অর্শদীপ সিংহ। ছবি: আইপিএল
আইপিএলের সাফল্য দরজা খুলে দিয়েছে ভারতীয় দলের। পঞ্জাব সুপার কিংসের জোরে বোলার অর্শদীপ সিংহ ডাক পেয়েছেন ভারতের টি-টোয়েন্টি দলে। তাঁর এই সাফল্যের নেপথ্যে রয়েছে কঠোর পরিশ্রম এবং অধ্যবসায়।
রবিবার আইপিএলে সানরাইজার্স হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে শেষ ম্যাচ খেলতে নামার আগেই সুখবর পান অর্শদীপ। সঙ্গে সঙ্গে তা ফোন করে জানান মা বলজিত কউরকে জানান বাঁহাতি জোরে বোলার।
আইপিএলের অর্শদীপ নজর কেড়েছেন বল হাতে। উইকেট নেওয়ার পাশাপাশি রান দিয়েছেন বেশ কম। বিশেষ করে ডেথ ওভারে তাঁর আঁটোসাঁটো বোলিং বিশেষ প্রশংসিত হয়েছে। ছেলে ভারতীয় দলে সুযোগ পেতে পারে, এমন আশা করেছিলেন বলজিতও। রবিবার সন্ধ্যায় যখন ছেলের ফোন পান, তখন বাড়িতে পুজো করছিলেন। ছেলের সাফল্য দারুণ খুশি তিনি।
পঞ্জাবের তরুণ জোরে বোলারের মা বলেছেন, ‘‘অর্শদীপ সব ম্যাচের আগেই আমাকে ফোন করে। আশীর্বাদ চায়। রবিবার ভিডিয়ো কল করেছিল। তখন পুজো করছিলাম। আমাকে বলে, ‘মা দারুণ খবর আছে। আমি ভারতীয় দলে সুযোগ পেয়েছি।’ ওর কথা শুনে চোখের জল ধরে রাখতে পারিনি। তার পরেই সতীর্থরা ওকে ঘিরে দলের বাসের মধ্যেই ভাঙড়া নাচতে শুরু করে। তখন আমি উপলব্ধি করতে পারলাম, অর্শদীপের জীবনে এটা কত বড় মুহূর্ত। ওকে কখনও ক্লান্ত হতে দেখি না।’’
তিনি মজা করে বলেছেন, ‘‘অনুশীলনের পর আমাকে মেসেজ করে। এ বার বাড়ি এলে ভারতীয় দলের হয়ে খেলতে যাওয়ার আগে ওকে আমিও একটা বড় মেসেজ দেব। ওর পথটা খুব সহজ ছিল না। ভারতীয় দলের টুপি পাওয়াই আমাদের জন্য সব থেকে আনন্দের মুহূর্ত হবে।’’
অর্শদীপকে ছোট থেকে ক্রিকেটে উৎসাহ দিয়েছেন তাঁর বাবা দর্শন সিংহ। তিনি পেশায় নিরাপত্তা আধিকারিক। বাড়ির কাছের মাঠে বন্ধুদের সঙ্গে ক্রিকেট খেলার সময় দর্শন দেখেন, অর্শদীপ ছোট ছোট ইনসুইং করাচ্ছে। তা দেখেই তিনি ছেলেকে ভর্তি করে দেন চণ্ডীগড়ে যশবন্ত রাইয়ের প্রশিক্ষণ শিবিরে। ছোট অর্শদীপ তখন থেকেই খারার থেকে চণ্ডীগড় সাইকেলে যাতায়াত করতেন ক্রিকেট শেখার জন্য।
অর্শদীপের ছোট বেলার কোচ যশবন্ত বলেছেন, ‘‘যখন অর্শদীপ প্রথম আমার অ্যাকাডেমিতে আসে, তখনই ওর সুইং করানোর ক্ষমতা দেখে চমকে যাই। তখন ওর উচ্চতাও ভাল ছিল। অনেক উঁচু থেকে বল ছাড়তে পারত। এখনও মনে আছে, নিজে থেকেই ওভারের ছ’টা বল ছয় রকম করার চেষ্টা করত। অবশ্যই নিখুঁত বল করতে পারত না তখন। কিন্তু ওকে দেখে মনে হয়েছিল ক্রিকেট নিয়ে এগোতে পারে।’’
সাইকেল খুব প্রিয় অর্শদীপের। দিনের কোনও না কোনও সময় তাঁকে সাইকেল চালাতেই হয়। ক্রিকেট শিখতে গিয়েই তাঁর সাইকেল প্রেম। ২০১৮ সালে অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ জয়ী ভারতীয় দলের সদস্য অর্শদীপ। প্রিয় ছাত্র সম্পর্কে যশবন্ত বলেছেন, ‘‘একদিনের কথা মনে আছে। তখন গরমকাল। সকাল সাড়ে পাঁচটার অনুশীলনে আসতে অর্শদীপের একটু দেরি হয়েছিল। কারণ জানতে চাইলে বলে, ‘স্যর যে কোনও শাস্তি দিয়ে দিন।’ অনুশীলন শেষে লক্ষ্য করি পার্কিংয়ের জায়গায় ওর সাইকেল নেই। জিজ্ঞেস করে জানতে পারি, ওর সাইকেলটা ভেঙে গিয়েছে। খারার থেকে এতটা পথ হেঁটে এসেছে অনুশীলনের জন্য। এটা চাইলে আমাকে শুরুতেই বলতে পারত। কিন্তু ও কোনও অজুহাত দিতে চায়নি। ক্রিকেটের প্রতি ওর ভালবাসা দেখে সে দিন মনে হয়েছিল, এক দিন দেশের হয়ে খেলবে অর্শদীপ।’’
এখনও নিয়মিত যশবন্তের কাছে অনুশীলন করেন অর্শদীপ। অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপের পর যশবন্ত ছাত্রের বোলিংয়ে সামান্য কিছু পরিবর্তন করেছেন। যোগ করেছেন বৈচিত্র্য। প্রতিদিন ৩০ থেকে ৪০টা ইয়র্কার অনুশীলন করেন উইকেটে সামনে জুতো রেখে। বিভিন্ন লেংথে বল করারও অনুশীলন করেন প্রতিদিন। গতির হেরফের করানোও ছাত্রকে শিখিয়েছেন যশবন্ত। আইপিএল শুরুর আগে দিয়েছেন টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে সফল হওয়ার পাঠ।
অনুশীলনে যাওয়ার সুবিধার জন্য অর্শদীপকে ১৮ বছর বয়সে একটা স্কুটার কিনে দেন তাঁর বাবা। তবু সুযোগ পেলেই এখনও সাইকেলে চালিয়েই অ্যাকাডেমিতে যান অর্শদীপ। দর্শন বলেছেন, ‘‘এক বার যেটা অভ্যাস করে নেয়, সেটা আর বদলায় না সহজে। সকালে ওঠা, সাইকেল চালানো সবকিছুই। দেশের হয়ে সাফল্য পেলে, তবেই আমরা উৎসব করব। তার আগে নয়। সেটা অর্শদীপকেও বলে দিয়েছি।’’