মহম্মদ শামির সঙ্গে তাঁর ভাই মহম্মদ কইফ। —ফাইল চিত্র।
মহম্মদ কইফ নামটা শুনলেই মনে পড়ে যায় ২০০২ সালের ন্যাটওয়েস্ট ট্রফির ফাইনালের কথা। তাঁর সেই ৭৫ বলে ৮৭ রানের ইনিংস জয় এনে দিয়েছিল ভারতকে। আর লর্ডসের বারান্দায় সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় জামা উড়িয়েছিলেন। কিন্তু বাংলার ক্রিকেটেও এক জন মহম্মদ কইফ আছেন। তিনি মহম্মদ শামির ভাই। সেই কইফের ব্যাটে, বলেই উত্তরপ্রদেশের বিরুদ্ধে জয়ের আশায় বাংলা।
দাদা শামির হাত ধরেই কলকাতা এসেছিলেন কইফ। ক্লাব ক্রিকেটে খেলতে শুরু করেন। জায়গা করে নেন বাংলার বয়সভিত্তিক দলে। অনূর্ধ্ব-২৩ দলে তিনি খেলেছিলেন সৌরাশিস লাহিড়ীর প্রশিক্ষণে। সৌরাশিস এখন বাংলা দলেরও সহকারী কোচ। তিনি বললেন, “অনেক বছর আগেই কলকাতায় চলে এসেছিল কইফ। ডালহৌসিতে খেলত ছোটবেলায়। পরে টাউন ক্লাবে যায়। শামির সঙ্গে আমি খেলেছি। ও আমার খুবই ভাল বন্ধু। শামি বলত যে ওর ভাইও ক্রিকেট খেলছে। তবে আমার সঙ্গে ওর দেখা হয় অনূর্ধ্ব-২৩ দলে। ক্লাব ক্রিকেটে ভাল খেলেই জায়গা করে নিয়েছিল সেই দলে। ধারাবাহিক ভাবে ভাল খেলে এখন বাংলার সিনিয়র দলে জায়গা করে নিল।”
গত ম্যাচেই অন্ধ্রের বিরুদ্ধে রঞ্জি অভিষেক হয়েছিল কইফের। সেই ম্যাচে ৩ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। দ্বিতীয় ম্যাচে উত্তরপ্রদেশের বিরুদ্ধে প্রথম ইনিংসে নেন ৪ উইকেট। দ্বিতীয় ইনিংসে ইতিমধ্যেই ৩ উইকেট তাঁর দখলে। সেই সঙ্গে ব্যাট হাতে গুরুত্বপূর্ণ ৪৫ রানের ইনিংস খেলেন। বাংলার এক সময় ৮ উইকেট পড়ে গিয়েছিল। সেই সময় সূরজ সিন্ধু জয়সওয়াল এবং ঈশান পোড়েলকে নিয়ে ৭৮ রান যোগ করেন কইফ। যা দিনের শেষে বাংলাকে ১২৮ রানের লিড এনে দেয়। সৌরাশিস বললেন, “কইফ মিডিয়াম পেসার। কিন্তু ওর ব্যাটের হাতটাও ভাল। বুঝতে পারে কোন সময় কোন ধরনের শট খেলা উচিত। সেটাই ওকে বাকিদের থেকে আলাদা করে দেয়।”
রঞ্জিতে এই প্রথম খেললেও কইফ বাংলার হয়ে সাদা বলের ক্রিকেট আগেই খেলেছেন। ৯ ম্যাচে ১২টি উইকেট আছে তাঁর। ব্যাট হাতে যদিও খুব বেশি সুযোগ পাননি। তবে ধারাবাহিক ভাবে জায়গা করে নিতে পারেননি মুকেশ কুমার, আকাশ দীপ, ঈশান পোড়েলদের দাপটে। ভারতীয় দলের হয়ে খেলতে গিয়েছেন মুকেশ। আকাশ খেলছেন ভারত এ দলের হয়ে। এর মাঝেই কইফ নিজের জায়গা করে নিয়েছেন। বাংলার পেস আক্রমণের ভরসা হয়ে উঠতে চাইবেন তিনি।
বাংলার হয়ে খেলেই ভারতীয় দলে জায়গা করে নেন শামি। বিশ্বের অন্যতম সেরা বোলার তিনি। তাঁর ভাই বাংলার হয়ে রঞ্জি অভিষেক করায় উচ্ছ্বসিত দাদাও। কইফের রঞ্জি অভিষেকের পর শামি সমাজমাধ্যমে লিখেছিলেন, “দীর্ঘ পরিশ্রমের পর অবশেষে বাংলার রঞ্জি টুপি পেয়েছ। চিয়ার্স। এটা দারুণ কৃতিত্ব। তোমায় অভিনন্দন। আশা করি তোমার জন্য দুর্দান্ত ভবিষ্যত অপেক্ষা করছে। সব সময় নিজের ১০০ শতাংশ উজাড় করে দেবে। কঠোর পরিশ্রম চালিয়ে যাও। ভাল ফল কর।”
শামি জানেন রঞ্জিতে ভাল খেললেই ভারতীয় দলে জায়গা পাওয়া যায়। তিনি সে ভাবেই জায়গা করে নিয়েছিলেন এক সময়। তাঁর এক সময়ের সতীর্থ লক্ষ্মীরতন শুক্ল, সৌরাশিসদের প্রশিক্ষণে এখন বেড়ে উঠছেন কইফ। আগামী দিনে শামির ভাই নয়, মহম্মদ কইফ নামেই পরিচিত হতে চাইবেন তিনি।