ICC ODI World Cup 2023

গর্বিত তেজার মা, গ্যালারিতে সম্প্রীতির সুর

ভারতের বিরুদ্ধে নেদারল্যান্ডসের ম্যাচে কাদের সমর্থন করবেন? পদ্মা দেবী নির্দ্বিধায় বলে দেন, ‘‘আমার ছেলেকেই সমর্থন করব। তবে সে ম্যাচে যারা-ই জিতবে, ভাল লাগবে। যাকে বলে উইন-উইন পরিস্থিতি।’’

Advertisement

ইন্দ্রজিৎ সেনগুপ্ত 

হায়দরাবাদ শেষ আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০২৩ ০৯:১৪
Share:

তৃপ্তি: পোস্টার হাতে গ্যালারিতে তেজার মা। শুক্রবার। —নিজস্ব চিত্র।

কাজের সূত্রে ছেলেকে নিয়ে নিউ জ়িল্যান্ড উড়ে যেতে হয়েছিল পদ্মা দেবীকে। ছেলে কিছুতেই হায়দরাবাদ ছাড়তে চাইছিল না। প্রিয় ক্রিকেটার বিরাট কোহলি। তাঁর মতোই ভারতীয় দলের প্রতিনিধিত্ব করার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু মা-কে ছাড়া থাকবে কী করে? স্কুলে নিয়ে যাওয়া, নিয়ে আসা থেকে প্রিয় বিরিয়ানি-ই বা কে রান্না করে দেবেন? অগত্যা, মায়ের হাত ধরে নিউ জ়িল্যান্ড উড়ে যেতে হয় তেজা নিদামানুরুকে।

Advertisement

ওয়েলিংটনেই ক্রিকেটে হাতেখড়ি তেজার। নিউ জ়িল্যান্ডের অনূর্ধ্ব-১৯ দলের ফাইনাল ট্রায়াল থেকে বাদ পড়ার পরে মন ভেঙে যায় তেজার। ধীরে ধীরে তখন বড় হচ্ছেন। কিন্তু ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন ছাড়তে পারছিলেন না। হঠাৎ নেদারল্যান্ডসের এক তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায় চাকরির সুযোগ পান। দ্বিতীয় বার না ভেবে সেই দেশে উড়ে যান তেজা। চাকরির পাশাপাশি ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্নপূরণের লক্ষ্যে একটি করে ধাপ এগোতে থাকেন। বিশ্বকাপ যোগ্যতা অর্জন পর্বে নেদারল্যান্ডসের জাতীয় দলে সুযোগ পান। ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের মতো বড় দলের বিরুদ্ধে শতরান করে ঘোষণা করে দেন, বিশ্বকাপ খেলতে ভারতে ফিরছেন।

যে শহর থেকে ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন দেখা শুরু হয়েছিল, সেখানেই বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ খেলতে নামলেন তেজা, নেদারল্যান্ডসের জার্সিতে। শুক্রবার পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সেই ম্যাচ গ্যালারিতে বসে উপভোগ করলেন তাঁর মা, কাকিমা ও কাকা। সঙ্গে ছিল পোস্টার। যেখানে লেখা, ‘‘নেদারল্যান্ডসের হয়ে বিশ্বকাপ খেলার জন্য তোমাকে অভিনন্দন তেজা। তুমি হায়দরাবাদের গর্ব।’’

Advertisement

ডাচদের জার্সির রংয়ের সঙ্গে মিল রেখে কমলা শাড়ি পরে এসেছেন পদ্মা দেবী। বৃহস্পতিবারই কিনেছেন সেই শাড়ি। বলছিলেন, ‘‘ছেলের জন্যই পরেছি এই শাড়ি। ঘরের মাঠে ছেলে বিশ্বকাপ খেলছে। এর চেয়ে গর্বের বিষয় আর কী-ই বা হতে পারে!’’

