আগমন: কলকাতায় রিচা ও (ডান দিকে) দীপ্তি। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।
ভারতীয় মহিলা ক্রিকেট দলের হয়ে এশিয়া কাপ জিতে শহরে ফিরলেন রিচা ঘোষ ও দীপ্তি শর্মা। আজ, সোমবারই উড়ে যেতে হবে বিশাখাপত্তনমে বাংলার মহিলা দলের হয়ে টি-টোয়েন্টি প্রতিযোগিতা খেলতে। মাঝে একটিমাত্র দিন হাতে পেয়েছেন ১৯ বছরের তরুণী রিচা। বাবার সঙ্গেই কাটাতে চান দিনটা। খেতে চান প্রিয় খাবার। সদ্যসমাপ্ত মেয়েদের এশিয়া কাপে এই তরুণী ক্রিকেট বিশেষজ্ঞদের অবাক করে দিয়েছিলেন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ১৩ বলে ২৬ রানের ইনিংস খেলে। মেরেছিলেন একটি চার ও তিনটি বড় ছক্কা।
অনেকেরই মনে হতে পারে, ২৬ রান আর এমন কি বড় ইনিংস? কিন্তু ভারতের বোলিংয়ের সময় রিচার এমন অবস্থা হয়েছিল যে, তিনি ব্যাট করতে নামার পরিস্থিতিতেই ছিলেন না। সিলেটের গরমে মাথা ঘুরিয়ে যায় রিচার। শুর হয় বমি। হিটস্ট্রোক নিয়ে মাঠ ছাড়তে বাধ্য হন তিনি। সকলেই ধরে নিয়েছিলেন রিচা আর নামতে পারবেন না। কিন্তু ভারতের ষষ্ঠ উইকেট পড়তেই ব্যাট করতে আসেন বাংলার তরুণী। ধারাভাষ্যকার আথার আলি খান বলছিলেন, ‘‘ও কি ব্যাট করার মতো অবস্থায় আছে?’’
প্রথম চারটি বলে একটিও রান আসেনি তাঁর ব্যাট থেকে। কিন্তু তার পর থেকে শুরু হয় তাণ্ডব। যে ম্যাচে ভারতের জেতার প্রশ্নই ছিল না, সেই ম্যাচেও শেষ ওভার পর্যন্ত চাপে ছিল পাকিস্তান। কী করে সেই ম্যাচে ব্যাট করতে ফিরেছিলেন তিনি? শনিবার রাতেই সিলেট থেকে ফোনে রিচা বলছিলেন, ‘‘ড্রেসিংরুমে ফিরতেই ওষুধ ও এনার্জি ড্রিঙ্ক দেওয়া হয় আমাকে। ঠান্ডা জলে স্নান করি কয়েক বার। ফিজিয়ো এবং দলের সকলে আমার মনোবল বাড়াতে সাহায্য করেছে। ভারতের একটার পর একটা উইকেট হারাতে দেখে আমার মধ্যেও চাপ তৈরি হচ্ছিল।” আরও বলেন, “ভাবছিলাম, এটাই আমার সুযোগ ম্যাচ পাল্টে দেওয়ার। শরীর খারাপ লাগছিল। তবুও দাঁতে দাঁত চেপে ব্যাট করতে নামি। জেতাতে না পারলেও এই ইনিংসের পরে অনেকেই প্রশংসা করেছেন। হরমনদি, স্মৃতিদি আমাকে জড়িয়ে ধরেছিল।’’
ফাইনালে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধেও মহেন্দ্র সিংহ ধোনির মতোই উপস্থিত বুদ্ধির পরিচয় দেন রিচা। উইকেটের পিছনে দাঁড়িয়ে একটি ওয়াইড নিচু হয়ে যাওয়া বল পা দিয়ে আটকে পাঁচ রান বাঁচান। সেই ভিডিয়ো গণমাধ্যমে ছড়িয়ে গিয়েছে। রিচা প্রাক্তন ভারত অধিনায়কের ভক্ত। হরমনপ্রীতদের দলের উইকেটকিপার বলছিলেন, ‘‘ধোনিকে দেখেই আমার কিপার হওয়ার স্বপ্ন দেখা শুরু হয়েছিল। এ বার ব্যাটার হিসেবেও ধোনির মতো দলের ভরসা হয়ে উঠতে চাই। ফিনিশারের দায়িত্ব পেয়েছি। দলের সকলে যাতে আমার উপরে ভরসা করে, সেটাই চাই। ওরা যেন ভাবে রিচা শেষের দিকে আছে। ম্যাচ জিততে অসুবিধে হবে না।’’ তিনি আরও বলেছেন, ‘‘স্মৃতিদি, হরমনদিরা এখন থেকেই আমার উপরে ভরসা করতে শুরু করেছে। গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে এমন জায়গায় নামার নির্দেশ পাচ্ছি যেখানে একটু ভাল খেললেই ম্যাচ জিতিয়ে ফেরা সম্ভব। সামনে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। সেখানে ম্যাচ জেতানো ইনিংস খেলতে চাই।’’
এশিয়া সেরা হওয়ার পরে ঝুলন গোস্বামীর বার্তায় অভিভূত তিনি। বলছিলেন, ‘‘ঝুলুদি টেক্সট করেছে এশিয়া কাপ জেতার পরে। দেশের হয়ে এই প্রথম কোনও বড় প্রতিযোগিতা জেতার অভিজ্ঞতা হল। এ বার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নিজেকে উজাড় করে দেব। বিশ্বকাপ জিতে ফিরতে চাই শহরে।’’