Shahrukh Khan

রাসেল তাণ্ডব শেষে উড়ন্ত চুম্বন শাহরুখের

রাত আটটার সময় সকলের হতাশা কাটিয়ে আবির্ভাব হল তাঁর। পরনে সাদা টি-শার্ট, ধূসর রঙের জিন্স ও চোখে গগ্‌লস। ‘বি’ বক্সের কোণের আসন শেষমেশ ভর্তি হয়। হসপিটালিটি বক্সের দরজা খুলে দর্শকদের সামনে আসেন শাহরুখ খান।

Advertisement

ইন্দ্রজিৎ সেনগুপ্ত 

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ মার্চ ২০২৪ ০৮:১৯
Share:

ইডেন গার্ডেন্সে কলকাতা নাইট রাইডার্সের জয়ের পরে শাহরুখ খানের চুমু। শনিবার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।

‘বি’ বক্সের হসপিটালিটি বক্সের কোণের আসন ফাঁকা দেখে অনেকেই বিমর্ষ হয়ে পড়েছিলেন। হয়তো ভাবছিলেন, দেখতে পাবেন না তাঁদের স্বপ্নের নায়ককে। তাঁকে কাছ থেকে দেখার জন্যই ‘বি’ গ্যালারির লোয়ার টিয়ারের টিকিট কেটেছেন অনেকে। দ্রুত শেষ হয়ে গিয়েছিল সেই গ্যালারির টিকিট। ফোনে সম্পূর্ণ চার্জ দিয়ে সেই দিকেই ক্যামেরা তাক করে বসেছিলেন তাঁর ভক্তেরা। ঠিক যেমন জন্মদিনের সকালে মু্ম্বইয়ে তাঁর বাড়ি মন্নতের সামনে ভিড় দেখা যায়, ছবিটা অনেকটা সে রকমই।

Advertisement

রাত আটটার সময় সকলের হতাশা কাটিয়ে আবির্ভাব হল তাঁর। পরনে সাদা টি-শার্ট, ধূসর রঙের জিন্স ও চোখে গগ্‌লস। ‘বি’ বক্সের কোণের আসন শেষমেশ ভর্তি হয়। হসপিটালিটি বক্সের দরজা খুলে দর্শকদের সামনে আসেন শাহরুখ খান।

বলিউডের বাদশাকে স্বাগত জানানো হয় তাঁর সিনেমার জনপ্রিয় গানের মাধ্যমে। চালিয়ে দেওয়া হয় ‘ঝুমে জো পঠান’। দর্শকদের দিকে হাত নাড়িয়ে অভ্যর্থনা কুড়িয়ে নেন শাহরুখ। নাইটদের অবস্থা তখন ছিল শোচনীয়। দ্রুত তিন উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে গিয়েছিল দল। কিন্তু মাঠে তখন যেন অকাল দীপাবলি। ফোন ক্যামেরার ফ্ল্যাশলাইট জ্বালিয়ে শাহরুখকে স্বাগত জানায় ইডেন। আনন্দবাজারেই প্রকাশিত হয়েছিল, প্রথম ম্যাচে তাঁর মাঠে থাকার খবর। যা অক্ষরে অক্ষরে মিলিয়ে দেয় শনিবারের ইডেন। মাঠে ম্যাচ চলতে থাকলেও দর্শকদের নজর ছিল ‘বি’ বক্সের দিকেই।

