চার বছর পর আবার মুখোমুখি ভারতের প্রাক্তন এবং বর্তমান দুই ক্রিকেটার। ছবি: বিসিসিআই
বছর চারেক আগের কথা। ইংল্যান্ডে ২০১৯-এর বিশ্বকাপ চলছে তখন। আচমকাই একটি টুইট করে বসলেন ধারাভাষ্যকার সঞ্জয় মঞ্জরেকর। রবীন্দ্র জাডেজার খেলা সম্পর্কে বর্ণনা করতে গিয়ে লিখলেন, ‘টুকরো-টাকরা’ ক্রিকেটার। অর্থাৎ, যিনি ব্যাট, বল, ফিল্ডিং — সবই অল্প অল্প করতে পারেন। সেই বিশ্বকাপেই অর্ধশতরান পর বিশেষ উচ্ছ্বাস করে মঞ্জরেকরকে জবাব দিয়েছিলেন জাডেজা। মাঝের সময়টায় অনেক কিছু ঘটে গিয়েছে। চার বছর পর আবার মুখোমুখি ভারতের প্রাক্তন এবং বর্তমান দুই ক্রিকেটার। এ বার ম্যাচের সেরা জাডেজার সাক্ষাৎকার নিতে গিয়ে প্রশংসায় ভরিয়ে দিলেন সে দিনের সমালোচক মঞ্জরেকর।
২০১৯-এর বিশ্বকাপে প্রতি ম্যাচে খেললেও সে ভাবে সাফল্য পাচ্ছিলেন না জাডেজা। তখনই মঞ্জরেকর টুইট করেছিলেন, “৫০ ওভারের ক্রিকেটে এখন জাডেজা যে রকম খেলছে, সে ধরনের টুকরো-টাকরা ক্রিকেটার আমার পছন্দ নয়। টেস্ট ম্যাচে ও বোলার হিসাবে খেলে। কিন্তু ৫০ ওভারের ক্রিকেটে আমি একজন ব্যাটারকে চাই, যে স্পিনও করাতে পারে।” মঞ্জরেকরের সেই মন্তব্যের পর উত্তাল হয়ে ওঠে ক্রিকেটদুনিয়া। চারদিক থেকে সমালোচনা ভেসে আসতে থাকে তাঁর উদ্দেশে। খোদ জাডেজা নিজে জবাব দেন, “তুমি যতগুলো ম্যাচ খেলেছ, আমি এখনই তার দ্বিগুণ ম্যাচ খেলেছি এবং এখনও খেলে চলেছি। মানুষ যা অর্জন করেছে তার জন্য সমীহ করতে শেখো। অনেক শুনেছি তোমার মুখের এ সব বুলি।” মঞ্জরেকর তবু থামেননি। সমালোচনার পরেই নিজের আগের টুইটের ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, “টুকরো-টাকরা বলতে আমি বোঝাতে চেয়েছি, যে বিশেষজ্ঞ নয়। যারা ইংরেজি বোঝে না, তাদের জন্যে ব্যাখ্যা দিলাম।”
তবে এই ঘটনার পরবর্তী সময়কাল খুব একটা সুখের হয়নি। পরের বছরই বিসিসিআইয়ের ধারাভাষ্যকারদের প্যানেল থেকে বাদ পড়েন মঞ্জরেকর। তখন তিনি বলেছিলেন, “ওদের হয়তো আমাকে পছন্দ নয়।” এর পরে যা-ই বলেছেন, তার জন্যেই সমালোচিত হয়েছেন মঞ্জরেকর। এমনকী, প্রশংসাসূচক টুইটেও তাঁকে ব্যঙ্গ করে ভরিয়ে দিচ্ছিলেন ক্রিকেটপ্রেমীরা।
ধারাভাষ্যকার হিসাবে মঞ্জরেকরের প্রত্যাবর্তনের পরে ব্যাপারটা পাল্টাতে থাকে। ফিরে এসে মঞ্জরেকর অনেক সাবধানী ছিলেন। বেছে বেছে শব্দচয়ন করতেন। এখনও সেই জিনিস চলছে। ধীরে ধীরে ব্যাপারটা কিছুটা হলেও থিতিয়ে গিয়েছে। চার বছর আগের সেই ঘটনার পর শনিবার কিন্তু তাঁদের প্রথম সাক্ষাৎ নয়। গত বছর এশিয়া কাপেও এক মঞ্চে দেখা গিয়েছিল দু’জনকে।
এশিয়া কাপে পাকিস্তানকে হারানোর পর জাডেজার সাক্ষাৎকার নিতে যাচ্ছিলেন মঞ্জরেকর। শুরুতে কিছুটা ইতস্তত করছিলেন তিনি। মঞ্জরেকর বলেন, ‘‘আমার সঙ্গে জাডেজা রয়েছে। প্রথমেই ওকে জিজ্ঞাসা করতে চাই, আমার সঙ্গে কথা বলতে কোনও সমস্যা নেই তো?’’ জবাবে জাড্ডু বলেন, ‘‘না, না, আমার কোনও সমস্যা নেই।’’ তার পরে জাডেজার সাক্ষাৎকার শুরু করেন ভারতের প্রাক্তন ক্রিকেটার।
শনিবার নাগপুরে দু’জনকে আবার একই মঞ্চে দেখা গেল। ম্যাচে সাত উইকেট এবং অর্ধশতরানের কারণে ম্যাচের সেরা হয়েছেন জাডেজাই। তাঁর সাক্ষাৎকার নিতে গিয়ে প্রশংসায় ভরিয়ে দেন মুম্বইয়ের প্রাক্তন ক্রিকেটার। বলেন, “ম্যাচে সাত উইকেট এবং ব্যাট হাতে গুরুত্বপূর্ণ ৭০ রানের ইনিংস। ম্যাচের সেরা রবীন্দ্র জাডেজা। দারুণ খেলেছ। কেমন লাগছে?” জাডেজার উত্তর, “অসাধারণ লাগছে। পাঁচ মাস পরে ক্রিকেটে ফিরে পাঁচ উইকেট নেওয়া, ম্যাচে সেরা হওয়া, খুব ভাল অনুভূতি। জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমির সবাইকে ধন্যবাদ।”
মঞ্জরেকরের পরের প্রশ্ন, “অনেকেই পিচের ক্ষতস্থান নিয়ে কথা বলছিল। কিন্তু তুমি বেশির ভাগ উইকেট ভাল জায়গায় বল ফেলে পেয়েছ। সেটা নিয়ে কী বলবে?” জাডেজার উত্তর, “এক একটা বল এক এক রকম আচরণ করছিল। অস্ট্রেলীয়রা সুইপ করছিল। অপেক্ষা করছিলাম কখন ওরা ভুল করবে আর আমি উইকেট পাব।”