মনোজ তিওয়ারি। —ফাইল চিত্র।
গত মরসুমে রানার্স হওয়ার পরে বাংলার অধিনায়ক মনোজ তিওয়ারি জানিয়েছিলেন, আর একটা মরসুম খেলবেন তিনি। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার চেষ্টা করবেন। মনোজের সেই স্বপ্ন শেষ হয়ে গেল। চলতি মরসুমে রঞ্জি ট্রফি থেকে বিদায় হল বাংলার। মুম্বইয়ের পরে ইনিংসে হারের পর এ বার কেরলের কাছেও ১০৯ রানে হেরে গেল তারা। অনেক চেষ্টা করেও দলের হার আটকাতে পারলেন না শাহবাজ় আহমেদ। একাই লড়াই করলেন তিনি। কিন্তু তত ক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে।
এই হারের ফলে গ্রুপ পর্বে ৬ ম্যাচে বাংলার পয়েন্ট ১২। শেষ ম্যাচ জিতলেও সর্বোচ্চ ১৯ পয়েন্ট হবে তাদের। তার পরেও গ্রুপের প্রথম দুইয়ে শেষ করতে পারবে না বাংলা। কারণ, মুম্বই ও অন্ধ্রপ্রদেশের পয়েন্ট এখনই ১৯-এর বেশি। তাই বলে দেওয়া যায়, বাংলার কোয়ার্টার ফাইনালে যাওয়ার স্বপ্ন শেষ হয়ে গেল।
কেরলের বিরুদ্ধে প্রথম ইনিংসে ব্যাটিং ব্যর্থতার খেসারত দিতে হল বাংলাকে। দ্বিতীয় ইনিংসে জয়ের জন্য ৪৪৯ রান করতে হত বাংলাকে। তৃতীয় দিন শেষ হওয়ার আগেই দুই উইকেট হারায় বাংলা। চতুর্থ দিনের খেলা শুরু করেছিলেন অভিমন্যু ও অনুষ্টুপ। চলতি মরসুমে বাংলার সব থেকে ধারাবাহিক ব্যাটারের উপর ভরসা ছিল দলের। কিন্তু এই ইনিংসে পারলেন না তিনি। সেই জলজ সাক্সেনার বলে ১৬ রানে আউট হলেন। প্রথম ইনিংসের মতো দ্বিতীয় ইনিংসেও ভাল খেলছিলেন তিনি। ভরসা দিচ্ছিলেন। সঙ্গে ছিলেন মনোজ। ম্যাচ জেতা নির্ভর করছিল এই দুই ব্যাটারের উপরে। মধ্যাহ্নভোজের বিরতির আগে ছন্দপতন হল অভিমন্যুর। সেই জলজের বলেই ৬৫ রানে আউট হলেন অভিমন্যু।
অভিষেক পোড়েল ব্যাট করতে নেমে আক্রমণাত্মক শট খেলা শুরু করেন। সেটাই তাঁর স্বাভাবিক খেলা। মাত্র ১৮ বলে ২৮ রান করলেও টিকে থাকতে পারলেন না অভিষেক। শ্রেয়স গোপালের বলে আউট হয়ে গেলেন। মধ্যাহ্নভোজের বিরতিতে বাংলার রান ছিল ৫ উইকেটে ২১৭। মনোজ ৩২ ও শাহবাজ় আহমেদ ২১ রানে ব্যাট করছিলেন। তখনও জিততে ২৩২ রান দরকার ছিল বাংলার। বিরতির পরেই মনোজ ৩৫ রানে আউট হয়ে যান। তখন মনে হচ্ছিল আর বেশি ক্ষণ টিকে থাকতে পারবে না বাংলা। কিন্তু শাহবাজ় সাবলীল ব্যাট করলেন। তাঁকে সঙ্গ দিলেন করণ। দু’জনে মিলে বেশ দ্রুত রান তোলেন। পাল্টা আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে কিছুটা খেই হারায় কেরলের বোলিং।
শাহবাজ় ও করণের মধ্যে ৮৩ রানের জুটি হয়। দেখে মনে হচ্ছিল, চা বিরতি পর্যন্ত তাঁরাই টিকে থাকবেন। কিন্তু বিরতির ঠিক আগেই ৪০ রানের মাথায় আউট হন করণ। শাহবাজ় একাই লড়াই করেন। কিন্তু তার পর আর সঙ্গী পাননি তিনি। অপর প্রান্তে একের পর এক উইকেট পড়তে থাকে। শেষ পর্যন্ত রানে শেষ হয় বাংলার ইনিংস। শাহবাজ় ৮০ রান করে আউট হন। কেরল ১০৯ রানে ম্যাচ জেতে।
প্রথম ইনিংসে কেরল ৩৬৩ রান করেছিল। শতরান করেছিলেন সচিন বেবি (১২৪) এবং অক্ষয় চন্দ্রন (১০৬)। কেরলের পিচে পেসারেরা খুব একটা সাহায্য পাচ্ছিলেন না। বাংলার দুই পেসার আকাশ দীপ এবং সূরজ সিন্ধু জয়সওয়াল একটি করে উইকেট নেন। চোট সারিয়ে দলে ফেরা শাহবাজ় আহমেদ নেন ৪ উইকেট। অঙ্কিত মিশ্র নেন ৩ উইকেট। একটি উইকেট করণ লালের।
জবাবে ব্যাট করতে নেমে বাংলার ইনিংস শেষ হয়ে যায় ১৮০ রানে। অভিমন্যু ঈশ্বরণ ছাড়া আর কোনও ব্যাটার রান করতে পারেননি। ৭২ রান করেন তিনি। ৯টি উইকেট নেন জলজ। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে কেরল ৬৪.২ ওভারে ২৬৫ রান তোলে। কেরলের এই ইনিংসে বাংলার দুই জোরে বোলার একটি বলও করেননি। সদ্য ভারতীয় দলে ডাক পেয়েছেন আকাশ দীপ। ফর্মে রয়েছেন সূরজও। কিন্তু পিচ থেকে স্পিনারেরা সাহায্য পাচ্ছিলেন বলে অধিনায়ক মনোজ টানা বল করিয়ে গেলেন শাহবাজ়, অঙ্কিত এবং করণকে দিয়ে। মাঝে নিজে করলেন ১ ওভার এবং রণজ্যোত সিংহ খারিয়াকে দিয়ে ২ ওভার করালেন। তাতেও লাভ হয়নি। বাংলার সামনে ৪৪৯ রানের লক্ষ্য রাখে কেরল। সেই রান করতে পারল না বাংলা।