শেষ ভারতের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ সফর। —ফাইল চিত্র
ভারতীয় দল বৃহস্পতিবার ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ১০ উইকেটে হারের পর একাধিক কারণ উঠে আসছে। ইংল্যান্ডের এক সংবাদমাধ্যমে ভারতের হারের তেমনই বেশ কিছু দিক তুলে ধরেছেন নাসের হুসেন। ইংল্যান্ডের প্রাক্তন অধিনায়ক নিজের জয় নিয়ে যেমন উচ্ছ্বসিত, তেমনই ভারতের হার নিয়েও মন্তব্য করেন তিনি।
নাসের তাঁর কলমে লেখেন, “অসাধারণ জয়। সাদা বলের ক্রিকেটে এটা ইংল্যান্ডের অন্যতম সেরা পারফরম্যান্স। একটা কথা মনে রাখা প্রয়োজন, এটা সেই ভারতীয় দল যাদের নিয়েই শুধু কথা হচ্ছিল। হার্দিক পাণ্ড্যর শেষ ৫ ওভারে ব্যাটিং ছাড়া পুরো ম্যাচেই রাশ ছিল ইংল্যান্ডের হাতে। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের নক আউট পর্বে ভারতের মতো দলকে এ ভাবে হারানো সত্যিই প্রশংসনীয়।”
ভারত এবং ইংল্যান্ডের মধ্যে পার্থক্য খুঁজে পেয়েছেন নাসের। তিনি লেখেন, “নিজেদের পাওয়ার প্লে কাজে লাগানোটাই পার্থক্য তৈরি করে দিল দুই দলের মধ্যে। আমি আগেই বলেছিলাম যে, ভারতের প্রথম দিকের ব্যাটাররা একটু পুরনো ঘরানার ক্রিকেট খেলে। ওদের প্রাক্তন কোচ রবি শাস্ত্রীও বলেছে যে, ভারতের খেলার ধরন পাল্টানো উচিত। কিন্তু ধীর গতিতেই খেলল। ভারতের বোঝা উচিত ছিল যে, ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে আরও বেশি রান প্রয়োজন। হার্দিক না থাকলে হয়তো আরও কম রানে শেষ হয়ে যেত ভারত। ভারতের ভাবনাটাই এরকম। রোহিত শর্মা সাদা বলের ক্রিকেটের অন্যতম সেরা ক্রিকেটার। লোকেশ রাহুল টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের সেরাদের মধ্যে থাকবে। এর পর বিরাট কোহলি, সূর্যকুমার যাদব, হার্দিক পাণ্ড্য এবং ঋষভ পন্থ রয়েছে। এমন একটা ব্যাটিং নিয়ে কথা হচ্ছে যাদের থেকে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ১০ ওভারে ৬৬ রানে ২ উইকেটটা মেনে নেওয়া যায় না।”
ভারতের এমন অবস্থা করার জন্য নাসের প্রশংসা করেছেন জস বাটলারের অধিনায়কত্বের। ইংল্যান্ডের প্রাক্তন অধিনায়ক লেখেন, “ভারতীয় ব্যাটারদের বাটলার চিন্তা করতে বাধ্য করাল, কী ভাবে রান করতে হবে। ভারতকে যদি রান তাড়া করতে হত, তা হলে ওরা জানত যে ওভারে কত রান করে প্রয়োজন। কিন্তু এখানে ভারত বুঝতেই পারেনি কত রান তোলা উচিত। এর পর বল করতে এসে ওরা ভরসা করেছিল ভুবনেশ্বর কুমারের উপর। জস বাটলারের বিরুদ্ধে যার ভাল রেকর্ড। কিন্তু সেটা সফল হল না। সেই সঙ্গে অ্যালেক্স হেলসের ব্যাট ছিল। ভারত কোনও উত্তর খুঁজে পেল না।”