ভারতের বিরুদ্ধে নেদারল্যান্ডসের ম্যাচে কাদের সমর্থন করবেন? পদ্মা দেবী নির্দ্বিধায় বলে দেন, ‘‘আমার ছেলেকেই সমর্থন করব। তবে সে ম্যাচে যারা-ই জিতবে, ভাল লাগবে। যাকে বলে উইন-উইন পরিস্থিতি।’’

ছেলের স্বপ্ন, বিরাটের সঙ্গে এক বার খেলার। যা পূরণ হতে চলেছে চলতি বিশ্বকাপেই। কিন্তু পাকিস্তানের বিরুদ্ধে এ দিন মাত্র পাঁচ রানে আউট হয়ে যাওয়ায় মন খারাপ হয়ে যায় মায়ের। বলছিলেন, ‘‘এত দিনের কঠোর পরিশ্রম বৃথা হতে দেয়নি ও। নিজের লক্ষ্যে স্থির ছিল। আজ হয়তো রান পায়নি কিন্তু আমি নিশ্চিত, ভবিষ্যতে ও নেদারল্যান্ডসকে গর্বিত করবে। সময় তো এখনই শেষ হয়ে যাচ্ছে না। ওর যাত্রা এখান
থেকেই শুরু।’’

সংহতি: হাতে তৈরি করা পাকিস্তান পতাকা নিয়ে আলিশা। —নিজস্ব চিত্র।

ভিন্নতার স্বাদ ছিল বিপক্ষ সমর্থকদের মধ্যেও। অনেকেই ভারতের জার্সি পরে পাক ক্রিকেটারদের জন্য গলা ফাটাচ্ছিলেন। কিন্তু চমক দেন এক ভারতীয় পরিবার। বাবর আজ়মের সব চেয়ে বড় ভক্তও বলা যেতে পারে তাঁদের। মধ্যপ্রদেশের ভোপাল থেকে মা-এর সঙ্গে পাকিস্তানের ম্যাচ দেখতে এসেছেন দুই বোন এবং এক ভাই। বড় বোন আলিশার জন্যই হায়দরাবাদ উড়ে আসা। পাকিস্তানের পতাকা ভারতে পাওয়া যাচ্ছে না শুনে বাজার থেকে সবুজ ও সাদা রংয়ের কাপড় এনে বাড়িতেই সেলাই করে
তৈরি করে নেন তাঁরা। সেই পতাকা নিয়ে মাঠে হাজির আলিশা। অষ্টম শ্রেণির সেই ছাত্রীর কথায়, ‘‘আমি এত বায়না করেছি যে, মা আর বারণ করতে পারেনি। বাজার থেকে সবুজ ও সাদা কাপড় কিনে আনতে বলি। মাত্র তিন ঘণ্টার মধ্যে তৈরি করে দিই পাক পতাকা। বাইরে কোথাও ওড়াইনি। মাঠে আসার পর থেকে দেখছি অনেকেই এই পতাকা নিয়ে ছবি তুলছে। আমার মতো ভক্ত তা হলে অনেকেই আছেন।’’

পাকিস্তানের সঙ্গে কোনও সম্পর্কই নেই তার। তবুও কী করে সেই দেশের প্রতি এতটা টান? অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী এখনও দু’দেশের রাজনৈতিক মতবিরোধের বিষয়ে হয়তো অবগত নয়। মনের মধ্যে নেই কোনও হিংসা। সরল ভাবে বলে দিল, ‘‘শত্রুতার কোনও কারণ তো দেখি না। বন্ধুত্ব বাড়াতে ক্ষতি কী?’’ সে যোগ করে, ‘‘পাকিস্তানে বিরাট কোহলির ভক্তও তো আছে। তেমনই ভারতীয় হিসেবে আমি বাবরের ভক্ত। এতে লুকোনোর কিছু দেখি না।’’

হায়দরাবাদ সত্যি সম্প্রীতির ছবি দেখায়। হাত বাড়িয়ে দেয় বন্ধুত্বেরও।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement