খরা কাটিয়ে রানে ফিরেছেন বিরাট কোহলি। শুধু তাই নয়, পর পর শতরান আসছে তাঁর ব্যাট থেকে। ছবি: বিসিসিআই
প্রায় তিন বছর ব্যাটে খরা চলেছে বিরাট কোহলির। একের পর এক ম্যাচে ব্যর্থ হয়েছেন। কিন্তু হাল ছাড়েননি। অবশেষে ছন্দে ফিরেছেন তিনি। গত চারটি এক দিনের ম্যাচে তিনটি শতরান করেছেন। এই আশ্বাস কিন্তু আগেই দিয়েছিলেন তিনি। খারাপ সময়েও নিজের ক্ষমতায় বিশ্বাস রেখেছিলেন। সেই কথা রাখলেন কোহলি।
তিরুঅন্তপুরমে ১১০ বলে ১৬৬ রানের ইনিংস খেলেছেন কোহলি। তার পরেই সমাজমাধ্যমে তাঁর একটি পুরনো ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়েছে। খারাপ ফর্মে থাকাকালীন রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরের হয়ে একটি ভিডিয়ো বার্তায় কোহলি বলেছিলেন, ‘‘এই খারাপ সময়টা কেটে গেলেই নিজের ধারাবাহিকতা দেখাব। আমি জানি, এক বার ছন্দ পেলে পর পর শতরান করব। বছরের পর বছর ধরে নিজেকে তৈরি করেছি। কী ভাবে পর পর শতরান করতে হয় সেটা জানি। এক বার ছন্দে ফিরতে চাই। তার পরে সেই পুরনো বিরাটকে দেখতে পাবেন।’’
কথা রেখেছেন কোহলি। গত বছর শেষ করেছিলেন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে শতরান করে। নতুন বছরের প্রথম ম্যাচে শতরান করেছিলেন। দ্বিতীয় ম্যাচে ইডেন গার্ডেন্সে রান না পেলেও তৃতীয় ম্যাচে আবার শতরান করেছেন তিনি। সেই সঙ্গে সচিন তেন্ডুলকরকেও ছাপিয়ে গিয়েছেন ভারতের প্রাক্তন অধিনায়ক। ঘরের মাঠে এক দিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সচিনের শতরানের সংখ্যা ২০টি। ঘরের মাঠে ১৬৪টি এক দিনের ম্যাচ খেলেছিলেন সচিন। তিরুঅনন্তপুরমে সচিনকে ছাপিয়ে গিয়েছেন কোহলি। দেশের মাটিতে ২১টি শতরান হয়েছে তাঁর। সচিনের থেকে অনেক কম ১০৪টি ম্যাচ খেলেছেন তিনি।
অন্য আরও একটি পরিসংখ্যানে সচিনকে ছাপিয়ে গিয়েছেন কোহলি। একটি নির্দিষ্ট প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে সব থেকে বেশি শতরানের নিরিখে যৌথ ভাবে শীর্ষে ছিলেন তাঁরা। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ৯টি শতরান রয়েছে সচিনের। গুয়াহাটিতে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে নিজের নবম শতরান করেছিলেন কোহলি। তিরুঅনন্তপুরমে ১০ নম্বর শতরান এসেছে। অর্থাৎ, একটি নির্দিষ্ট প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে সব থেকে বেশি শতরানের নজির গড়েছেন কোহলি।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আরও একটি নজির গড়েছেন কোহলি। এক দিনের ক্রিকেটে সর্বাধিক রান করা ক্রিকেটারদের তালিকায় প্রথম পাঁচে ঢুকে পড়েছেন তিনি। ২৬৯ ম্যাচে তাঁর রান ১২৭৫৪। শ্রীলঙ্কার প্রাক্তন ক্রিকেটার মাহেলা জয়বর্ধনেকে ছাপিয়ে গিয়েছেন তিনি। তাঁর রান ১২৬৫০। এই তালিকায় শীর্ষে রয়েছেন সচিন। তাঁর রান ১৮৪২৬। এক দিনের ক্রিকেটে সচিনের ৪৯টি শতরান রয়েছে। ৪৬টি শতরান হয়েছে কোহলির। কিন্তু অনেক কম ইনিংসে ৪৬টি শতরান করেছেন তিনি। সচিন ৪৬টি শতরান করতে নিয়েছিলেন ৪৩১টি ইনিংস। কোহলি নিয়েছেন মাত্র ২৬৮টি ইনিংস।
ম্যাচের সেরার পুরস্কার নিতে গিয়ে কোহলির মুখে এসেছে মাইলফলকের কথা। বলেছেন, “বিরতি নিয়ে ফেরার পর থেকেই খেলতে ভাল লাগছে। কোনও মাইলফলক ছোঁয়ার ইচ্ছা আমার নেই। শুধুমাত্র নিজের ব্যাটিং উপভোগ করছি। এমন ভাবে খেলার চেষ্টা করছি, যাতে অনেক শান্ত থাকতে পারি। আজও ব্যাট করতে নেমে প্রচণ্ড উপভোগ করেছি। মানসিক ভাবে এখন খুব ভাল জায়গায় রয়েছি। এটাই চালিয়ে যেতে চাই।” সিরিজের সেরাও হয়েছেন কোহলি। সেই পুরস্কার নেওয়ার সময় সঞ্চালক মুরলী কার্তিক কোহলিকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘‘এ ধরনের পুরস্কার আগে ক’বার পেয়েছেন?’’ কোহলির সটান উত্তর, “আমার কোনও ধারণা নেই। আসলে যে মানসিকতা নিয়ে আমি খেলতে নামি, এটা তারই ফসল। আমি সব সময় দলকে জেতাতে চাই, যত ক্ষণ সম্ভব ব্যাট করে যেতে চাই। সেটা যদি আপনি করতে পারেন, তা হলে অবশ্যই পার্থক্য গড়তে পারবেন। মানসিকতাই আসল। আপনি কী ভাবে খেলছেন, সেটাই দিনের শেষে কাজে লাগে।”