চেন্নাইয়ে বাংলাদেশের পর শতরানের পর রবিচন্দ্রন অশ্বিন। ছবি: সমাজমাধ্যম।
রোহিত শর্মা ৬। শুভমন গিল ০। বিরাট কোহলি ৬।
১০ ওভারের মধ্যে ভারতের তিন ব্যাটার সাজঘরে। ভারত ঘরের মাঠে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে টেস্ট খেলছে না কি অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে তাদের মাটিতে তা স্কোর দেখলে বোঝা মুশকিল। ৩৪ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে তখন কোচ গৌতমকে আরও গম্ভীর করে দিয়েছেন ভারতীয় ব্যাটারেরা। আর রোহিতদের হাসি উড়িয়ে দেওয়ার নেপথ্যে হাসান মাহমুদ। যদিও দিনের শেষে গম্ভীরের মুখে হাসি ফিরে এল। তার নেপথ্যে রবিচন্দ্রন অশ্বিন এবং রবীন্দ্র জাডেজা। প্রথম দিনের শেষে ভারত ৩৩৯/৬।
ম্যাচ শুরুর তিন আগে থেকেই চেন্নাইয়ের পিচ নিয়ে আগ্রহ তৈরি হয়েছিল। স্পিন নির্ভর চেন্নাইয়ে লাল মাটির পিচে খেলা হওয়ার কথা শোনা যাচ্ছিল। যে ধরনের পিচ সাধারণত পেসারদের সাহায্য করে। বৃহস্পতিবার দেখা গেল লাল মাটির পিচেই খেলবে ভারত-বাংলাদেশ। তাই টস জিতে বল করার সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশের অধিনায়ক নাজমুল হাসান শান্তর। তাঁর সেই সিদ্ধান্তকে সঠিক প্রমাণ করেন পেসার হাসান।
ভারতের ব্যাটারদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ নির্দিষ্ট পরিকল্পনা করে নেমেছিল। হাসানের সবচেয়ে বড় শক্তি একই লাইন ও লেংথে দীর্ঘ স্পেল করা। তাঁর বলে গতি রয়েছে। প্রত্যেক ব্যাটারের বিরুদ্ধে যে তিনি পরিকল্পনা করে নেমেছেন তা আউট হওয়ার ধরনে বোঝা গিয়েছে। রোহিত ও বিরাট অফ স্টাম্পের বাইরের বলে খোঁচা মারতে গিয়ে আউট হয়েছেন। শুভমন আবার লেগ স্টাম্পের বল ফাইন লেগে খেলচে গিয়ে আউট হয়ে ফিরেছেন। তাঁদের দুর্বলতা জেনেই বল করতে নেমেছিলেন বাংলাদেশের পেসারেরা। সেটাই স্পষ্ট হয়ে যায় বিরাটদের আউট হওয়ার ধরনে। ধারাভাষ্যকার তামিম ইকবাল বলেন, “বিরাটকে বার বার এই ভাবে আউট হতে দেখা গিয়েছে। এই ভাবে আউট হলে দলের ভিডিয়ো বিশ্লেষককে জাদুকর বলতে হয়।” আসলে অফ স্টাম্পের বাইরের বলে বিরাটের যে দুর্বলতা রয়েছে, তা ভিডিয়ো বিশ্লেষকদের মাধ্যমে এখন তিন টেস্ট খেলা হাসানের মতো বোলারেরাও জেনে গিয়েছেন।
রোহিতদের হাসি উড়িয়ে দেওয়ার নেপথ্যে হাসান মাহমুদ। ছবি: পিটিআই।
তিন উইকেট পড়ার পরে যশস্বী জয়সওয়াল (৫৬) ও ঋষভ পন্থ (৩৯) জুটি গড়ার চেষ্টা করেন। মধ্যাহ্নভোজ পর্যন্ত তাঁরা কোনও উইকেট পড়তে দেননি। কিন্তু দ্বিতীয় সেশনের শুরুতেই আবার উইকেট নেন হাসান। অফ স্টাম্পের বাইরের বলে পন্থকে আউট করেন তিনি। ক্রিজ়ে জমে যাওয়ার পর এই ভাবে আউট হওয়া মেনে নেওয়া কঠিন। ২০২২ সালে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে শেষ বার টেস্ট খেলেছিলেন পন্থ। তার পরেই গাড়ি দুর্ঘটনায় আহত হয়ে ক্রিকেটের বাইরে চলে গিয়েছিলেন। টেস্টে পন্থের প্রত্যাবর্তন হল আবার সেই বাংলাদেশের বিরুদ্ধেই। কিন্তু শুরুটা ভাল করেও বড় রান করতে পারলেন না তিনি। যা তাঁর মতো অভিজ্ঞ ক্রিকেটারের থেকে মেনে নেওয়া কঠিন।