Advertisement

নাইটদের চতুর্থ উইকেট পড়ার পরে বক্সের ভেতরে চলে যান শাহরুখ। হতাশ হয়ে যাওয়া ভক্তেরা বোঝেন, বড় রান তুলতে না পারলে তাঁদের ‘কিং’-এর মেজাজ হয়তো ঠিক হবে না। দর্শকাসন থেকে চিৎকার শুরু হয়, ‘‘রিঙ্কুকে নামাও, রাসেলকে নামাও।’’ কিন্তু রমনদীপ সিংহ ও ফিল সল্টের বিধ্বংসী ব্যাটিং পাল্টা ম্যাচে ফেরায় নাইটদের। পঞ্চম ও ষষ্ঠ উইকেট পড়ার পর থেকে চেনা মেজাজ ফিরতে থাকে কেকেআর শিবিরে। শুরু হয় রাসেল-রিঙ্কু তাণ্ডব। মায়াঙ্ক মারকন্ডে বল হাতে তুলে নিতে ফের বেরিয়ে আসেন শাহরুখ। দর্শকদের চিৎকার নিশ্চিত ভাবেই পৌঁছে গিয়েছিল রাসেলের কানে। গ্লাভসের স্ট্র্যাপ আরও শক্ত করে বেঁধে তাঁর লক্ষ্যপূরণের যাত্রায় নেমে পড়েন বিধ্বংসী ক্যারিবিয়ান অলরাউন্ডার। সেই ওভারে তিনটি ছক্কা হাঁকান রাসেল। একটি গিয়ে পড়ে কিং খানের গ্যালারির ঠিক সামনে। আসন ছেড়ে উঠে রাসেলের দিকে ‘উড়ন্ত চুম্বন’ ছুড়ে দেন শাহরুখ। বেজে ওঠে ‘‘আশিক হুঁ ম্যায়, কাতিল ভি হুঁ, সবকে দিলো মে শামিল ভি হুঁ।’’

৪৪০ ভোল্টের মতো সেই গানের বিদ্যুৎ-তরঙ্গ ছড়িয়ে পড়ে দর্শকদের মধ্যে। কল্যাণী থেকে আসা অরূপ দাস তো পুলিশের পায়ের সামনে পড়েই গেলেন নাচতে গিয়ে। উপস্থিত পুলিশকর্মী তাঁকে নিজের আসনে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দিলেও শুনতে চাইছিলেন না। কিন্তু বাধ্য হয়ে ফিরে যেতে হয়। বলছিলেন, ‘‘ম্যাচ দেখতে আসা ছুতো মাত্র। বাড়িতে মিথ্যে কথা বলে বেরিয়েছি। স্ত্রী জানে আমি অফিসের কাজে বাইরে এসেছি। কিন্তু আমি শাহরুখের বড় ভক্ত। এমন কোনও সিনেমা নেই, যা দেখিনি। আজ চোখের সামনে ঈশ্বরকে দেখার স্বপ্ন পূরণ হয়ে গেল। পুলিশ অফিসার ঝামেলা না করলে আরও কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে দেখতাম তাঁকে।’’

ইডেনের ‘ডিজে’-ও শাহরুখের সিনেমার জনপ্রিয় সব গান বাজাতে থাকেন নাইটদের ইনিংস চলাকালীন। বুঝিয়ে দেন, আইপিএল শুধুমাত্র ক্রিকেট নয়, বিনোদনের অন্যতম কেন্দ্র। পার্টির জন্য কোনও নাইট-ক্লাবের প্রয়োজন নেই। কেকেআরের ম্যাচের দিন ইডেনে আসুন, পার্টির চেয়ে একাংশও কম মনে হবে না।

শনিবার ঘণ্টা বাজিয়ে নাইটদের ম্যাচ শুরু করার কথা ছিল কেকেআর মেন্টর গৌতম গম্ভীরের। কিন্তু সিএবি কর্তাদের তিনি জানিয়ে দেন, ম্যাচের সময় ক্রিকেট ছাড়া আর কোনও দিকে মনোনিবেশ করতে চান না। এ রকমই এক জন কঠোর প্রশিক্ষকের প্রয়োজন ছিল নাইটদের। ১০ বছর ট্রফি আসে না নাইট শিবিরে। সেই পরিস্থিতি পাল্টানোর জন্য তাঁকেই তো প্রয়োজন ছিল।

গম্ভীরের নেতৃত্বেই শেষ বার ট্রফি তুলেছিল কেকেআর। এ বার মেন্টরের দায়িত্বে থেকে সেই সুদিন ফেরাতে পারেন কি না, সেটাই দেখার।

গম্ভীরের দলের একদা অন্যতম সদস্য এ দিন উপস্থিত ছিলেন মাঠে। লোকসভা নির্বাচনে বহরমপুরের তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী। তিনি ইউসুফ পাঠান। রাসেল ব্যাট করতে নামার সময় ইডেনে যেমন গর্জন শোনা যায়, কয়েক বছর আগে তিনি নামলেও তেমন গর্জন শোনা যেত।

সময় কত দ্রুত যে পাল্টে যায়। ইউসুফ অতীত। শনিবারের মায়াবী ইডেন মাতল সেই ক্যালিপসোর সুরে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement