পরাস্ত: প্রথম ইনিংসের (বাঁ দিকে) পুনরাবৃত্তি দ্বিতীয় ইনিংসেও। ছবি— টুইটার।
টানা ৬০ ইনিংসে কোনও সেঞ্চুরি নেই। শেষ বার বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ২০১৯-এর নভেম্বরে ইডেনে সেঞ্চুরি করেছিলেন বিরাট কোহলি। তার পর থেকে দু’বছর কেটে গেল। তার ব্যাটে সেঞ্চুরির দেখা নেই। বিদেশের মাটিতে টানা ১০ ইনিংসে বাইরের বল তাড়া করতে গিয়ে খোঁচা দিয়ে আউট হয়েছেন বিরাট। বুধবার সেঞ্চুরিয়নে লাঞ্চের পরের বলেই মার্কো জানসেনের শিকার কোহলি। ফের সেই বাইরের বল খোঁচা মেরে। তাঁর আউটের ভঙ্গিতে ক্ষুব্ধ কিংবদন্তি সুনীল গাওস্কর থেকে ভারতের প্রাক্তন ব্যাটিং কোচ সঞ্জয় বাঙ্গার।
২০১৮ সালের দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে কোহলিদের নেট বোলার হিসেবে বল করতে এসেছিলেন জানসেন। সেখানেও কোহলিকে আউট করেছিলেন তরুণ বাঁ-হাতি পেসার। সেই সময় বিরাটের সঙ্গে একটি ছবিও তুলেছিলেন জানসেন। তাঁর টেস্ট জীবনের দ্বিতীয় উইকেট এ বার বিরাট।
বারবার একই ভঙ্গিতে বিরাটকে আউট হতে দেখে এ বার বিরক্তই গাওস্কর। ধারাভাষ্য দেওয়ার সময়ে বলে ফেলেন, ‘‘ইচ্ছে করেই অফস্টাম্পের বাইরে ক্রমাগত ওকে বল করা হচ্ছিল। এই বলটিও বাইরের দিকে যাচ্ছিল। অনেকটা প্রথম ইনিংসের মতোই।’’ যোগ করেন, ‘‘লাঞ্চের পরে প্রথম বলেই বিরাট কিন্তু খুব খারাপ শট খেলল। টেস্ট ক্রিকেটে উইকেটে থিতু হওয়ার জন্য প্রত্যেক ব্যাটারই নিজেকে সময় দেয়। বিরতির পরে সহজে পা নড়াচড়া করে না। এমনকি, জলপানের বিরতির পরেও নতুন করে শুরু করতে হয়। বিরাটের মতো অভিজ্ঞ ব্যাটার নিশ্চয়ই এটা জানে।’’ গাওস্কর মানছেন, ইনিংসের সমাপ্তি ঘোষণা করার জন্য হয়তো দ্রুত রান করার উপায় খুঁজছিলেন বিরাট। তা হলেও আউটের ভঙ্গি এমন হবে কেন? বলে দিলেন, ‘‘ইনিংসের সমাপ্তি ঘোষণার পরিকল্পনা থাকলে দ্রুত রান করতে গিয়ে বড় ভুল হয়ে যেতে পারে। যদি কোনও দল ভাবে দ্রুত ডিক্লেয়ার করব, তারাই অলআউট হয়ে যায়। বিরাটেরও দ্রুত রান করার তাড়া ছিল হয়তো। তাই আবারও একই ভুল করল।’’ টিভির পর্দায় ভেসে ওঠে ভারতীয় অধিনায়কের দুই ইনিংসের আউটের ভঙ্গি। যা দেখে গাওস্কর বলে ওঠেন, ‘‘দেখাই যাচ্ছে, কতটা বাইরে দিয়ে বলটা যাচ্ছে। অনায়াসে ছেড়ে দিতে পারত। লাঞ্চের পরে প্রথম বল, এ ভাবে তাড়া করা উচিত হয়নি।’’
কেন একই রকম ভাবে আউট হচ্ছেন বিরাট? অফস্টাম্পের বাইরে কী ভাবে বল ছাড়তে হয়, যাঁর থেকে ভাল কেউ জানত না, সেই সানির ব্যাখ্যা, ‘‘নীচের হাতের প্রাধান্য থাকে বিরাটের ব্যাটিং ভঙ্গিতে। তাই বাইরে বল দেখলেই ওর ব্যাট সেটা তাড়া করতে চলে যায়।’’
ভারতের প্রাক্তন ব্যাটিং কোচ সঞ্জয় বাঙ্গার অনেক সময় কাটিয়েছেন বিরাটের সঙ্গে। তাঁর মতে, ‘‘নিজের শট বাছাই নিয়ে নিজের উপরই নিশ্চয়ই রাগ হবে বিরাটের। লাঞ্চ বিরতিতে হয়তো ওর মনঃসংযোগ নষ্ট হয়েছে। না হলে এতটা বাইরের বল কেন খেলতে যাবে ও?’’ বাঙ্গারের আরও ব্যাখ্যা, ‘‘যে কোনও দলের কাছে বিরাটকে আউট করার এখন একটাই পরিকল্পনা। অফস্টাম্পের বাইরে বল করে যাও। শেষ কয়েকটি সিরিজ়ে একই ভঙ্গিতে আউট হয়েছে ও। একটিও বল কিন্তু পঞ্চম স্টাম্প লাইনে ছিল না। ও ষষ্ঠ ও অষ্টম স্টাম্পের বল তাড়া করছে। অবিলম্বে এই প্রবণতা বন্ধ করতে হবে।’’
তবে কোহলির এ ভাবে বাইরের বল তাড়া করে আউট হওয়ার ঘটনা নিয়ে খুব উদ্বিগ্ন নন বিক্রম রাঠৌর। বুধবার সাংবাদিক সম্মেলনে এসে তিনি বলেছেন, ‘‘এই শটগুলোই কিন্তু একটা সময় ওকে অনেক রান এনে দিয়েছে। তবে বিরাটকে সেই শটই খেলতে হবে যেটা ওর কাছে শক্তিশালী হিসেবে বিবেচিত হবে। একইরকম ভাবে কোন শটে দুর্বল, সেটাও মাথায় রাখতে হবে। আমি মনে করি ওর শট নেওয়ার এই ধারা বজায় রাখতে হবে। তবে একই সঙ্গে ভাল বলও নির্বাচন করতে হবে।’’
২০০৪ সালে সচিন তেন্ডুলকরও একই ধরনের সমস্যায় পড়েছিলেন। কিন্ত সেই সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসতে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে সিডনি টেস্টে একটিও কভার ড্রাইভ না মেরে সচিন ২৪১ রান করেছিলেন। ভারতীয় দলের ব্যাটিং কোচ বলেছেন, ‘‘আপনি যদি নির্দিষ্ট একটি শট না খেলেন, তা হলে কিন্তু কোনও ভাবেই রান করতে পারবেন না।’’ রাঠৌর আরও যোগ করেছেন, ‘‘অনেকেরই মনে হচ্ছে ওই পরিস্থিতিতে এমন শট নেওয়া আদৌ ঠিক ছিল কি না! আমরা যদি নিজেদের খেলার পরিকল্পনা আরও একটু শক্তপোক্ত করতে পারি, তা হলে সেটা ভাল বলেই বিবেচিত হয়। আবারও বলছি, কোহলি ওই শটটা খুব ভালই খেলে। সেটাই চালিয়ে যাওয়া উচিত। তবে ওকে আরও একটু সতর্ক হয়ে ঠিক বল নির্বাচন করতে হবে।’’