ব্যর্থ হল রিচা ঘোষের লড়াই। —ফাইল চিত্র
তীরে এসে তরী ডুবল ভারতের। ওয়াংখেড়েতে দাপট বাংলার দুই কন্যার। প্রথমে বল হাতে ৫ উইকেট নিলেন দীপ্তি শর্মা। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে এক দিনের ক্রিকেটে এই প্রথম ভারতের কোনও মহিলা ক্রিকেটার ৫ উইকেট নিলেন। রান তাড়া করতে নেমে ৯৬ রান করলেন রিচা ঘোষ। বাংলার দুই কন্যার দাপটের পরেও ম্যাচ জিততে পারল না ভারত। শেষ দিকে ব্যাটারদের ব্যর্থতায় ৩ রানে দ্বিতীয় ম্যাচ হেরে সিরিজ় হারতে হল হরমনপ্রীত কৌরদের।
প্রথম ম্যাচ ব্যাটারদের দাপটে জিতেছিল অস্ট্রেলিয়া। হয়তো সেই কারণেই দ্বিতীয় ম্যাচে টস জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক অ্যালিসা হিলি। শুরুটা ভাল করলেও ১৩ রানের মাথায় আউট হয়ে যান হিলি। অস্ট্রেলিয়াকে প্রথম ধাক্কা দেন পূজা বস্ত্রকর। দ্বিতীয় উইকেটে ফোবে লিচফিল্ড ও এলিস পেরির মধ্যে জুটি হয়। ভাল ব্যাট করছিলেন তাঁরা। ভারতের কোনও বোলারই তাঁদের সমস্যায় ফেলতে পারছিলেন না। দু’জনেই অর্ধশতরান করেন। ঠিক তখনই নিজের শেষ তাস খেলেন হরমনপ্রীত। দীপ্তির হাতে বল তুলে দেন তিনি। ভারতের হয়ে ছ’নম্বরে বল করতে এসে প্রথমেই পেরিকে ৫০ রানের মাথায় আউট করেন তিনি। তার পরেই বেথ মুনির বড় উইকেট নেন তিনি। ৬৩ রানের মাথায় লিচফিল্ডকে আউট করেন শ্রেয়াঙ্কা পাতিল।
আগের ম্যাচে অস্ট্রেলিয়াকে জিতেছিলেন তাহিলা ম্যাকগ্রা। ২৪ রানের মাথায় তাঁকে সাজঘরে ফেরত পাঠান দীপ্তি। তাঁর চার নম্বর শিকার জর্জিয়া ওয়্যারহ্যাম। অ্যানাবেল সাদারল্যান্ডকে আউট করে রেকর্ড গড়েন দীপ্তি। ওয়্যারহ্যাম ২২ ও সাদারল্যান্ড ২৩ রান করেন। তাঁরা থাকলে আরও বড় রান করত অস্ট্রেলিয়া। দীপ্তির দাপটে সেটা করতে পারেনি তারা। শেষ পর্যন্ত ৫০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে ২৫৮ রান করে অস্ট্রেলিয়া।
প্রথম ভারতীয় মহিলা ক্রিকেটার হিসাবে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে এক দিনের ক্রিকেটে পাঁচ উইকেট নিয়েছেন দীপ্তি। এর আগে ভারতের মহিলা দলের হয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে সব থেকে ভাল বল করেছিলেন নুশিন আল খাদির। ২০০৬ সালে অ্যাডিলেডে ১০ ওভারে ৪১ রান দিয়ে ৪ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। মুম্বইয়েই ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে ১০ ওভারে ৩৮ রান দিয়ে ৫ উইকেট নিয়েছেন দীপ্তি।
ভারতের পুরুষ ও মহিলা ক্রিকেটার মিলিয়ে এক দিনের ক্রিকেটে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ৫ উইকেটে নেওয়া ক্রিকেটারদের তালিতায় আট নম্বরে রয়েছেন দীপ্তি। তাঁর আগে এই কীর্তি রয়েছে রবি শাস্ত্রী, সচিন তেন্ডুলকর, কপিল দেব, মুরলী কার্তিক, অজিত আগরকর, যুজবেন্দ্র চহাল, ও মহম্মদ শামির।
রান তাড়া করতে নেমে তাড়াতাড়ি আউট হয়ে যান যস্তিকা ভাটিয়া। অন্য ওপেনার স্মৃতি মান্ধানার সঙ্গে দ্বিতীয় উইকেটে জুটি বাঁধেন রিচা। ভালই খেলছিলেন দু’জনে। ৩৪ রান করে আউট হন মান্ধানা। তার পরে ভারতের ইনিংস টেনে নিয়ে যান রিচা। তাঁকে সঙ্গ দেন জেমাইমা রদ্রিগেজ। ৪৪ রানের মাথায় লিচফিল্ডের দুরন্ত ক্যাচে জেমাইমা আউট না হলে হয়তো ছবিটা অন্য রকম হত। হরমনপ্রীত ব্যাট হাতে আবার ব্যর্থ। ৫ রান করে আউট হন ভারত অধিনায়ক।
রিচা এক দিকে টিকেছিলেন। অর্ধশতরান করার পরেই তাঁর ক্র্যাম্প ধরে। ফলে বেশি দৌড়তে পারছিলেন না। সেই সময় বড় শট মারার দিকে নজর দেন তিনি। যত ক্ষণ রিচা ক্রিজ়ে ছিলেন চাপ বাড়ছিল অস্ট্রেলিয়ার উপর। দেখে মনে হচ্ছিল, ভারতের জার্সিতে প্রথম শতরান এই ম্যাচেই হবে তাঁর। কিন্তু ৯৬ রানের মাথায় আউট হন রিচা। সেটাই ভারতের কাল হল।
দীপ্তি শেষ পর্যন্ত টিকে থাকলেও বড় শট মারতে পারছিলেন না। ফলে বল ও রানের ব্যবধান বাড়ছিল। শেষ ওভারে দরকার ছিল ১৬ রান। সেই ওভারে ওঠে ১২ রান। ৩ রানে হারে ভারত। ২৪ রানে অপরাজিত থেকে যান দীপ্তি। কিন্তু দলকে জেতাতে পারেননি তিনি। আরও এক বার চাপের মুখে হারতে হয় ভারতকে।