।
কখনও উইকেটরক্ষক, কখনও প্রথম স্লিপ, কখনও দ্বিতীয় স্লিপ, কখনও বা কোহলীর ক্যাচ জমা পড়েছে গালিতে। অফস্টাম্পের বাইরে বেরিয়ে যাওয়া বলে বারবার কভার ড্রাইভ মারতে গিয়ে আউট হচ্ছেন তিনি।
বিদেশের মাটিতে গত ৩২টি ইনিংসের মধ্যে যে ২৩ বার উইকেটের পিছনে ক্যাচ দিয়ে কোহলী আউট হয়েছেন, তার মধ্যে ন’ বার উইকেটরক্ষকের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন। আট বার কোহলীর ক্যাচ গিয়েছে প্রথম স্লিপে, তিন বার দ্বিতীয় স্লিপে, তিন বার গালিতে।
এই ২৩টি ইনিংসে অফস্টাম্পের বাইরের বল তাড়া করতে গিয়ে খোঁচা দিয়ে কোহলী যে শুধু জোরে বোলারদের বলেই আউট হয়েছেন, তা নয়। স্পিনারদের বলেও এই ভাবে আউট হয়েছেন তিন বার। এঁদের মধ্যে দুই অফস্পিনার মইন আলি এবং নেথান লায়ন সামনের পায়ে নিয়ে এসে কোহলীকে ফিরিয়েছেন। লেগ স্পিনার আদিল রশিদকেও ড্রাইভ মারতে গিয়ে উইকেটের পিছনে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন কোহলী। তিনটি ক্ষেত্রেই তাঁর ক্যাচ গিয়েছে প্রথম স্লিপে। জোরে বোলারদের মধ্যে প্যাট কামিন্স এবং অলি রবিনসন তিন বার করে উইকেটের পিছনে কোহলীকে ফিরিয়েছেন।
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠছে, যে কভার ড্রাইভ কোহলীর সবথেকে দৃষ্টিনন্দন শট, সেটিই কি একই সঙ্গে কোহলীর সবথেকে বড় দুর্বলতাও? বিশেষ করে বিদেশের মাটিতে জোরে বোলাররা কি ইচ্ছে করে ক্রমাগত অফস্টাম্পের বাইরে বল করে কোহলীকে ড্রাইভের লোভ দেখিয়ে আউট করছেন? কোহলীর দুর্বলতা কি প্রকাশ্যে চলে এসেছে?
ভারতীয় দলের ব্যাটিং কোচ বিক্রম রাঠৌর অবশ্য তা মানতে নারাজ। বুধবারের খেলার পর তিনি বলেন, ‘‘এই শটটাই তো কোহলীকে প্রচুর রান দিয়েছে। এটাই ওর মূল শট। তাই এই শটটা পুরোপুরি ওর সিলেবাস থেকে বাদ দিয়ে দেওয়াটা তো ঠিক নয়। অবশ্যই এটা দেখতে হবে, কখন এই শটটা খেলবে, কখন খেলবে না। পরিকল্পনাটা ঠিকঠাক দরকার। অর্থাৎ কোন বলে কভার ড্রাইভ মারবে, সেটা সঠিক ভাবে বাছা দরকার।’’
সুনীল গাওস্কর অবশ্য বিরক্ত কোহলীর আউট হওয়ার ধরন দেখে। বুধবার ধারাভাষ্য দেওয়ার সময় তিনি বলেন, ‘‘ব্যাট করার সময় কোহলীর নীচের হাতের প্রাধান্য থাকে। তাই বাইরের বল দেখলেই ওর ব্যাট সেটা তাড়া করতে চলে যায়। দেখাই যাচ্ছে, কতটা বাইরে দিয়ে বলটা যাচ্ছে। অনায়াসে ছেড়ে দিতে পারত। লাঞ্চের পরে প্রথম বল, এ ভাবে তাড়া করা উচিত হয়নি।’’
এখন প্রশ্ন, কোহলী দলের ব্যাটিং কোচের কথা শুনবেন, না কি বিশ্বের প্রথম ব্যাটার হিসেবে দশ হাজার টেস্ট রানের মাইলফলকে পৌঁছনো মানুষটির কথা শুনবেন, না কি নিজের বুদ্ধি প্রয়োগ করে খোঁচা দেওয়ার অভ্যাস থেকে বেরোবেন, সেটা তিনিই জানেন।
সবাই চেতেশ্বর পুজারা, অজিঙ্ক রহাণের রান না পাওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। পরিসংখ্যান বলছে, কোহলীও এই দু’জনের থেকে খুব একটা পিছিয়ে নেই। গত দু’টি বছর তাঁর ক্রিকেটজীবনে সব থেকে খারাপ গিয়েছে। ২০২০ সালে তিনটি টেস্ট খেলে তাঁর ব্যাটিং গড় ১৯.৩৩। এই বছর ১১টি টেস্ট খেলে তাঁর গড় ২৮.২১। এই দু’ বছরে শতরান তো দূরের কথা, একটি ইনিংসেও ৭৫ রান পার করতে পারেননি। অর্ধশতরান মাত্র পাঁচটি। শূন্য রানে আউট হয়েছেন চার বার। গত দু’ বছরে মোট রান করেছেন ৬৫২, গড় ২৬.০৮। যদিও সব মিলিয়ে তাঁর ব্যাটিং গড় এখনও পঞ্চাশের উপরে। কিন্তু সেটা নামতে নামতে এখন ৫০.৩৪-এ এসে ঠেকেছে।