শতরানের পর যশ ছবি টুইটার
বুধবার রাত জেগে ম্যাচ দেখেছেন। বৃহস্পতিবার যে একটু বেশিক্ষণ ঘুমোবেন, সেই উপায় ছিল না বিজয় ঢুলের। সকাল থেকেই বেজে চলেছে মোবাইল। নানা প্রান্ত থেকে পাচ্ছেন শুভেচ্ছার বার্তা। হবে না-ই বা কেন। তাঁর ছেলের নাম যে বুধবার রাতের পর থেকে ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমীদের ঘরে ঘরে। অস্ট্রেলীয় বোলারদের উপরে দাপট দেখিয়ে শতরান করে যশ ঢুল দেশকে তুলে দিয়েছেন অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের ফাইনালে। ছেলের সাফল্যে গর্বিত বাবা তাই প্রতিটি মুহূর্ত উপভোগ করছেন তারিয়ে তারিয়ে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে আনন্দবাজার অনলাইনকে বললেন, “সত্যি নিজেকে প্রচণ্ড গর্বিত লাগছে। এ রকম একটা ইনিংস ওর থেকে প্রত্যাশা করেছিলাম। জানতাম টপ অর্ডারে কেউ না কেউ দাঁড়িয়ে গেলে ম্যাচ আমরাই জিতব। কিন্তু কাল দুই ওপেনার দ্রুত ফিরে যাওয়ার পর ও আর রশিদ মিলে দাপট দেখাল, তাতে খুবই তৃপ্ত লাগছে নিজেকে। নিজের ইনিংসকে অনায়াসে নিয়ন্ত্রণ করেছে ও। ম্যাচের চাপ নিজের উপরে পড়তে দেয়নি।”
যশের ক্রিকেটজীবনে বাবা বিজয়ের প্রভাব সব থেকে বেশি। নিজে এক প্রসাধনী সংস্থার বড় পদে কর্মরত ছিলেন। কিন্তু ছেলের ক্রিকেট খেলার স্বপ্ন সত্যি করতে সে সমস্ত জলাঞ্জলি দেন। ১১ বছর বয়সে বাল ভবন স্কুল অ্যাকাডেমিতে ভর্তি হওয়ার পর থেকে যশের ক্রিকেটজীবন অন্য দিকে মোড় নেয়। প্রথমে দিল্লির অনূর্ধ্ব-১৪ দল। তারপরে বিভিন্ন বয়সভিত্তিক প্রতিযোগিতায় একের পর এক সাফল্য। পরে অনূর্ধ্ব-১৯ রাজ্য দলের হয়ে খেলা। গত বছর বিনু মাঁকড় ট্রফিতে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হয়েছিলেন যশ। ছেলের ক্রিকেট স্বপ্ন সত্যি করতে অনেক আত্মত্যাগ করতে হয়েছে ঢুল পরিবারকে।
সেমিফাইনালে শতরান এসেছে। ফাইনালেও কি ছেলের থেকে বড় ইনিংস চান? বিজয়ের সপাটে জবাব, “একেবারেই নয়। দেশ ফাইনালে উঠেছে, এটাই বড় ব্যাপার। আমি দলের হাতে ট্রফি দেখতে চাই। যশ যদি ভাল রান করে তা হলে সেটা অতিরিক্ত খুশি। কিন্তু দেশের আগে কিছুই নয়। আমি বেশি গর্বিত হব যদি ইংল্যান্ডকে হারিয়ে ও কাপ জিতে ফিরতে পারে। যে কোনও বাবাই সেটা চাইবে। ব্যক্তিগত সাফল্য পরে, আগে দেশ।”
বিজয় জানালেন, যশের মানসিকতাই তাঁকে বাকিদের থেকে আলাদা করে দেয়। বলেছেন, “ক্রিজে নামলে ওর মানসিকতাই পাল্টে যায়। চাপের মুখেও তাই ভেঙে পড়ে না। নিজের ১০০ শতাংশ দিয়ে আসতে চায় ক্রিজে। সব সময় ইতিবাচক থাকে। কাল এমন একটা পরিস্থিতিতে ব্যাট করতে নেমেছিল যেখানে যা খুশি হতে পারত। কিন্তু ওর এবং রশিদের ইনিংস ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। এটা ছোট থেকেই আমি দেখছি।”
গত বার বাংলাদেশের কাছে হারলেও এ বার ভারত জিতবে। এমনটাই মনে করছেন বিজয়। বলেছেন, “এ বার আমি আত্মবিশ্বাসী। শুরু থেকেই দলটা ভাল খেলছে। করোনা আক্রান্ত হয়েও কারওর মনোবলে একটুও চিড় ধরেনি। তাই ভারতের জেতার ব্যাপারে আশাবাদী।”
অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে খেলতে খেলতেই আইপিএল-এ সুযোগ পেয়েছিলেন বিরাট কোহলী। কালক্রমে তিনি ভারত তথা বিশ্বের সেরা ব্যাটার হয়ে ওঠেন। তবে ছেলেকে নিয়ে এখনই দূরের কথা ভাবতে রাজি নন বিজয়। বললেন, “আগে দেশের হয়ে ভাল খেলুক। আইপিএল নিয়ে পরেও ভাবা যাবে। এখন দেশের হয়ে খেলাকেই গুরুত্ব দেওয়া উচিত ওর।”