দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে হার দিয়ে শুরু সূর্যকুমারদের। —ফাইল চিত্র।
বৃষ্টির জন্য ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচে টসও করা সম্ভব হয়নি। দ্বিতীয় ম্যাচেও থাবা বসাল বৃষ্টি। ৩ বল বাকি থাকতেই শেষ করে দিতে হল ভারতের ইনিংস। সূর্যকুমার যাদবেরা ১৯.৩ ওভারে করেছে ৭ উইকেটে ১৮০ রান করার পর বৃষ্টি নামে। কমাতে হয় ম্যাচের ওভার সংখ্যা। ডাকওয়ার্থ লুইস পদ্ধতিতে দক্ষিণ আফ্রিকার সামনে জয়ের লক্ষ্য দাঁড়ায় ১৫ ওভারে ১৫২ রান। ১৩.৫ ওভারে ৫ উইকেটে ১৫৪ রান তুলে ম্যাচ জিতে নেয় দক্ষিণ আফ্রিকা।
এ দিন মেঘলা আবহাওয়ায় টস জিতে ভারতকে ব্যাট করতে পাঠান দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক এডেন মার্করাম। তাঁর সিদ্ধান্ত যে ভুল ছিল না, তার প্রমাণ যশস্বী জয়সওয়াল এবং শুভমন গিলের উইকেট। ভারতের দুই ওপেনারই সাজঘরে ফিরলেন কোনও রান না করে। যশস্বীকে আউট করলেন মার্কো জানসেন। আর শুভমন উইকেট দিলেন লিজ়াড উইলিয়ামসকে। ৬ রানে ২ উইকেট হারিয়ে শুরুতেই চাপে পড়ে যায় ভারত। সেই চাপ আরও বৃদ্ধি পায় তিন নম্বরে নামা তিলক বর্মাও দ্রুত আউট হওয়ায়। ৪টি চার এবং ১টি ছয়ের মাধ্যমে তিলক করলেন ২০ বলে ২৯ রান।
৫৫ রানে ৩ উইকেট হারানোর পরও ভারতকে লড়াই করার মতো জায়গায় পৌঁছে দিল অধিনায়ক সূর্যকুমার এবং রিঙ্কু সিংহের ব্যাট। বিশেষ করে কলকাতা নাইট রাইডার্সের ব্যাটার আরও এক বার ঠান্ডা মাথায় নিজের দক্ষতা প্রমাণ করলেন। শেষ পর্যন্ত রিঙ্কু অপরাজিত থাকেন ৩৯ বলে ৬৮ রান করে। তাঁর ব্যাট থেকে এসেছে ৯টি চার এবং ২টি ছয়। কঠিন পরিস্থিতিতে ঠান্ডা মাথায় পরিণত ইনিংস খেললেন রিঙ্কু। কলকাতা নাইট রাইডার্সের ব্যাটার নিজের পরিচিত আগ্রাসী ইনিংস না খেলে পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যাট করলেন উইকেটের এক দিক আগলে রেখে।
বিশ্বকাপে রান না পাওয়া সূর্যকুমারকেও টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে আবার চেনা ফর্মে দেখা যাচ্ছে। মঙ্গলবার তিনি করলেন ৩৬ বলে ৫৬ রান। মারলেন ৫টি চার এবং ৩টি ছয়। তাঁর আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের সময় মাটিতে বল রেখে শট খেলার চেষ্টা করেছেন রিঙ্কু। মন দিয়েছেন ইনিংস গড়ার কাজে। তবে অধিনায়ক জেরাল্ড কোয়েৎজের বলে আউট হওয়ার পর চলিয়ে খেললেন রিঙ্কুও। সূর্যকুমার এবং রিঙ্কু চতুর্থ উইকেটের জুটিতে যোগ করলেন ৭০ রান। যা চাপ কাটিয়ে ভারতকে ম্যাচে ফেরায়। রান পেলেন না তরুণ উইকেটরক্ষক-ব্যাটার জীতেশ শর্মাও (১)। শেষ দিকে রিঙ্কুকে ২২ গজে কিছুটা সঙ্গ দিলেন অভিজ্ঞ রবীন্দ্র জাডেজা। তিনি করলেন ১৪ বলে ১৯ রান। ১টি করে চার এবং ছক্কা এল তাঁর ব্যাট থেকে।
দক্ষিণ আফ্রিকার সফলতম বোলার কোয়েৎজে। খেলা বন্ধ হওয়ার ঠিক আগে তিনি পর পর দু’বলে জাডেজা এবং আরশদীপ সিংহকে আউট করেছেন। পরের ম্যাচে প্রথম বলেই উইকেট নিয়ে পারলে হ্যাটট্রিক পূর্ণ করবেন কোয়েৎজে। ৩২ রান দিয়ে ৩ উইকেট নিয়েছেন তিনি। ১৮ রানে ১ উইকেট তাবরেজ় শামসির। জানসেন ৩৯ রানে ১ উইকেট, উইলিয়ামস ৩২ রানে ১ উইকেট এবং মার্করাম ২৯ রানে ১টি উইকেট নিয়েছেন।
