ইংল্যান্ডের কোচ হিসাবে সফল ম্যাকালাম। ফাইল ছবি।
কলকাতা বিমানবন্দর থেকে হিথরো বিমানবন্দর পৌঁছনোর বিমানের টিকিটটা আজীবন নিজের সংগ্রহে রেখে দিতে পারেন ব্রেন্ডন ম্যাকালাম। যে কোনও সফরেই সেই টিকিট রাখতে পারেন সঙ্গে।
সাফল্যের ঠিকানা লেখা সেই টিকিটই বোধ হয় মাত্র এক মাসেই বদলে দিল কোচ ম্যাকালামের জীবনপঞ্জী। আইপিএলের ব্যর্থ, সমালোচিত কোচ থেকে টেস্ট ক্রিকেটের সফল হেডস্যর। ম্যাকালামের দেওয়া স্বাধীনতা কলকাতা নাইট রাইডার্সের ক্রিকেটাররা উপভোগ করেছিলেন। কিন্তু, কাজে লাগাতে পারেননি। বেন স্টোকসরাও সেই একই স্বাধীনতা আরও বেশি উপভোগ করছেন। কারণ আগেই তা কাজে লাগিয়েছেন তাঁরা।
কোচ ম্যাকালাম কতটা ভাল? অনেকেই বলতে পারেন, যতটা তাঁর সাফল্য। ক্রীড়াবিশ্বে দলের সাফল্য বা ব্যর্থতার মাপকাঠিতেই কোচদের মাপা হয়। যে কোনও খেলাতেই একই ছবি। অথচ ইসিবি কর্তারা সেই নিক্তিতে মাপেননি ম্যাকালামকে। তাঁরা আস্থা রেখেছেন বলেই বদলে গিয়েছে ইংল্যান্ড। একের পর এক টেস্ট সিরিজ হারা ইংল্যান্ডই শেষ চার টেস্টে জয়ী। কোচ ম্যাকালামের জমানায় এখনও পর্যন্ত ড্র বা হার নেই।
সব সময়ই নতুন চ্যালেঞ্জ নিতে ভালবাসা ম্যাকালাম প্রথম বার কোনও জাতীয় দলকে কোচিং করাচ্ছেন। এর আগে তাঁর কোচিং করানোর অভিজ্ঞতা বলতে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ এবং ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগ। ক্রিকেটজীবনে ডাকাবুকো ব্যাটার হিসাবে পরিচিত ম্যাকালাম তাঁর সেই মানসিকতা ঢুকিয়ে দিয়েছেন ইংরেজদের মধ্যেও। স্টোকসরা তাই প্রথম ইনিংসে ১৩২ রানে পিছিয়ে থেকেও হাল ছাড়েন না। বরং আরও শক্ত হয় তাঁদের চোয়াল। নিউজিল্যান্ডকে টেস্ট সিরিজে ৩-০ ব্যবধানে হারিয়ে স্টোকস সগর্বে বলতে পারেন, বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের হারালাম।
কলকাতার কোচ ম্যাকালামের সাফল্য নেই। কিন্তু কলকাতা থেকে সোজা লন্ডনে পৌঁছতেই ধরা দিচ্ছে সাফল্য। স্থান, কাল বদলালেও পাত্র একই। সেই ম্যাকালাম, যিনি ক্রিকেটারদের উপর কিছু চাপিয়ে দেন না। নিজের মতো খেলার স্বাধীনতা দেন। সেই ম্যাকালাম, যিনি আজীবন আগ্রাসী ক্রিকেটে বিশ্বাস করেছেন। আস্থা রেখেছেন। আগ্রাসন দিয়েই বিপক্ষকে দুমড়ে দিতে চেয়েছেন। ক্রিকেটার হিসাবে, অধিনায়ক হিসাবে এবং কোচ হিসাবেও।
ম্যাকালাম নাইটদের হাতে ধরে নতুন কিছু শেখাননি। ইংরেজদেরও শেখাচ্ছেন না। কারণ এই পর্যায়ের ক্রিকেটে বিশেষ কিছু শেখানোর থাকে না। দলের পরিকল্পনা, রণকৌশল তৈরি, ক্রিকেটারদের সাহস দেওয়া, পাশে থাকাই আসল। খুব বেশি হলে কারোর খেলায় সামান্য কিছু বদল করতে হয়। বিপক্ষের শক্তি-দুর্বলতা জরিপ করতে হয়। যেমন তাঁর নিখুঁত পরিকল্পনাই ভাল শুরুর পরেও শ্রেয়স আয়ারকে বড় রান পেতে দেয়নি। কলকাতার কোচের অজানা নয় কলকাতার অধিনায়কের দুর্বলতা। এক মাসের কিছু আগেও তো একসঙ্গে বসেই সব কৌশল ঠিক করতেন। সেই শ্রেয়স নামতেই সাজঘর থেকে ম্যাকালামের ইঙ্গিত। স্টোকসরা শ্রেয়সকে দেখিয়ে দিলেন সাজঘরের পথ।
আসল পথপ্রদর্শক তো ম্যাকালামই। তাঁর দেখানো পথ কারা দেখবেন, কারা দেখবেন না— তা হয়তো নিয়ন্ত্রণ করতে চান না। কিন্ত তাঁর দেখানো পথে হাঁটলে ম্যাচের ফলাফল নিয়ন্ত্রণ করা যায়। পিছিয়ে থেকেও এগিয়ে যাওয়া যায়। পর পর চার টেস্টে যা করে দেখিয়ে দিলেন স্টোকসরা। কোচ ম্যাকালামের সাফল্যের উড়ান ডানা মেলতে শুরু করেছে। যে বিমান হয়তো আগামী দিনে শুধুই নামবে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরগুলিতে। তাতে কি থাকবে কলকাতার নাম!