সেমিফাইনালে ভারত অক্ষর পটেলকে খেলায়। নাসেরের মতে ভারতীয় অলরাউন্ডারের বিরুদ্ধে হেলস ভাল পরিকল্পনা নিয়েছিলেন। তিনি লেখেন, “হেলস খুব ভাল ‘অ্যাঙ্গল’ খুঁজে বার করছিল অক্ষরের বিরুদ্ধে। ক্রিজের বাইরের দিক থেকে লেগ সাইডে খেলছিল ও। সবাই সূর্যকুমারের শট খেলা নিয়ে কথা বলছিল, কিন্তু হেলস এ দিন অসাধারণ খেলল। মাঠের বাইরে কী হয়েছে সেটা আমি মাঠে আনতে চাই না। আমি অনেক দিন ধরে বলে আসছি যে হেলস প্রায়শ্চিত্ত করেছে। ও যে ক্রিকেটটা খেলে, আমি সেটার ভক্ত। ওকে মাঠে ফিরিয়ে আনা প্রয়োজন ছিল। ওর অভিজ্ঞতা এবং খেলার ধরন এই প্রতিযোগিতায় নতুন মাত্রা পেয়েছে। শেষ তিনটি ম্যাচে ও নিজের জাত চিনিয়েছে।”
শুধু ক্রিকেটারদের নয়, নাসের প্রশংসা করেছেন ক্রিকেট কর্তা রব কি-র। নাসের লেখেন, “জনি বেয়ারস্টোর পা ভেঙে যাওয়ার পর হেলসকে ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্তটা সঠিক ছিল। শেষের দিকে বাটলার আক্রমণ করার সিদ্ধান্ত নেয়। বিশ্বকাপের ফাইনালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে খেলার জন্য যে মুখিয়ে রয়েছে সেটা বুঝিয়ে দেয়। এমন কিছু শট ওরা খেলেছে যা অবিশ্বাস্য।”
নাসেরের মতে ইংল্যান্ডের ব্যাটিং এবং বোলিং একে অপরের পরিপূরক হয়ে উঠেছে। তিনি লেখেন, “ইংল্যান্ডের ব্যাটিং দেখিয়ে দেয় যে, ওরা কত ভাল বোলিং করেছে। ক্রিস ওকস নতুন বলে দারুণ বল করে। স্যাম কারেন যখনই বল করতে এসেছে, বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে বল করেছে। যে দলের কাছে স্পিন খেলা জলভাত, তাদের বিরুদ্ধে অসাধারণ বল করল আদিল রশিদ। অধিনায়ক হিসাবে এটা বাটলারের অন্যতম সেরা ম্যাচ। পন্থ ব্যাট করতে নামার আগেই ও বাটলারের ওভার শেষ করে দিয়েছিল। শেষের দিকের জন্য রেখে দিয়েছিল ক্রিস জর্ডনকে। এটাও মনে রাখা প্রয়োজন যে, ইংল্যান্ড কিন্তু সেমিফাইনালে পায়নি মার্ক উড এবং দাউইদ মালানকে। যে কোনও দলের কাছেই যা খুব বড় ঘটনা হয়ে যেতে পারত। কিন্তু এই ইংল্যান্ড দল বুঝিয়ে দিল তাদের দলের গভীরতা কতটা।”
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে ইংল্যান্ডকেই এগিয়ে রাখছেন নাসের। তিনি লেখেন, “এটা বাটলারের দল। ম্যাচ শেষে সব ক্রিকেটারের মুখে হাসিটা দেখার মতো ছিল। শেষ কিছু ম্যাচে অইন মর্গ্যানের পরিবর্ত হিসাবে নিজেকে স্থাপন করেছে বাটলার। ইংল্যান্ডকে এ বার খুব তাড়াতাড়ি ঘুরে দাঁড়াতে হবে। আনন্দ করার অবকাশ নেই। মেলবোর্ন যেতে হবে, অনুশীলন করতে হবে এবং নেমে পড়তে হবে ফাইনাল খেলতে। যদি বৃষ্টি বাধা দেয়। ১৯৯২ সালের ৫০ ওভারের ক্রিকেটের মতো হচ্ছে। ইমরান খানের পাকিস্তানের মতো ওরা ফাইনালে উঠেছে। কিন্তু ইংল্যান্ড যদি বৃহস্পতিবারের মতো খেলতে পারে তা হলে ওরা বিশ্বের যে কোনও দলকে হারাতে পারে।”