জবাবে শুরু থেকেই আগ্রাসী মেজাজে ব্যাট করতে শুরু করেন দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটারেরা। ওপেনার ম্যাথু ব্রিটজ়কে (১৬) দ্রুত আউট হলেও তার প্রভাব পড়েনি আয়োজকদের ইনিংসে। ওভার প্রতি ১০ রানের বেশি তাড়া করতে নেমে প্রত্যাশিত মেজাজে ব্যাট করলেন অন্য ওপেনার রেজ়া হেনড্রিকস এবং অধিনায়ক মার্করাম। তাঁরা মূলত মহম্মদ সিরাজ এবং আরশদীপকে বেছে নিয়েছিলেন আক্রমণ করার জন্য। মুকেশ কুমার এবং কুলদীপ যাদবও তেমন একটা সুবিধা করতে পারলেন না। দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটারদের আগ্রাসী মেজাজের সামনে লাইন, লেংথ ঠিক রাখতে পারলেন না ভারতীয় বোলারেরা। ফলে ব্যর্থ হল সূর্যকুমার এবং রিঙ্কুর লড়াই। ৪টি চার এবং ১টি ছয়ের সাহায্যে ১৭ বলে ৩০ রান করে মার্করাম যখন মুকেশের বলে আউট হলেন, তখন ৭.৫ ওভারে ৯৬ রান করে ফেলেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। ৮ ওভারের পর আয়োজকদের জয়ে লক্ষ্য দাঁড়ায় ওভার প্রতি ৮ রান।
আরও বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকায় দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটারদের লক্ষ্যই ছিল দ্রুত ম্যাচ শেষ করে দেওয়া। সেই মতো তাঁরা শুরু থেকেই বড় শট খেলার চেষ্টা করেছেন। যদিও মার্করামের পরেই চার নম্বরে নামার হেনরিকসকে আউট করে প্রোটিয়াদের কিছুটা চাপে ফেলে দেন কুলদীপ। হেনরিকস করেন ২৭ বলে ৪৯ রান। ১ রানের জন্য অর্ধশতরান হাতছাড়া করলেন তিনি। মারলেন ৮টি চার এবং ১টি ছয়। হেনরিক ক্লাসেনকে (৭) দ্রুত আউট করে দক্ষিণ আফ্রিকার উপর চাপ আরও বাড়িয়ে দেন সিরাজ। ১ উইকেটে ৯৬ থেকে ১০ বলের ব্যবধানে দক্ষিণ আফ্রিকার রান দাঁড়ায় ৪ উইকেটে ১০৮। বড় শট মারতে গিয়েই পর পর উইকেট হারালেন মার্করামেরা। তাতেও অবশ্য জয় পেতে বিশেষ বেগ পেতে হল না তাঁদের।
এর পর রান তোলার গতি খানিকটা কমে গেলেও দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংসের হাল ধরেন ট্রিস্টান স্টাবস এবং ডেভিড মিলার। কিন্তু জয় থেকে মাত্র ১৩ রান দূরে অতিরিক্ত আগ্রাসী হতে গিয়ে মুকেশের বলে উইকেট ছুড়ে দিলেন মিলার। তিনি ১টি চার এবং ১টি ছয়ের সাহায্যে করলেন ১২ বলে ১৭ রান। শেষ পর্যন্ত স্টাবস ১৪ রান করে এবং আন্দিলে ফেলুকওয়াও ১০ রানে অপরাজিত থাকেন। ৭ বল বাকি থাকতে ৫ উইকেটে ম্যাচ জিতে তিন ম্যাচের সিরিজ়ে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল দক্ষিণ আফ্রিকা।
ভারতের সফলতম বোলার মুকেশ ৩৪ রান দিয়ে ২ উইকেট নিলেন। ২৬ রানে ১ উইকেট কুলদীপের। ২৭ রান দিয়ে ১ উইকেট সিরাজের। তবে ভারতীয় ক্রিকেটারদের পারফরম্যান্স চিন্তায় রাখবে কোচ রাহুল দ্রাবিড়কে। সিরিজ় হার বাঁচাতে হলে বৃহস্পতিবার তৃতীয় ম্যাচ জিততেই হবে সূর্যকুমারদের।