সচিনের ১৯ বছর আগের ইনিংস মনে করিয়ে দিলেন কোহলি। — ফাইল চিত্র
দেখে কে বলবে ৪০ মাস পরে টেস্টে শতরান পেয়েছেন। ১৩৯তম ওভারে নেথান লায়নের বলটা ফরোয়ার্ড স্কোয়্যারে ঠেলে দিয়ে এক রান নিলেন। তার পরেই হেলমেট খুলে এবং ব্যাট তুলে সাজঘরের দিকে তাকিয়ে সীমিত উচ্ছ্বাস প্রকাশ। মুষ্টিবদ্ধ হাত, লাফিয়ে ওঠার, বক্সারদের মতো কাল্পনিক আপার-কাট, কোনও কিছুই বিরাট কোহলির আচরণের মধ্যে দেখা যায়নি। শতরানের কিছু ক্ষণ পরে জার্সির ভেতর থেকে চেন টেনে বের করে চুমু খেলেন, ঠিক যেমনটা দেখা গিয়েছিল গত বছর এশিয়া কাপের সময়। রবিবার কোহলির ইনিংসে মনে করিয়ে দিল ১৯ বছর আগের একটি ইনিংসকে। সেই ইনিংস ছিল কোনও এক সচিন তেন্ডুলকরের। সেটাও অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে, তবে বিপক্ষের ঘরের মাঠ সিডনিতে। ১৯ বছরের ব্যবধানে দুই শতরানের মধ্যে কত মিল!
গত ৪০ মাসে টেস্টে কিছুতেই রান ছিল না কোহলির ব্যাটে। আউট হওয়ার ধরন দেখে নিজেই অবাক হয়ে যাচ্ছিলেন। গড় নেমে গিয়েছিল ২৫-এ। অধ্যবসায়, অনুশীলনে কোনও খামতি ছিল না। তা সত্ত্বেও রান আসছিল না। সেই রান এল দীর্ঘ পরিশ্রম এবং সময়ের পর। এমন শতরান, যা ছুঁয়ে দিল হৃদয়। যেমনটা ছিল সচিনের ইনিংসেও।
২০০৪-এর সেই সফরে বার বার অফ স্টাম্পের বাইরের বলে খোঁচা দিয়ে আউট হয়ে যাচ্ছিলেন সচিন। তাঁর বুকে ভয় ধরিয়ে দিয়েছিলেন ব্রেট লি, গ্লেন ম্যাকগ্রা, জেসন গিলেসপি। সিডনি টেস্টে সচিন সব অজি পেসারকে সামলে অপরাজিত ২৪১ রানের ইনিংস খেলেছিলেন। গোটা ইনিংসে এক বারও কভার ড্রাইভ মারেননি। অফ স্টাম্পের বাইরে পাতা ফাঁদে পা দেননি। রবিবার কোহলির রান করা দেখে সেই ২০০৪ মনে পড়তে বাধ্য।
কোহলিও অফ স্টাম্পের বাইরে বল খেলতে চাননি। খুব কম কভার ড্রাইভ খেলেছেন। তা-ও একেবারে নিশ্চিত হওয়ার পরে। না হলে মূলত স্কোয়্যার লেগ এবং ডিপ মিড উইকেট অঞ্চল দিয়েই কোহলি যাবতীয় শট মেরেছেন। একটি তথ্য দিলে ব্যাপারটি বোঝা যাবে। কোহলি নিজের ইনিংসের পঞ্চম বাউন্ডারি মারেন ৮৯তম বলে। ষষ্ঠ বাউন্ডারি এসেছে ২৫১তম বলে। অর্থাৎ মাঝে ছিল ১৬২টি ডেলিভারি (২৭ ওভার)। একটি গোটা সেশনে কোহলির ব্যাট থেকে কোনও বাউন্ডারি পাওয়া যায়নি।
৬০ থেকে ১০০-এ পৌঁছনোর মাঝে কোহলি স্রেফ ভরসা রেখেছিলেন খুচরো রানের উপরে। কোহলির টেস্টজীবনে শ্লথ শতরানের তালিকায় এটি অন্যতম, যা এসেছে ২৪১ বলে। অফ সাইডের বলে কোহলি একদম খেলেননি, এটা বলা ভুল। তবে বেশির ভাগ বলই ছিল শরীরের কাছাকাছি, যা অপেক্ষাকৃত নিরাপদ। মিচেল স্টার্ক, ক্যামেরন গ্রিন হাজার চেষ্টা করলেও তাঁদের পাতা ফাঁদে ধরা দেননি কোহলি। প্রথম কভার ড্রাইভ দেখা যায় কোহলি ১৪৫-এ থাকাকালীন। গ্রিনের হাফভলি বলে চার মারেন একস্ট্রা কভার অঞ্চল দিয়ে।
অতীতে মোতেরা স্টেডিয়াম সাক্ষী থেকেছে গাওস্করের ১০ হাজার টেস্ট রানে। কপিল দেবের ৪৩২তম টেস্ট উইকেটের। দু’টিই ছিল তখনকার সময়ে বিশ্বরেকর্ড। রবিবার কোহলি কোনও বিশ্বরেকর্ড গড়েননি ঠিকই। তবে যে ভাবে খেললেন, তা বিশ্বরেকর্ডের থেকে কম নয়।