রোহিত ভরসা রেখেছিলেন লোকেশ রাহুলের উপর। বলেছিলেন, “রাহুল কেমন ক্রিকেটার সেটা সবাই জানে। আমরা রাহুলকে সব ম্যাচে খেলাতে চাই। সেটা ওকে বলা হয়েছে। আমরা চাই ওর মধ্যে থেকে সেরাটা বার করে আনতে।” সেই সেরাটা বার করে আনতে পারলেন না। রাহুল আউট হলেন স্পিনার মেহেদি হাসান মিরাজের বিরুদ্ধে। বাকি ব্যাটারদের সমস্যায় ফেলছিলেন পেসারেরা। কিন্তু এক জন স্পিনারের বিরুদ্ধে রাহুলের আউট হওয়া সমর্থকদের খুশি করতে পারছে না।
ব্যাটিং ব্যর্থতার দিনে ভারতকে ম্যাচে রাখলেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন। টেস্টে ষষ্ঠ শতরান করে ফেললেন তিনি। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে স্ট্রাইক রেট। ১১২ বলে ১০২ রানের অপরাজিত অশ্বিন। তাঁর স্ট্রাইক রেট ৯১.০৭। অশ্বিন যখন নেমেছিলেন, তখন ভারত ১৪৪ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ধুঁকছে। ২৫০ রান উঠবে কি না সেই চিন্তা ভারতীয় সমর্থকদের মাথায়। সেখানে অশ্বিন নেমেই পাল্টা মারের খেলা শুরু করলেন। বাংলাদেশের বোলারদের উপর চাপ তৈরি করতে শুরু করেন অশ্বিন। তাতেই ম্যাচ ধীরে ধীরে ভারতের দিকে ঘুরতে শুরু করে। দিনের শেষে ৩৩৯ রান তুলে ভাল জায়গায় ভারত। দিনের শুরুতে উইকেট তুলে হাসানেরা যে চাপ তৈরি করেছিলেন, তা শেষ পর্যন্ত ধরে রাখা সম্ভব হয়নি বাংলাদেশের পক্ষে।
প্রশংসা করতে হবে জাডেজারও। বাংলাদেশের হাসানেরা ডানহাতি ব্যাটারদের বিরুদ্ধে পর পর উইকেট নিচ্ছিলেন। সেই সময় রুখে দাঁড়ান যশস্বী জয়সওয়াল এবং পন্থ। দুই বাঁহাতি মিলে ভারতকে ভরসা দিতে শুরু করেছিলেন। মধ্যাহ্নভোজের আগে পর্যন্ত তাঁরাই সামলেছিলেন। পন্থ আউট হওয়ার পর যশস্বী কিছুটা লড়াই করেন। তিনি ফেরার পর হাল ধরেন জাডেজা। দিনের শেষে ১১৭ বলে ৮৬ রান করে অপরাজিত তিনি। বল হাতে অশ্বিন-জাডেজা জুটি যেমন ম্যাচ জেতান, এখন ব্যাট হাতেও সেটাই করছেন। তাঁরা না থাকলে সমস্যায় পড়ত ভারত।
দ্বিতীয় দিনে বাংলাদেশ শুরু করবে নতুন বলে। সেই বল সামলে অশ্বিন এবং জাডেজা কত বড় রান করতে পারেন সেই দিকেই নজর সমর্থকদের। প্রথম দিনে ৮০ ওভার করেছে বাংলাদেশ। হাসান নিয়েছেন ৪ উইকেট। একটি করে নিয়েছেন নাহিদ রানা এবং মিরাজ। নজর কেড়েছেন পেসার রানা। তাঁর গতি সমস্যায় ফেলছিল ভারতকে। যদিও অশ্বিন, জাডেজাকে বাংলাদেশের কোনও বোলারের সামনেই সে ভাবে সমস্যায় পড়তে দেখা যায়নি।